সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চিকিৎসকদের সাক্ষাৎ ঈশ্বরের বরপুত্র বলে মনে করেন বহু মানুষ। মরণাপন্ন মানুষকে জীবন ফিরিয়ে দেন তাঁরা। মানুষের জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার চেয়ে মহৎ কাজ আর কীই বা হতে পারে? ১ জুলাই দিনটি ‘ডক্টরস ডে’ হিসেবে পালন করা হয় ভারতে। এই দিনটি এই দেশের এক মহৎ চিকিৎসকের জন্মদিন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়। চিকিৎসক হিসেবেও তিনি ছিলেন প্রবাদপ্রতিম। তাই তাঁর জন্মদিনকে স্মরণ করেই এই দিনটিকে চিকিৎসকদের উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়েছে।
১৮৮২ সালের ১লা জুলাই পটনায় জন্মগ্রহণ করেন ড. বিধানচন্দ্র রায় (Bidhan Chandra Roy)। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এলএমএস এবং এমডি ডিগ্রি লাভের পর উচ্চশিক্ষার জন্য বিলেতে পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানে তাঁর শিক্ষাগ্রহণের পথ খুব একটা সহজ ছিল না। লন্ডনের বার্থোলোমিউ’স হাসপাতালে পড়তে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু প্রথমেই সেখানে ভরতি হতে পারেননি। তবু হাল ছাড়েননি। ৩০ বারের চেষ্টার পর অবশেষে সেই কলেজে ভরতির সুযোগ এসেছিল। ১৯১১ সালে স্নাতকোত্তরের পর তিনি রয়্যাল কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস-এর সদস্য এবং রয়্যাল কলেজ অফ সার্জনস-এর ফেলো হন।
[আরও পড়ুন: মুম্বইয়ের ভার্সোভা-বান্দ্রা ব্রিজ হল ‘বীর সাভারকর সেতু’, হিন্দুত্বেই ভরসা রাখছে বিজেপি]
লন্ডন থেকে দেশে ফিরে প্র্যাকটিস শুরু করেন তিনি। চিকিৎসক বিধানচন্দ্র রায়কে নিয়ে সে সময় থেকেই নানা ‘মিথ’ প্রচলিত আছে। সহজ সরল পদ্ধতিতে রোগীর চিকিৎসা করতেন তিনি। শোনা যায়, রোগীর মুখ দেখেই রোগ নির্ণয় করার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা ছিল তাঁর। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন কেনেডির মুখ দেখেই নাকি তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর পিঠে ব্যথা রয়েছে। যা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এভাবেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি কার্যতই হয়ে ওঠেন ধন্বন্তরী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গান্ধী থেকে সাধারণ দেশবাসী, বিধানচন্দ্র রায়ের রোগী ছিলেন সকলেই। যাদবপুর যক্ষ্মা হাসপাতাল, কমলা নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতাল, ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশন ও চিত্তরঞ্জন ক্যানসার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন তিনি।
তবে চিকিৎসাক্ষেত্রেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক কাজের প্রবল চাপ সত্ত্বেও চিকিৎসা পেশাকে কখনও অবহেলা করেননি তিনি। বলতেন, ”আমি নেশায় রাজনীতিবিদ, পেশায় চিকিৎসক।” এই কথা থেকেই পরিষ্কার, নিজের পেশাকে কতটা গুরুত্ব দিতেন তিনি। ১৯৬১ সালে তিনি ভারতরত্নে ভূষিত হন। পরের বছর ১৯৬২ সালে তাঁর প্রয়াণ হয় জন্মদিনের দিনই। চিকিৎসা জগতে তাঁর অবদানের কথা স্মরণে রেখেই ১৯৯১ সাল থেকে ১ জুলাই দিনটি পালিত হয় ‘ডক্টরস ডে’ হিসেবে।