সরোজ দরবার: ঘুম জড়ানো চোখে পাতাজোড়া বিজ্ঞাপনখানা দেখে অনেকেরই ঘুম ছুটেছিল। এই কি বাংলা ভাষা! চোখ কচলে অনেকে নিজেকেই পরখ করে দেখেছেন। কিন্তু কোনও ভুল নেই। বিজ্ঞাপন তো ঘোরতর বাস্তব, আরও বাস্তব তাতে ছাপা ভুল বানান ও বাংলা ভাষাকে বিকৃত করার প্রয়াস। এয়ারটেল টেলিকম সংস্থার বিরাট বিজ্ঞাপনে বাংলা বলে যা ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে শঙ্কিত বহু বাংলা ভাষাভাষীর মানুষই। সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন বহু মানুষ। আর এর প্রতিবাদেই দীর্ঘদিনের এয়ারটেল কানেকশন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রকাশক-লেখক সুমেরু মুখোপাধ্যায়।
[ ভুয়ো পোস্ট ছড়ানোর দায়ে আসানসোলে গ্রেপ্তার বিজেপি নেতা ]
বাংলা ভাষাকে নিয়ে যত গর্বই থাক না কেন, অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, ভাষা নিয়ে ভাবনা যেন আটকে গিয়েছে স্রেফ ২১ ফেব্রুয়ারি আর ১৯ মে-র উদযাপনে। গুটিকয় ভাষা চর্চাকারীদের কথা তুলে রাখলে, আম আদমির কথ্য ও লেখার ভাষায় যে ব্যাপক রদবদল ঘটছে তা অনস্বীকার্য। কারণে অকারণে তার মধ্যে ঢুকে পড়ছে অন্য ভাষা, যাতে বদলে যাচ্ছে বাক্যের বিন্যাসই। দু-তিন রকম ভাষা মিশিয়ে এমন জগাখিচুড়ি ভাষা উপহার দিচ্ছেন কিছু কিছু বেতার সঞ্চালকরা, যাতে তরুণ প্রজন্মের মুখের ভাষা আমূল বদলে যাচ্ছে। তারা এই গুরুচণ্ডালীকেই গুরুত্ব দিতে শিখছে। এমনকী অন্য ভাষার আধিপত্য এমন পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে যে সাধারণ ভাবনার প্রকাশে বাংলা খুঁজতে হোঁচট খেতে হচ্ছে বাঙালিকে। জিভের সামনে চলে আসছে বহুল প্রচারিত অন্য ভাষা। বাংলার ক্রিয়াপদের দফারফা করে ইংরেজির হুবহু অনুবাদে একরকম বাংলা বলে অনেকেই আত্মপ্রসাদ লাভ করেন। এ অভিযোগ বহুদিনের ও বহুজনেরও। গোদের উপর বিষফোড়ার মতো আছে এই বিজ্ঞাপনগুলি। যেখানে শুধু বানান ভুলই নয়, এমন বাংলা ব্যবহার করা হয় যার সঙ্গে বাংলা ভাষার অন্তত কোনও সম্পর্ক নেই। এবার তারই প্রতিবাদে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিলেন সুমেরুবাবু।
[ জঙ্গি মোকাবিলায় পাঠানো উচিত গো-রক্ষকদের, বিজেপিকে খোঁচা শিবসেনার ]
পুরো সিদ্ধান্তর কথা জানিয়ে তিনি বললেন, “এই যে প্রতিনিয়ত এই ধরনের বিজ্ঞাপনগুলি হয়ে চলেছে, এটা আসলে বাংলা ভাষা চর্চাকারীদের অপমান করা। বাংলায় ভাল লেখার লোক নেই এমন তো নয়। তা সত্ত্বেও এরকম হচ্ছে। প্রতিনিয়ত সমাজে এক ধরনের প্রলোভনের ফাঁদ পেতে রাখা হচ্ছে। যে কারণে আসছে বিচ্ছিন্নতা। বন্ধুবিচ্ছেদের মতো ঘটনাও তাতে ঘটছে। আর সেখানে কোনও এক কোম্পানির কানেকশন ছাড়া কী আর এমন বড় ব্যাপার!” ইতিমধ্যেই নিজের ইচ্ছের কথা সংস্থাকে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রায় দশ বছর এই সংস্থার কানেকশন ব্যবহার করছেন তিনি। প্রয়োজনীয় কাজকর্মের পাশাপাশি একটি ইমেল আইডিও চেয়েছেন তিনি। যেখানে তিনি জানাতে পারেন, কেন এই এক দশকের সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইছেন। ইতিমধ্যেই তাঁর এই সিদ্ধান্তের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই প্রশংসা করেছেন সুমেরুবাবুর।
The post বিজ্ঞাপনে বিকৃত বাংলা, এয়ারটেলের কানেকশন ছাড়লেন এই বাঙালি appeared first on Sangbad Pratidin.