দেবব্রত মণ্ডল: একদিকে করোনাবিধি, অন্যদিকে ভোর থেকেই বৃষ্টি। আর এই দুইয়ের কারণেই মকর সংক্রান্তিতে প্রায় ফাঁকা গঙ্গাসাগর (Gangasagar)। হইচই ব্যাপারটাই যেন হারিয়ে গিয়েছে এবারের মেলা থেকে। যতই বৃষ্টি বেড়েছে আর সময় গড়িয়েছে, ততই মেলা থেকে উধাও হয়ে গিয়েছেন সাধু, সন্ত ও তীর্থযাত্রীরা। ভিড়ের আশায় থাকা ব্যবসায়ীদের মুখে একরাশ হতাশা। ন্যূনতম খরচাটুকু উঠছে না তাঁদের।
নাগা সাধুদের আখড়া গুলিতেও এবার একেবারে ভিড় নেই। নাগা বাবা নিত্যানন্দ গিরি বলেন, “এত খরচা করে গঙ্গাসাগরে আসার পরে ফিরব কীভাবে সেটাই বুঝতে পারছি না। কারণ ফেরার খরচটুকুও এখন আমাদের কাছে নেই।” মানুষের মনে করোনা (Coronavirus) নিয়ে যেভাবে ভয় ধরানো হয়েছে তাতে মেলায় কেউ আর আসতে চাইছে না। শুধু তাই নয়, বৃষ্টির কারণে বহু মানুষ মেলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আর ভিড় কম হওয়ার কারণেই স্বস্তির নিঃশ্বাস প্রশাসনের আধিকারিকদের মুখে।
বৃষ্টির কারণে নাগা সাধুদের আখড়ার সামনেও জল জমে যায়। চারিদিকে রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত। বৃষ্টি উপেক্ষা করে তার মধ্যেও কিছু মানুষ প্লাস্টিক বা ছাতা মাথায় দিয়ে সাগর থেকে স্নান করে উপস্থিত হয়েছেন কপিলমুনির মন্দিরে। মন্দিরে পুজো দিয়ে কেউ কেউ ইতিমধ্যে ফিরতে শুরু করে দিয়েছেন। সাগর মেলার তীর্থযাত্রীদের অবস্থা যেরকমই হোক না কেন প্রশাসনের তরফ থেকে সমস্ত রকমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন ভাষায় কোভিডের (COVID-19) বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে মেলায় আগত পুণ্যার্থীদের।
[আরও পড়ুন: India vs South Africa: দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে টিম ইন্ডিয়ার প্রাপ্তি একমাত্র অনাবশ্যক বিতর্ক]
হাইকোর্টের নির্দেশ মাথায় রেখে চলছে ভ্যাকসিনেশনের কাগজ পরীক্ষা করার কাজ। বিভিন্ন পয়েন্টে এই কাজ চালাচ্ছেন প্রশাসনের কর্মীরা। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোন রকম চেকিং ছাড়াই ঢুকে পড়েছেন বহু মানুষ। এমনটাই দাবি করছেন মেলায় আগত সাধু, সন্তদের একাংশ। মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকার মাঝেও চুরির ঘটনা ঘটেছে। গত কয়েকদিনে শতাধিক চুরির ঘটনা সামনে এসেছে গঙ্গাসাগর সমুদ্র ও মেলার মন্দির প্রাঙ্গন থেকে। সমুদ্রতটে সিসিটিভি লাগানো থাকলেও তার মধ্য দিয়েই চুরির ঘটনা ঘটেছে সব থেকে বেশি। মানুষের স্নান করতে যাওয়ার পথেই চুরি হয়েছে টাকাপয়সা মোবাইল-সহ অন্যান্য সামগ্রী।
মেলাকে কেন্দ্র করে প্রায় আট হাজারের উপরে পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়। অ্যান্টি ক্রাইম টিমও রয়েছে। ২১০০ সিভিল ডিফেন্সের কর্মী মোতায়েন আছে সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন এলাকাগুলিতে। রয়েছে সাতটি কুইক রেসপন্স টিম এবং ২৫টি স্পিডবোট, এনডিআরএফ, কোস্টগার্ড। রবিবার দুপুর প্রায় সাড়ে বারোটা পর্যন্ত চলবে মকর সংক্রান্তির এই স্নানপর্ব। ইতিমধ্যেই স্নান করেছেন পুরীর শংকরাচার্য নিশচলানন্দ সরস্বতী মহারাজ।
শুক্রবার তিনজনকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে হাওড়া হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের সাবিত্রী শিকারাম বাউনি। ৭৫ বছরের মহিলা পড়ে গিয়ে হাঁটুতে চোট পান।কলকাতায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে তাঁকে।
এদিন গঙ্গাসাগর মেলায় এসে কপিল মুনির মন্দিরে পূজা দেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী। গঙ্গাসাগর মেলায় রাজ্য সরকারের ব্যবস্থাপনায় খুশি বিজেপি নেত্রী। কোভিড মোকাবিলায় যে ব্যবস্থাপনা নিয়েছে রাজ্য সরকার, তা প্রশংসার যোগ্য এমনটাই বলেন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উমা ভারতী। উমা ভারতী বলেন, “গঙ্গোত্রী থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত আমি একটি যাত্রা শুরু করেছিলাম।শারীরিক অসুস্থতা ও করোনা মহামারীর জন্য আমার সেই যাত্রা অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছে। আজ গঙ্গোত্রী গোমুখ থেকে মা গঙ্গাকে এনে গঙ্গাসাগরে আমি মেলবন্ধন করলাম। আমি খুব আনন্দিত। মা গঙ্গা সকলকে ভাল রাখবেন।”
এদিন সাগরমেলার মেলা অফিসে সাংবাদিক সম্মেলন করেন জেলাশাসক পি উলগানাথন, মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস, বঙ্কিম হাজরা, পুলিশ রায়। অরূপ বিশ্বাস বলেন, “ই-স্নান করেছেন ২,৭৮,৭৮০ জন মানুষ, ই-দর্শন ২ কোটি ৭৮ হাজার মানুষ, ই-পূজা ১ লক্ষ ৬৩৬২ জন্য আবেদন করেছেন। দুবাই, লন্ডন, আমেরিকা থেকেও বহু মানুষ আবেদন করেছেন ই-স্নানের জন্য।”