অর্ণব আইচ: ব্যাংক গ্রাহক এক যুবকের জামায় নোংরা ফেলে কেপমারি। যুবকের ব্যাগে থাকা লক্ষাধিক টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে উধাও কেপমাররা। তবে শেষপর্যন্ত ব্যাংক ও রাস্তার সিসিটিভির ফুটেজ দেখে দুই তিন কেপমারকে গ্রেপ্তার করলেন লালবাজারের (Lalbazar) গোয়েন্দারা। তাদের মধ্যে রয়েছে এক প্রৌঢ়ও।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই তিন কেপমারের নাম বাবু মুদালিয়া। তার বয়সই ৫৮ বছর। বাকি দু’জন হচ্ছে রবি প্রসাদ ও জগন স্বামী। গত মাসে মধ্য কলকাতার জাননগর রোডের বাসিন্দা নাসিম আখতার মুচিপাড়া এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে যান। সেখান থেকে এক লক্ষ ৯০০ টাকা তুলে তিনি তাঁর পিঠে থাকা ব্যাগে রাখেন। ওই ব্যাগে তাঁর এটিএম কার্ড, বিভিন্ন শংসাপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, চাবি ছিল। ব্যাংক থেকে বেরিয়ে একটু এগোতেই এক কেপমার তাঁর পিঠে নোংরা ছিটিয়ে দেয়। অন্য এক কেপমার তাঁর ‘বন্ধু’ হয়ে এসে জানায়, তাঁর পিঠে নোংরা লেগে রয়েছে। তিনি কী করবেন, তা ভেবে ওঠার আগে আরও একজন তাঁর ‘সাহায্যকারী’ হয়ে আসে। তাঁকে পরামর্শ দেয়, কাছেই শিয়ালদহের শিশির মার্কেটের সুলভ শৌচাগারে গিয়ে নোংরা ধুয়ে ফেলতে। তিনি ব্যাগটি পিঠ থেকে নামিয়ে নোংরা ধুতে থাকেন।
[আরও পড়ুন: ‘সিআরপিএফ ঘেরাও’ মন্তব্যের জের, মমতার বিরুদ্ধে কমিশনের দ্বারস্থ বিজেপি]
এদিকে, কেপমাররা তাঁর কাছেই ছিল। একজন ব্যাগটি তুলে অন্যজনকে দেয়। সেটি নিয়ে উধাও হয়ে যায় তিন কেপমার। এমনভাবে ওই কেপমাররা তাঁর বন্ধু সেজে ছিল, শৌচাগারের কর্মীরাও কিছু বুঝতে পারেননি। এই ব্যাপারে ওই যুবক মুচিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেন লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা। জানা যায়, কেপমাররা ব্যাংক থেকেই ওই যুবকের পিছু নেয়। একজন তাঁকে টাকা তুলতে দেখে। এরপরই ওই যুবক ব্যাংক থেকে বের হওয়ার পরই তারা শুরু করে ‘অপারেশন’।
এদিকে, ব্যাংক ও তার বাইরের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে কেপমারদের শনাক্ত করেন গোয়েন্দারা। সেইমতো তদন্ত চালিয়ে হুগলির চুঁচুড়ায় তাদের ডেরায় গোয়েন্দারা হানা দেন। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে তিন দুষ্কৃতী। তাদের কাছ থেকে ৯০ হাজার টাকা নগদ, ওই ব্যাগ ও তার ভিতরে থাকা জিনিসপত্রগুলি গোয়েন্দা পুলিশ উদ্ধার করে। জেরার মুখে ধৃতরা স্বীকার করেছে যে, দেশের বিভিন্ন শহরে ঘুরে ঘুরে তারা কেপমারি করে বেড়ায়। কোনও ব্যক্তিকে ‘টার্গেট’ করে তুলে তারা তাঁর জামায় নোংরা অথবা গায়ে চুলকানির পাউডার ছুড়ে দেয়। ওই ব্যক্তির অস্বস্তি শুরু হলে সেদিকেই তাঁর মন চলে যায়। আর এরপরই ওই ব্যক্তির সঙ্গে থাকা ব্যাগ হাতিয়ে নেয় তারা। মূলত ব্যাংকের গ্রাহকদের উপর নজর রাখে ওই কেপমাররা। যে গ্রাহক বেশি পরিমাণ টাকা নিয়ে বের হচ্ছেন, তিনিই হন তাদের ‘টার্গেট’। ব্যাংক থেকেই তারা ওই ‘টার্গেট’এর পিছু নিয়ে কেপমারি করে। ধৃতদের জেরা করে তারা কোথায় কোথায় এই কেপমারি করেছে, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।