shono
Advertisement

সীমান্ত পেরিয়ে আসা বাঘ ঘুম কেড়েছে সুন্দরবনের গ্রামে

বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা!!! The post সীমান্ত পেরিয়ে আসা বাঘ ঘুম কেড়েছে সুন্দরবনের গ্রামে appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 09:51 AM Nov 10, 2017Updated: 02:22 PM Sep 25, 2019

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সম্রাটের কোনও দেশ হয় না। এক দেশ থেকে অনায়াসে তিনি চলে যান অন্য দেশে। তাঁর না লাগে পাসপোর্ট, না লাগে ভিসা।

Advertisement

লোনা নদীর দু’পাড়েই গরান, হেঁতালের জঙ্গল। একদিকে বাংলাদেশের সুন্দরবন। অন্যদিকে ভারতের। নদী যতই চওড়া হোক আর তাতে স্রোত যতই থাকুক, বড়মিয়ার কোনও সমস্যা নেই। খরস্রোতা নদী সাঁতরে এপার-ওপার করতে চৌকস রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। কিন্তু বাঘেদের এপার-ওপার করাই যে ঘুম কেড়েছে জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের মানুষের। এখনও বাগনা গ্রামের বিদ্যুৎ সরকারের মনে পড়ে বছর তিনেক আগের সেই দিনটার কথা। ভোরবেলা নদীর ধারে ছাগল চরাতে নিয়ে গিয়ে আঁতকে উঠেছিলেন গ্রামেরই এক মহিলা। পাড় বরাবর দুলকি চালে হেঁটে চলেছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। কোনওমতে প্রাণ বাঁচিয়ে গ্রামে এসে ‘বাঘ, বাঘ’ বলে চিৎকার করতে থাকেন তিনি। গ্রামের লোকেরা লাঠি নিয়ে নদীর পাড়ে ছুটে এসে তখনকার মতো বাঘ দেখতে পাননি। কিন্তু তার পর থেকে ঘটতে শুরু হয় একের পর এক ঘটনা। কখনও গোয়ালঘরে দেখা যায় বাঘ। আবার কখনও ঝোপের ভিতর থেকে উদ্ধার হয় আধখাওয়া ছাগলের দেহ।

[আগামী বছরের শুরু থেকে এই শহরে চলবে গোলাপি অটো]

বাঘের হামলা থেকে বাঁচেনি অন্যান্য গৃহপালিত পশুও। বাগনা থেকে শুরু করে উত্তর কুমিরমারি, দক্ষিণ কুমিরমারি, দক্ষিণপাড়া—সহ দ্বীপের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে বাঘের আতঙ্ক। যদিও সে যাত্রায় রক্ষা পায় মানুষ। বাঘ ধরার জন্য ফাঁদ পাতে বন দপ্তর। যেহেতু বাগনা ফরেস্ট বিটের অফিসেই বিএসএফ-এর ক্যাম্প, তাই বনকর্মীদের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামে ছুটতে হয় বিএসএফ জওয়ানদেরও। শেষ পর্যন্ত ট্র‌্যাঙ্কুলাইজার দিয়ে ধরা হয় বাঘ। সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভের আওতায় ঝিল্লা নদী ধরে কালীতলা বাজারের ঘাটের দিকে এগিয়ে গেলে পড়ে ঝিঙ্গা বিট অফিস। এই ঝিঙ্গা জঙ্গলের উল্টোদিকেই কালীতলা গ্রাম। নদীর পার বরাবর জাল দিয়ে ঘেরা। সুন্দরবনের বাঘ জালে বাধা পেলে ফিরে যায়। কিন্তু সেই জালও যে কিছু জায়গায় কাটা। ঝিঙ্গা বা ঝিল্লার জঙ্গল থেকে বাংলাদেশের জঙ্গলে পৌঁছনো যায় নদী পেরিয়ে। তাই সন্ধ্যা নামতে আতঙ্কের ছায়া নেমে আসে কালীতলা গ্রামের মানুষের মধ্যেও। কোনওভাবে নদী পেরিয়ে বড়মিয়ার গ্রাম ঘোরার ইচ্ছা হবে না, তাই বা কে বলতে পারে? আবার নদীর বুকে মাছের ছোট নৌকোও কখনও ‘টার্গেট’ হতে পারে বাঘের। আবার বাঘেরও নিস্তার নেই মানুষের হাত থেকে।

সুন্দরবনে বাঘের চোরাশিকার এখন অনেকটাই কমেছে। কিন্তু ২০০৮ সালে এই ঝিল্লা নদীর পাড় থেকেই উদ্ধার হয়েছিল একটি বাঘের দেহ। বাঘটিকে গুলি করে মেরেছিল শিকারিরা। ফের যে বাঘ তাদের লক্ষ্য হয়ে উঠবে না, তা-ই বা কে বলতে পারে। এখনও সুন্দরবনের বহু জায়গায় হরিণ ও বুনো শুয়োরের চোরাশিকার হয় বলে অভিযোগ। এ ছাড়াও এখন সুন্দরবনের তক্ষক হয়ে উঠেছে চোরাশিকারিদের প্রধান ‘টার্গেট’। জীবন্ত তক্ষক চোরাপথে পাচার হচ্ছে বাংলাদেশে। সেখান থেকে মায়ানমার ও তাইল্যান্ড হয়ে চিন। ততদিনে তক্ষক না বাঁচলেও ক্ষতি নেই চোরাশিকারিদের। কারণ, মৃত তক্ষকের চামড়া পাচার করাই আসল উদ্দেশ্য তাদের। এর দাম লাখ লাখ টাকা।

বাঘ, হরিণ, তক্ষকদের চোরাশিকারের হাত থেকে বাঁচাতে বন দপ্তরের সঙ্গে সঙ্গে বড় ভূমিকা নিতে হচ্ছে বিএসএফকেও। সুন্দরবনের জলসীমান্তে স্পিডবোট অথবা মিডল ভেসেল করে খাঁড়িতে ঘুরে টহল দেওয়ার সময় জওয়ানদের কড়া নজর থাকে চোরাশিকারিদের কার্যকলাপের দিকেও। ঝিঙ্গা, ঝিল্লা, বুড়ির ডাবড়ি থেকে শুরু করে বিহারীখালের জঙ্গলের বিস্তীর্ণ এলাকায় টহল দেওয়ার সময় জওয়ানদের চোখে পড়ে যায় বাঘ। টহলদার জলযানের শব্দ শুনেও অনেক সময় নদীর পাড় থেকে সে চায় না জঙ্গলের ভিতর ঢুকে যেতে। রাত-টহলের সময় বাঘ চোখে পড়লে পাওয়ার টর্চের তীব্র আলো ফেলা হয় বাঘের চোখে। তবেই উঠে গভীর জঙ্গলে চলে যায় তারা। বাঘদের বিরক্ত করতে চান না জওয়ানরা। কিন্তু কোনও গোপন জায়গা থেকে যদি তার শরীর তাক করে চোরাশিকারিদের বন্দুক? তাই নদীর পাড়ে বাঘ দেখলে তাদের জঙ্গলে তাড়িয়ে দেওয়া হয় ভিতরে। গভীর জঙ্গলে হয়তো ঢোকার সাহস হবে না চোরাশিকারিদের। আর বন্যরাও সুন্দর থাকবে সুন্দরবনে।

[গন্তব্য কলকাতা থেকে খুলনা, যাত্রা শুরু করল ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’]

The post সীমান্ত পেরিয়ে আসা বাঘ ঘুম কেড়েছে সুন্দরবনের গ্রামে appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement