সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: ময়নায় নিহত বিজেপির বুথ সভাপতি বিজয়কৃষ্ণ ভুঁইয়াকে ব্লিচিং দিয়ে সাফ করার হুমকি দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূলে থাকাকালীন শুভেন্দুর সেই ভিডিও বুধবার রাতে টুইট করে ফাঁস করেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় তা প্রকাশ্যে আসতেই গোটা রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে।
কুণাল ঘোষ এই ভিডিও সামনে এনে টুইটে দাবি করেন, ‘‘ময়নায় নিহত বিজয় ভুঁইয়ার নামে তৎকালীন তৃণমূল নেতা শুভেন্দু কী বলেছিল, শুনুন। তাই ওখানে আদি-নব্য বিজেপির বিবাদ ছিল। এই হত্যাকাণ্ডে শুভেন্দুকেও জেরা করা দরকার। পিছনে গভীর চক্রান্ত থাকতে পারে। তদন্ত হোক।’’ কুণালের টুইট করা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, শুভেন্দু ভাষণ দিচ্ছেন। বলছেন, ‘‘যেমন অসুখ, তেমন ওষুধ আমার কাছে আছে।’’ এরপরই কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেন শুভেন্দু। তাদের মধ্যে বিজয়কৃষ্ণ ভুঁইয়ার নামও বলেন। সকলের নাম কাগজে লিখে নিয়ে যাচ্ছেন, একথা বলে তাঁকে ভিডিওতে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘বাকচার আবর্জনা আমি পরিষ্কার করব। কী ধরনের ব্লিচিং-ফিনাইল দিয়ে পরিষ্কার করতে হয় তা শুভেন্দু জানে।’’
অর্থাৎ, সেই সময় বর্তমানে নিহত বিজেপির বুথ সভাপতি বিজয় ভুঁইয়াদের ব্লিচিং-ফিনাইল দিয়ে সাফ করারই হুমকি দিয়েছিলেন বর্তমান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এদিন, আরেকটি টুইটে একটি ভিডিও তুলে ধরেছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি কর্মী বিজয় ভুঁইয়ার বাড়ি থেকে বোমা তৈরির মশলা উদ্ধার করছে পুলিশ। সেখানে দেখা যাচ্ছে বিজয়ের স্ত্রীকেও। কুণাল এই ভিডিও প্রকাশ করে টুইটে লিখেছেন, ‘২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, অধুনা নিহত বিজয় ভুঁইয়ার বাড়ি থেকে বোমা তৈরির মশলা ইত্যাদি উদ্ধার করে পুলিশ। দেখুন সেদিন তাঁর স্ত্রীর ভিডিও।’
[আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতির মূল পাণ্ডা মানিক, সুপ্রিম কোর্টে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ সিবিআইয়ের]
রাতে ভিডিও দুটি প্রকাশ করে কুণাল দাবি করেন, ময়নার ঘটনায় শুভেন্দুকে তদন্তের আওতায় আনাতে হবে। এই মৃত্যুর ঘটনায় আদি ও তৎকাল বিজেপির বিবাদ রয়েছে কি না সেটা তদন্ত করে দেখার দরকার রয়েছে বলে দুপুরেই মন্তব্য করেছিলেন কুণাল। এদিকে, যে শুভেন্দু বিজয়ের খুনের ঘটনায় গলা ফাটাচ্ছে, সরব, তৃণমূলে থাকাকালীন সেই শুভেন্দুই বিজয়কে ব্লিচিং দিয়ে সাফ করার হুমকি দিয়েছিলেন, এই ভিডিও ফাঁস হওয়ায় চাপে পড়ে গিয়েছে রাজ্য বিজেপিও।
ময়নায় বিজেপি কর্মী খুনের ঘটনায় সিবিআই তদন্তের আরজি খারিজ করে সিআইডি তদন্তেই আস্থা রাখল কলকাতা হাই কোর্ট। তবে কমান্ড হাসপাতালে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিলেও রাজ্যের তরফে দু’জন বিশেষজ্ঞ হাজির থাকতে পারবেন বলেও বুধবার জানিয়েছেন বিচারক রাজাশেখর মান্থা। সিআইডির উপর হাই কোর্টের আস্থা রাখার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। কুণাল বলেন, ‘‘আগেই তো সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। সেই তদন্ত শেষ হওয়ার আগে সিবিআই চাওয়াটা যুক্তিসঙ্গত নয়।’’
কমান্ড হাসপাতালে ময়নাতদন্ত নিয়ে তৃণমূলের যুক্তি, এর আগে কাশীপুরে এক যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে বিজেপি রাজনীতি করে কমান্ড হাসপাতালে পোস্টমর্টেম করিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর মুখ পুড়িয়ে ছিল। রাজে্যর ময়নাতদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা যে যথেষ্ট যোগ্য এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে করেন, তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে বলেও দাবি করেন তৃণমূল মুখপাত্র। বিজেপি কর্মী খুনের ঘটনায় ১২ ঘণ্টা বন্ধের নামে বুধবার ময়নায় বহিরাগত গেরুয়া বাহিনী চরম অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে। দিনের শুরুতেই পার্শ্ববর্তী নন্দীগ্রাম, খেজুরি ও কাঁথি থেকে বাইক বাহিনী নিয়ে এসে ময়নার বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে পথ অবরোধ করে উত্তেজনা ছড়ায়।
বিডিও ও বিএলআরও অফিসে ঢুকে সরকারি কর্মীদের হুমকি দিয়ে প্রশাসনিক কাজকর্ম বন্ধের চেষ্টা করেন স্বয়ং স্থানীয় বিধায়ক অশোক দিন্দা। পথ অবরোধকারী বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের বেশ কয়েকটি জায়গায় সংঘর্ষ বাধে। বিজেপির এই ময়না বন্ধকে সম্পূর্ণ ব্যর্থ এবং জনগণ প্রত্যাখ্যাত বলে মন্তব্য করেছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপির ডাকে বন্ধে কোনও সাড়া ছিল না। বন্ধ ব্যর্থ। ফলে গন্ডগোল, গা-জোয়ারি, জুলুমবাজি করেছে বিজেপি কর্মীরা। প্ররোচনা দিয়েছে, যাতে পুলিশ ব্যবস্থা নিলে আবার নাটক করতে পারে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে এই বন্ধের কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সেটা নিয়ে হইচই বাঁধানো ঠিক নয়। এই মৃত্যুর ঘটনার পিছনে আদি বিজেপি বনাম তৎকাল বিজেপি লড়াই থাকতে পারে। বিরোধী দলনেতাকেও জেরা করা দরকার। পিছনে গভীর চক্রান্ত থাকতে পারে। তদন্ত হোক।’’
এদিকে, দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের জন্য তমলুক থেকে কলকাতায় দেহ নিয়ে আসা ও ফেরতের ব্যবস্থা করবে রাজ্য পুলিশ। তবে মৃতের পরিবারকে আগামী চার সপ্তাহ নিরাপত্তা দেবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এদিন এমনই নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। মামলার শুনানিতে মৃতের পরিবারের দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের আবেদনে অবশ্য আপত্তি জানায়নি রাজ্য। আদালতে রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, ‘‘মাথায় গুলি লেগেই মৃত্যু হয়েছে বিজয়কৃষ্ণ ভুঁইয়ার। আর এই ঘটনায় দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তে রাজ্যের কোনও আপত্তি নেই।’’
রাজ্যের দাবি, ‘‘চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করার পরই পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। সেখানে খুন, অপহরণের ধারাতেও মামলা রুজু হয়েছে।’’ এদিন ময়নার বাকচা গোড়ামাহাল এলাকায় নিহত বিজেপির বুথ সভাপতি বাড়িতে যান দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। অন্যদিকে, পাঁশকুড়ার মেচোগ্রাম মোড়ে বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা পথ অবরোধ করায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক যানজটে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। কর্মসূচিতে শামিল হন দিলীপ ঘোষও।