ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: ছাত্র-যুবর নয়নের মণি বলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee) সংবর্ধনা দেওয়াটা তৃণমূলের ছাত্র বা যুব সংগঠনের রেওয়াজ। সূত্রের খবর, বিধানসভায় টিকিট পাওয়ায় ক্ষেত্রে সেই ‘নয়নের মণি’র নজরেই রয়েছে বেশ কিছু ছাত্র নেতানেত্রীর নাম। দু’-একদিনের মধ্যেই তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হতে পারে বলে মনে করছে দলের একাংশ। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ছাত্রনেতার নাম ভাবনায় থাকতে পারে বলে জানাচ্ছে দলেরই সেই অংশের নেতৃত্ব।
কাদের নাম শোনা যাচ্ছে? জল্পনা রয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য, প্রাক্তন সভানেত্রী জয়া দত্ত-সহ গৌতম ভট্টাচার্য, দেবাংশু ভট্টাচার্য (Debangshu Bhattacharya), সুদীপ রাহার মতো বেশ কিছু নাম নিয়ে। প্রার্থী হতে পারেন প্রাক্তন ছাত্রনেতা বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়ও। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কোনও একটি আসনে তাঁকে প্রার্থী করা হতে পারে। দেবাংশু এই মুহূর্তে ছাত্র, যুব বা মূল সংগঠনের অন্যতম পরিচিত নাম। অত্যন্ত জনপ্রিয়। ‘মমতাদি আরেকবার’ আর ‘খেলা হবে’ গান দুটি তৈরি করে দলে শুধু নয়, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন দেবাংশু। রাজ্য রাজনীতিতেও পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন। অভিষেকেরও অত্যন্ত পছন্দের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও (Mamata Banerjee) স্নেহ করেন। এই পরিস্থিতিতে তিনি টিকিট পেলে অনেক অল্প বয়সেই দলে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ মূল্যায়ন হবে। মমতাও বারবার ছোটদের মধ্যে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো নতুন প্রজন্মকে তুলে আনার কথা বলেছেন।
[আরও পড়ুন: ISF-এর সঙ্গে জোট কেন? কৈফিয়ত চেয়ে অধীরের রোষের মুখে কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা]
জয়াও প্রাক্তন ছাত্র সভানেত্রী হিসেবে দাপটের ছাপ রেখেছিলেন। লড়াকু। গৌতম ভট্টাচার্য সংগঠনের পুরনো নাম। স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, কর্মঠ। সুদীপ ভাল বক্তা। সংগঠনে পরিচিত। সেক্ষেত্রে দেবাংশু ছাড়া জয়া, গৌতম বা সুদীপের নাম চূড়ান্ত তালিকায় থাকলে তা হবে মমতার বড় চ্যালেঞ্জ। ছাত্র, যুব এমনকী সকল স্তরের নেতৃত্বকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা রয়েছে এঁদের সকলের। লড়াইয়ে এই প্রজন্মকে এগিয়ে দিলে সত্যিই নতুন নেতৃত্ব তৈরি হবে বলে মনে করছে দলের একাংশ। জল্পনা সত্যি হলে বালি থেকে দেবাংশুকে প্রার্থী করা হতে পারে। জয়া আর গৌতমকে উত্তর ২৪ পরগনার কোনও আসন দেওয়ার কথা চর্চায় উঠে এসেছে। আর তৃণাঙ্কুর প্রার্থী হলে তাঁর নাম থাকতে পারে নৈহাটি লাগোয়া এলাকায়।
তবে গোটাটাই জল্পনা। উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রেও কিছু যুবনেতার নাম আলোচনায় রয়েছে। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারে প্রবীণ মন্ত্রীর অভিজ্ঞতার সঙ্গে যুব শক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয় সামনে এসেছে। তালিকায় থাকতে পারে কোচবিহারের যুব নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়ের নাম। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব, পিকের (Prashant Kishor) সার্ভে সহ একাধিক সূত্রে নানা নাম জমা পড়েছে। তাদের মধ্যে থেকে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির পরিশ্রমী মুখকে বেছে নেওয়া হতে পারে। তবে এর অর্থ এটা নয় যে, সব আসনেই এমনটা ভাবা হয়েছে। যে জায়গায় দলীয় কোন্দল বা বর্তমান বিধায়কের নামে দলীয় কর্মসূচিতে না থাকার অভিযোগ রয়েছে সেখানেই এই ধরনের বদলের চমক থাকতে পারে। আবার অনেক বিধায়কের আসন বদলে দেওয়ার কথাও সামনে এসেছে। সব মিলিয়ে প্রবল উত্তেজনায় ফুটছে দল। কার নাম চূড়ান্ত হবে তা তালিকা প্রকাশ হলেই সামনে আসবে।
[আরও পড়ুন: নন্দীগ্রামে মনোনয়নের প্রক্রিয়া শুরু শুভেন্দু অধিকারীর! ইস্তফা জুট কর্পোরেশনের পদ থেকে]
বস্তুত, গোটা দলের খোলনলচে বদলে একেবারে সংগঠন করা ব্যক্তিকেই এক্ষেত্রে এগিয়ে রাখার কথা শোনা যাচ্ছে। সেই প্রেক্ষিতেই স্থানীয় জনজাতির মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিমে এমন নাম তালিকায় থাকতে পারে। বিশেষ গুরুত্বের জায়গায় থাকতে পারে জঙ্গলমহল, ডুয়ার্সের নানা আদিবাসীর মানুষের প্রতিনিধির নাম। পাহাড়ে অবশ্য যথারীতি সেখানকার দলকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।