ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: জেলাসফরে গিয়ে সাধারণ মানুষের বাড়ির উঠোনে ভাতের থালা নিয়ে বসে খাওয়াদাওয়ার ফাঁকে সমস্যার কথা শুনতে দেখা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মেঠো পথ দিয়ে হেঁটে বাড়ি বাড়ি ঢুকে মারিশদায় সাধারণ মানুষের দুর্দশার কথা শুনেছেন অভিষেক। শনিবারই কাঁথির জনসভার মঞ্চ থেকে জনসংযোগে আরও জোর দেওয়ার বার্তা দিয়েছেন তিনি। ঠিক তার পরদিনই হলদিয়া পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিদ্যুৎবিহীন দুই গ্রাম বিষ্ণুরামচক এবং সৌতনপুরে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ।
রাজ্যের প্রায় প্রত্যেকটি গ্রামের ঘরে ঘরেই পৌঁছে গিয়েছে বিদ্যুৎ এবং জল। তবে ব্যতিক্রম হলদিয়া পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিষ্ণুরামচক এবং সৌতনপুর গ্রাম। স্বাধীনতার পর থেকে এখনও সেখানে পৌঁছয়নি বিদ্যুৎ। আধুনিক যুগেও হ্যারিকেনের আলোয় দিনযাপনই যেন ভবিতব্য স্থানীয়দের। বারবার স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি সমস্যার কথা জানিয়েছেন। বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে একসময় বাম নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। তাঁরা ভেবেছিলেন গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছবে। সে আশাপূরণ হয়নি। এরপর শুভেন্দু অধিকারীর কাছে কম দরবার করেননি তাঁরা। কিন্তু গ্রামে বিদ্যুৎ এল কই? এখনও অন্ধকারেই দিন কাটছে বিষ্ণুরামচক এবং সৌতনপুরে গ্রামের বাসিন্দাদের।
[আরও পড়ুন: ‘উচ্চ মাধ্যমিক পাশ, MBA ডিগ্রি ভুয়ো’, অভিষেকের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন শুভেন্দুর]
রবিবার সকালে স্থানীয়দের অনুরোধে ওই দু’টি গ্রামে যান। বিদ্যুতের সমস্যার কথা গ্রামবাসীদের থেকে শোনেন। কুণাল ঘোষ বলেন, “ভাবা যায়? দু’টি গ্রাম। স্বাধীনতার পর থেকে এখনও যাদের বিদ্যুৎ আসেনি। হলদিয়া পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিষ্ণুরামচক এবং সৌতনপুর। দীর্ঘ বামজমানা এবং পরবর্তীকালে অধিকারীরাজ, বারবার আবেদন নিষ্ফলা। কাল সন্ধেয় কাঁথি থেকে হলদিয়া চলে এসেছি। সকালে মাখনবাবুর বাজার মোড়ে বসে চা খাচ্ছিলাম। নাগরিকদের সঙ্গে কথোপকথন। সেই সময়ই অভিযোগ, দুই গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। রাস্তাও খারাপ। শুভেন্দু এবং শ্যামল আদকের বিরুদ্ধে গুচ্ছ অভিযোগ। অতঃপর তাঁদের অনুরোধে তাঁদের গ্রামে গেলাম। বন্দরের জমি সংক্রান্ত কিছু জটিলতা আছে শুনলাম, কিন্তু তাতেও অন্যত্র বিদ্যুৎ আছে। সবুজ গ্রাম, একাধিক পুকুর, শান্ত সুন্দর লাগল। সকলের অনুরোধ, যুগে যুগে সবাই শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এবার তৃণমূল বিদ্যুৎ আনতে সক্রিয় হোক। দেখলাম। শুনলাম। দেখা যাক কী করা যায়।”
আগামী বছরেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে জনসংযোগে জোর দিয়েছে শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই। সাধারণ মানুষের অভাব অভিযোগ শুনে সমস্যা সমাধানই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বিষ্ণুরামচক এবং সৌতনপুরে বিদ্যুৎ পৌঁছয় কিনা, সেটাই এখন দেখার।
এরপর বেলায় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গাচকে চাটাই পেতে বসে সমস্যা নিয়ে স্থানীয় নেতৃত্বর সঙ্গে আলোচনা করেন। পরতে পরতে অভিযোগ ওঠে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে। আগে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, যাঁর কথায় হলদিয়ায় নিয়ম নীতি তৈরি হত, সেই শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠরাই সমস্যার মূলে। কুণাল বলেন, “দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যা নির্দেশ দিয়েছেন, সেটাই ঘুরে ঘুরে করছি। মানুষ কাজ পাক, চিকিৎসা পাক, সরকারের পরিষেবা পৌঁছোক। আমি কো-অর্ডিনেটর নই। স্থানীয়রা যাতে ঠিক মতো কাজ করতে পারেন, আর মমতাদির কাজ যাতে মানুষের কাছে পৌঁছয় ঠিক মতো সেটা দেখাই আমার কাজ।” টাকার বিনিময়ে চাকরির অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। এখন নিয়ম করে দিয়েছেন অভিষেক। সেই অনুযায়ী কাজ হবে। কাউকে টাকা দেবেন না। নির্দিষ্ট যে জায়গায় গিয়ে আবেদন করতে হবে সেখানেই করুন। স্বচ্ছতা মেনে সুযোগ আসবে।”