সুতীর্থ চক্রবর্তী: সকলের জন্য ন্যূনতম আয়। দীর্ঘদিন ধরে অর্থনীতিবিদরা দেশের সরকারকে যে প্রকল্পটি চালু করার পরামর্শ দিয়ে আসছেন, সেই প্রকল্পটি চালু করার প্রতিশ্রুতি নির্বাচনী ইস্তাহারে দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (TMC leader Mamata Banerjee)। তিনি ঘোষণা করেছেন, তাঁরা রাজ্যে ফের সরকার গঠন করলে প্রতিটি পরিবার মাসে সরকারের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে পাবেন। তফসিলি জাতি ও উপজাতি পরিবারের ক্ষেত্রে এটি হবে মাসে ১০০০ টাকা। গৃহকর্ত্রীর নামে এই টাকা আসবে। ইস্তাহার প্রকাশ করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাড়ির মহিলাদের হাতে অনেক সময় কোনও টাকা থাকে না। এই টাকাটা হাতে থাকলে সবারই কাজে লাগবে।”
ভারতের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বহুদিন ধরেই একদল অর্থনীতিবিদ সকলের জন্য ন্যূনতম আয় তথা ‘ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম’ প্রকল্পটি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। এই প্রকল্পে তাঁরা মূলত গরিব পরিবারগুলোর হাতে প্রতি মাসে কিছু টাকা দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করছিলেন। মমতা তাঁর প্রকল্পে রাজ্যের সমস্ত পরিবারকে নিয়ে এসেছেন। গত মাসে রাজ্যের ভোট অন অ্যাকাউন্ট বাজেট প্রস্তাবে মমতা ষাটোর্ধ্ব সমস্ত মানুষের জন্য মাসে হাজার টাকা পেনশনের কথা বলেছিলেন। এবার ইস্তাহারে তিনি আরও এক পা এগিয়ে গেলেন। তৃণমূল ক্ষমতায় এলে এবং সকলের জন্য ন্যূনতম আয়ের এই প্রকল্পটি চালু হলে তা এক যুগান্তকারী ঘটনা হতে পারে। যদিও বিরোধীরা ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন এই ধরনের প্রকল্পের অর্থ রাজ্য সরকার কীভাবে যোগান দেবে? ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ ঋণের ভারে জর্জরিত। রাজ্যের প্রায় ২ কোটি পরিবারকে বছরে এতগুলি টাকা দিতে আরও বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়ো্জন। ভোটের ইস্তাহারে অবশ্য টাকার যোগান কীভাবে আসবে সে কথা বলা থাকে না।
[আরও পড়ুন : আরও ১০ আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ বামফ্রন্টের, প্রার্থীবদল বনগাঁ দক্ষিণের]
বিরোধীরা যাই সমালোচনা করুন, ইস্তাহারে এটি মমতার মাস্টারস্ট্রোক বলে তৃণমূলের দাবি। ভোটের আগে দুয়ারে সরকার ও স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প দিয়ে মমতা তাঁর সমর্থন ভিত্তি আরও বাড়িয়েছেন বলে তৃণমূল নেতারা মনে করছেন। ইস্তাহারে সকলের জন্য ন্যূনতম আয়ের প্রকল্প মমতাকে ভোটে অনেকটা এগিয়ে দেবে বলে তৃণমূল নেতারা দাবি করেছেন। দেশে এখনও কোনও সরকার এই ধরনের প্রকল্পের কথা ভাবার সাহস দেখায়নি। মমতা এদিন ইস্তাহার প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, “অতীতে ইস্তাহারে যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তার ১১০ শতাংশ পূরণ করেছি। এবারও তাই হবে।” তৃণমূল নেতাদের কথায়, এখানেই মমতার ইউএসপি। তিনি ইস্তাহারের প্রতিশ্রুতি রূপায়ণ করেন। ফলে রাজ্যের মানুষ বিশ্বাস করবেন যে মমতাকে ভোট দিয়ে জিতিয়ে আনলে ন্যূনতম মাসিক আয় প্রকল্পটি পাওয়া যাবে। এক তৃণমূল নেতা বলেন, ২০১৪ সালে মোদি ভোটের আগে সকলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই টাকা এখনও মানুষ পায়নি। কিন্তু মমতা ক্ষমতায় আসার আগে সিঙ্গুরের জমি কৃষকদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেই জমি তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। মমতার ইস্তাহারের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে।