সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কথায় বলে, ‘পুরনো চাল ভাতে বাড়ে’। রাজনীতির ময়দানেও এ প্রবাদের খুব একটা ব্যতিক্রম নেই। সংসদীয় রাজনীতিতে বয়স ও অভিজ্ঞতা কিছুটা হলেও বাড়তি নম্বর যোগ করে রাজনীতিকদের মার্কশিটে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের (TMC) ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নেই। লোকসভা নির্বাচনের (2024 Lok Sabha Election) ঢাকে কাঠি পড়তেই বাংলার ৪২ আসনের মধ্যে ২০ আসনে প্রার্থীর নাম প্রকাশ করেছে বিজেপি (BJP)। তবে এক্ষেত্রে তৃণমূল ‘সাসপেন্স’ জারি রাখলেও শাসক দল সূত্রে খবর, প্রার্থী তালিকায় এবারও একাধিক পুরনো সাংসদের উপরেই আস্থা রাখতে চলেছে ঘাসফুল শিবির।
একঝলকে দেখে নেওয়া যাক ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে পুরানো যে মুখগুলির উপর ফের ভরসা রাখতে চলেছে তৃণমূল…
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়: তৃণমূলের সংসদীয় রাজনীতির অন্যতম ‘স্তম্ভ’ হিসেবে পরিচিত সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতাও বটে। একাধিকবার সামলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদও। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্য রাজনীতিতে তাঁকে ঘিরে বিতর্ক চরম আকার নিয়েছে। সুদীপ এবার উত্তর কলকাতা থেকে টিকিট পাবেন কিনা তা নিয়েও শুরু হয়েছিল জল্পনা। বরিষ্ঠ এই সাংসদের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তৃণমূল ছেড়ে সদ্য বিজেপিতে গিয়েছেন তাপস রায়। অভিযোগ তুলেছেন, তাঁর বাড়িতে ইডি তল্লাশির পিছনে হাত রয়েছে সুদীপের। তাপসের পাশাপাশি সুদীপের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষকেও। সুদীপের উত্তর কলকাতা কেন্দ্রে এবার কোনও মহিলাকে প্রার্থী করার দাবি তোলেন তিনি। অবশ্য এটাও জানান, দল সুদীপকে প্রার্থী করলে তাঁর হয়ে প্রচারে নামতে বাধা নেই তাঁর। যদিও এইসব বিতর্কে দাড়ি টেনে তৃণমূল সূত্রে যা খবর, এবার সুদীপের দিকেই পাল্লা ভারি।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়: জাতীয় রাজনীতিতে অন্যতম পরিচিত মুখ আইনজীবী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় । ৬৭ বছর বয়সী কল্যাণ ২০০৯ সাল থেকে শ্রীরামপুরের সাংসদ। নিজের সংসদীয় কেন্দ্রকে চেনেন হাতের তালুর মতো। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়ের ‘মিমিক্রি’ করে ব্যাপক বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন। তা সত্ত্বেও আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বর্ষীয়ান অভিজ্ঞ নেতার উপর ফের ভরসা রাখতে পারে তৃণমূল বলে শোনা যাচ্ছে।
সৌগত রায়: তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম প্রবীণ নেতা দমদমের সাংসদ সৌগত রায়। ৭৭ বছর বয়সি এই নেতা দেড় দশক ধরে সংসদীয় রাজনীতিতে দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন। মনমোহন সিংয়ের সরকারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও ছিলেন তিনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বয়সের ভার ও নবীন-প্রবীণ টানাপোড়েনে এবার লোকসভায় টিকিট পাবেন কিনা তা নিয়ে নিজেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, “জানি না দল কাকে মনোনয়ন দেবে, যদি আমায় দেয়, আমি জিততে পারব কি না জানি না।” যদিও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ভরসার ‘দাদা’ সৌগত রায় এবারও টিকিট পেতে চলেছেন বলেই খবর।
কাকলি ঘোষ দস্তিদার: চিকিৎসক তথা রাজনীতিবিদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার তৃণমূলের অন্যতম দাপুটে নেত্রী হিসেবে পরিচিত। ২০০৯ সাল থেকে সংসদীয় রাজনীতিতে দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন বারাসতের এই সাংসদ। জাতীয় স্তরে শোরগোল ফেলে দেওয়া বিভিন্ন ঘটনার সময়ে দলীয় তরফে যে প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছিল, তার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। সংসদের অন্দরেও সুবক্তা হিসেবে পরিচিত ৬৪ বছর বয়সি কাকলি ঘোষ দস্তিদার। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসত কেন্দ্রে এবার কাকলিতেই ভরসা রাখতে পারে দল।
[আরও পড়ুন: ব্রেকফাস্টে ভাত চেয়ে কী পেলেন শাহজাহান? সিবিআইয়ের খাঁচায় কেমন আছেন সন্দেশখালির ‘বাঘ’?]
মহুয়া মৈত্র: অত্যন্ত সুবক্তা তথা সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় রাজনীতিতে অন্যতম বিতর্কিত নেত্রী কৃষ্ণনগরের প্রাক্তন সাংসদ মহুয়া মৈত্র। ২০১৯ সালে প্রথমবার সাংসদ হন ৪৯ বছর বয়সি এই নেত্রী। তবে মেয়াদ শেষের ঠিক আগে সংসদে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন মামলায় গত বছর ডিসেম্বরে সাংসদ পদ হারিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, দুবাইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে উপহার এবং নগদ টাকা নিয়ে সংসদে শিল্পপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছিলেন। যদিও প্রাক্তন সাংসদের দাবি, আদানিদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার জন্য ষড়যন্ত্র করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তিনি যে আবারও ফিরে আসবেন সে হুঁশিয়ারিও দেন। গোটা বিতর্কে গোড়া থেকে দল পাশে না থাকলেও পরে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পক্ষে মুখ খোলেন। নদিয়া জেলা রাজনীতিতেও মহুয়ার বিরুদ্ধে নানা কারণে ক্ষোভ রয়েছে নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে। কিন্তু সংসদে তাঁর স্পষ্টবাদী অবস্থান নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মুখ খুলে বিজেপিকে কোণঠাসা করার উদাহরণ গড়েছেন মহুয়া। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এবারও কৃষ্ণনগর থেকে তাঁকে দল টিকিট দিতে চলেছে বলে খবর।
মালা রায়: দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত মালা রায়। ২০১৯ সালে দক্ষিণ কলকাতা থেকে তৃণমূলের টিকিটে সাংসদ হন। সাংসদ হওয়ার পাশাপাশি ৮৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মালা রায় কলকাতা পুরসভার চেয়ারপার্সনও। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটেই লড়াইয়ে নামতে পারেন তিনি।
দেব: টলিউডের সুপারস্টার দীপক অধিকারী ওরফে দেব তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে প্রথম লোকসভার সাংসদ হন ২০১৪ সালে ঘাটাল কেন্দ্র থেকে। অত্যন্ত স্বচ্ছ ভাবমূর্তির দেব একাধিকবার রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াতে চাইলেও তাঁর ইচ্ছা মঞ্জুর করেননি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৯ সালে ফের এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ হন তিনি। শেষ অধিবেশনে সংসদে দেবকে বলতে শোনা যায়, এটাই হয়তো লোকসভায় তাঁর শেষ বক্তব্য। যার জেরে তাঁর রাজনৈতিক সন্ন্যাসের জল্পনা আরও তীব্র হয়। কিন্তু সেই জল্পনা তেমন পালে বাতাস পায়নি। বরং কেন্দ্রের দরজায় বছরের পর বছর ধরে উপেক্ষিত থাকা ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ রাজ্যের খরচে বানানোর সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেবকে পাশে নিয়েই এই ঘোষণা করেন তিনি। স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলে যে দেবকে ছাড়তে চান না নেত্রী। দাড়ি পড়ে দেবের রাজনীতি থেকে সন্ন্যাসের জল্পনায়। এবারও ঘাটাল থেকেই তৃণমূলের টিকিটে দেবের প্রার্থী হওয়া কার্যত নিশ্চিত।
শতাব্দী রায়: তারকা সাংসদ হিসেবে লোকসভা নির্বাচনে বীরভূম কেন্দ্রে আরও একবার শতাব্দীতেই ভরসা রাখতে চলেছে তৃণমূল, এমনটাই জানা যাচ্ছে দলীয় সূত্রে। ২০০৯ সালে প্রথমবার তৃণমূলের টিকিটে এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ হন শতাব্দী রায়। প্রায় দেড় দশকের রাজনৈতিক জীবনে খুব একটা বিতর্কে না এলেও শোনা যায় বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রতর সঙ্গে খুব একটা সদ্ভাব ছিল না তাঁর। তাতে অবশ্য সমস্যা কিছু হয়নি খোদ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর উপর ভরসা রেখেছেন প্রতিবারই। বর্তমানে অনুব্রত জেলবন্দি। এই পরিস্থিতিতে বীরভূম জয় অন্যতম চ্যালেঞ্জ তৃণমূলের কাছে। সেখানে আসন্ন নির্বাচনে বীরভূম কেন্দ্রে শতাব্দীর বিকল্প হিসেবে কাউকে ভাবতেই চায় না ঘাসফুল শিবির।
মিমি চক্রবর্তী: জনপ্রিয় টলিউড অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী (Mimi Chakraborty)। ২০১৯ সালে যাদবপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিটে প্রথমবার সাংসদ হন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে সোশাল মিডিয়ায় নিজের কাজের খতিয়ান দিয়ে সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিতে চান এই অভিনেত্রী সাংসদ। রাজনীতি ছেড়ে পুরোপুরি অভিনয় জগতে ফিরতে চেয়েছিলেন তিনি। যদিও মিমি চক্রবর্তীর রাজনীতি ছাড়ার সে আবেদন মঞ্জুর করেননি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। জানা যাচ্ছে, এবারও লোকসভা নির্বাচনে টিকিট পেতে চলেছেন তিনি। তবে যাদবপুরের পরিবর্তে এবার হুগলি কেন্দ্র থেকে টিকিট পেতে পারেন তিনি।