অতুলচন্দ্র নাগ, ডোমকল: চাকরি পাচ্ছিলেন না। বাধ্য হয়ে শুরু করেছিলেন টেলিফোন বুথ। ভাতশালা এলাকায়। কিন্তু তাতেও সংসার চলে না। তার পর ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে শুরু করলেন মুড়ির মিল। তার পর ধাপে ধাপে উন্নতি ডোমকলের বিধায়ক জাফিকুল ইসলামের।
বছর ১৫ আগেও তেমনভাবে পরিচিতি ছিল না তাঁর। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাফিকুল। তাঁরা তিন ভাই। তিনি মেজো। স্নাতক হওয়ার পর চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছেন, কিন্তু পাননি। কিন্তু তিনি মুড়ি মিলের ব্যবসায় আটকে থাকার মানুষ ছিলেন না। মাঝখানে কিছুদিন ধর্মীয় প্রচারে মনোনিবেশ করেছিলেন। জাফিকুলের কথায়, সেটা অল্পদিনের জন্য। কিন্তু তার পরেই কোথা থেকে কি হল তার সূত্র পাওয়া যায়নি। কিন্তু তার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় বাড়ির কাছেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একটি বিএড কলেজে। সেই যে শিক্ষাজগতে প্রবেশ তার পর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।
একের পর এক সাফল্যে বিএড, ডিএড কলেজের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানের গোবিন্দপুরে ও তাঁর নিজের বাড়ির কাছে বিএড-ডিএড মিলিয়ে সাতটি কলেজ আছে তাঁর মালিকানাধীন। এছাড়াও রয়েছে একটি করে ফার্মাসিস্ট ও পলিটেকনিক কলেজও। বিধায়কের একটি পেট্রল পাম্প আছে ডোমকলেই। সব মিলিয়ে ডোমকলে প্রচার, তিনি প্রায় একশো কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। নখানা কলেজের মালিক হলেও তখন কোনও সক্রিয় রাজনীতি করতেন না জাফিকুল ইসলাম। তবে তিনি জানান ব্যক্তি জীবনে কংগ্রেস সমর্থক ছিলেন।
[আরও পড়ুন: কথা শুনছে না প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ! কোপে সভাপতি, ৪ ঘণ্টা ডেডলাইন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের]
২০১১ সালে রাজ্যে বামফ্রন্টের পতনের পর ২০১৫ সালে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন। আর সেই যোগদানের ফলে ধীরে ধীরে তার রাজনৈতিক ভাগ্যও খুলে যায়। ২০১৭ সালে ডোমকল নতুন পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। শুরু হয় তার রাজনৈতিক উত্থান। কাউন্সিলরদের বিক্ষোভের জেরে তৎকালীন চেয়ারম্যান সৌমিক হোসেন অপসারিত হন। তাঁকে অপসারণের পর নতুন চেয়ারম্যান হন জাফিকুল। পরে ২০২১ সালে ডোমকল থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি একাধারের বিধায়ক, আবার ডোমকল পুরসভার প্রশাসকও। তাই নয় জাফিকুলকে ছাড়া ডোমকলে তৃণমূলের কোনও রাজনৈতিক আলোচনা বা কর্মসূচি সম্পূর্ণ হয় না।
এহেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতার বাড়িতে বৃহস্পতিবার সকালে হঠাৎ করেই সিবিআই হানায় যারপর নাই বিস্মিত ডোমকলের মানুষ। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে যোগ সন্দেহে ডোমকলের তৃণমূল বিধায়ক জাফিকুল ইসলামের বাড়িতে এদিন সকাল ন’টা নাগাদ কোনও নোটিস ছাড়াই হানা দেন সিবিআই আধিকারিকরা। শুধু বাড়িতে নয়, একই সঙ্গে তাঁর বাড়ি সংলগ্ন ও একটু দূরে থাকা বিএড কলেজগুলিতেও তল্লাশি চালিয়েছে। আর দিনভর মুর্শিদাবাদ জেলায় পাল্লা দিয়ে চলেছে জল্পনা। বিজেপির জেলা সভাপতি সাখারভ সরকার জানান, “এই তো সবে শুরু। এর পর আরও চমক রয়েছে। বড়ঞা, ডোমকলকে দিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার দুই সীমানা ঘেরা হয়েছে। এর পর বহরমপুরেও ধরা হবে।” এদিকে, সিপিএমের ডোমকল জোনাল কমিটির সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান রানা জানান, “নিয়োগ দুর্নীতিতে তৃণমূলের নেতারা জড়িত। তার জন্যই জাফিকুল ইসলামের বাড়িতে সিবিআই হানা।’’ তবে তৃণমূলের নেতারা একে প্রতিহিংসা বলে দাবি করেছেন।