দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: অসুস্থতা থাবা বসিয়েছে শরীরে। সক্রিয় রাজনীতি থেকে খানিকটা দূরে সরে যাচ্ছিলেন বেশ কয়েকদিন ধরে। ফলত রাজ্যের মন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও একুশের বিধানসভা নির্বাচনে (WB Assembly Election) আর টিকিট পাননি একদা দাপুটে বাম নেতা তথা বর্তমানের বর্ষীয়ান তৃণমূল বিধায়ক আবদুর রেজ্জাক মোল্লা (Razzak Molla)। তবে টিকিট না পাওয়ায় যতটা আহত হয়েছিলেন, তার চেয়ে বেশি অভিমান হয়েছিল, প্রাক্তন কিংবা বর্তমান দলের কেউ তাঁর খোঁজখবর না নেওয়ায়। সাতাত্তর বছরের রেজ্জাক মোল্লা বেশ অসুস্থ। অথচ দলের সহকর্মীরা কেউ তাঁর সামান্য খবরটুকুও নেননি।এবার তাঁর মান ভাঙাতে আসরে নামলেন ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল (TMC) প্রার্থী তথা রেজ্জাকের একদা ছায়াসঙ্গী শওকত মোল্লা। রবিবার তাঁর বাড়ি গিয়ে দেখে এলেন শওকত। তাতেই খুশি ভাঙড়ের বর্ষীয়ান তৃণমূল বিধায়ক।
বাম আমলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকার রাজনীতি যখন নিয়ন্ত্রিত হতো রেজ্জাক মোল্লাদের হাত ধরে, সেসময় তাঁর ডান হাত ছিলেন শওকত মোল্লা। দীর্ঘদিন ধরে রেজ্জাকের ছত্রছায়ায় রাজনীতি করেছেন শওকত। ২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর প্রথমে শওকতই যোগ দেন তৃণমূলে। তার কিছুদিন পর যোগ দেন রেজ্জাক। ২০১৬ সালে ক্যানিং পূর্ব থেকে শওকত মোল্লা এবং ভাঙড় থেকে রেজ্জাক মোল্লা তৃণমূলের টিকিটে জিতে বিধায়ক হন।শওকত মোল্লা এখন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অতি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ভাঙড় থেকে জিতে রেজ্জাক মোল্লা রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তরের মন্ত্রী হন। কিন্তু এবারের ভোটে টিকিট পাননি বছর সাতাত্তরের রেজ্জাক। তাঁর কথায়, ”আমি রিটায়ার করে গিয়েছি।”
[আরও পড়ুন: নন্দীগ্রাম দিবসে ‘ভূমিপুত্র’ শুভেন্দুকে এলাকায় ঢুকতে না দেওয়ার হুমকি, চরম উত্তেজনা]
অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন নিউটাউনে ছেলের বাড়িতে ছিলেন রেজ্জাক মোল্লা।অভিমান হয়েছিল। পুরনো দল সিপিএম কিংবা বর্তমানের তৃণমূল – সকলের কাছেই ব্রাত্য হয়ে গিয়েছেন বলে মনে করছেন। দিন দুই আগে বাড়িতে ফিরে পরিবারের কাছে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ”তৃণমূল নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত, আমার খোঁজ নেবে কে?”
[আরও পড়ুন: আজ একাধিক জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা, সোমবার থেকেই চড়বে তাপমাত্রার পারদ]
সেই মান ভাঙাতেই রবিবার সকালে পূর্বসূরির বাড়িতে গেলেন শওকত মোল্লা। রবিবার দুর্গাপুর অঞ্চলের বাঁকড়িতে তাঁর বাড়ি যান ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক তথা প্রার্থী। সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে শওকত বলেন, ”ব্যক্তিগত সম্পর্কের সূত্রেই এসেছি। কিন্তু যেহেতু আমি বিধায়কও, তাই রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতাও আছে।” সূত্রের খবর, ক্যানিং পূর্বের প্রার্থী শওকতকে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে নিজে প্রচারে থাকতে না পারলেও প্রাণভরে আশীর্বাদ করছেন যাতে শওকত ভোটে জিতে ফের বিধায়ক হন। রেজ্জাকের দুই প্রাক্তন সহকর্মী, তাঁর সমবয়সী সুভাষ নস্কর এবং কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় লড়ছেন এই জেলারই দুই কেন্দ্র থেকে, বাম প্রার্থী হয়ে। সর্বান্তকরণে তৃণমূলের জয় চাইলেও প্রাক্তন দুই সতীর্থকেও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রেজ্জাক মোল্লা।