সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বিহারে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে মৃত ও জখম শ্রমিকের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে সোমবার মোট আট লক্ষ টাকা ওই পরিবারগুলির হাতে তুলে দেন রাজ্যের শিশু ও নারী কল্যাণ এবং সমাজ কল্যাণ বিভাগের মন্ত্রী শশী পাঁজা ও তৃণমূল কংগ্রেসের সাংস্কৃতিক শাখার প্রধান তথা বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী (Raj Chakraborty)। তাঁদের পাশে পেয়ে আপ্লুত পরিবারগুলি।
শুক্রবার বিহারের (Bihar) পাটনার ফতুয়াতে বজ্রপাতে মারা যান পুরুলিয়ার চারজন। জখম হন দু’জন। রবিবার মৃতদের দেহ ফেরে গ্রামে। সোমবার মৃত যমুনা ও কানাইয়া সিংয়ের পরিবারের হাতে তিন লক্ষ টাকা তুলে দেওয়া হয় তৃণমূলের তরফে। মৃত কৌশল দেবীর পরিবারকে দেওয়া হয়েছে দু’লক্ষ টাকা। মৃত সরস্বতী সিংয়ের পরিবারকে আড়াই লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, তার মা মালা সিংহ জখম হয়ে বলরামপুরের বাঁশগড় ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। তাঁর শরীরের একটা অংশ অবশ হয়ে গিয়েছে। ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছেন জখম ভোলা সিংহ নামে এক কিশোরও। তার পরিবারের হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয় এদিন। শাসক দলের তরফে এই আর্থিক সাহায্য ছাড়াও রাজ্য সরকারের তরফে দু’লক্ষ টাকার চেকও তাঁদের হাতে তুলে দেবে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। এদিন মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “বিহারে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওই সরকারের তরফে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। কিন্তু আমাদের দল, সরকার মানবিকতার পরিচয় দিয়ে আমাদেরকে এখানে পাঠিয়েছে। আমাদের সঙ্গে দলের জেলা নেতৃত্ব ও জনপ্রতিনিধিরাও রয়েছেন। আমরা দলের তরফে আর্থিক সাহায্য তুলে দিলাম। এরপরই পরিবারগুলি রাজ্য সরকারের তরফেও আর্থিক সহায়তা পাবেl” তৃণমূল কংগ্রেসের সাংস্কৃতিক শাখার প্রধান তথা বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী বলেন, “এই পরিবারগুলির পাশে আমাদের দল ও সরকার রয়েছেl তাদের যাতে কোনও সমস্যা না হয় তা দেখা হচ্ছে।”
[আরও পড়ুন: নিউটাউন এনকাউন্টার: ভুল্লারদের সাহায্য? বসিরহাট থেকে আটক দাউদ-সহ মোট ৪]
বলরামপুরের এই পরিবার গুলির প্রায় ২০-২৫ জন সদস্য মাসখানেক আগে পাটনার ফতুয়ায় যান। তারা নিজেরা প্লাস্টিকের ফুল প্রস্তুত করে তা ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন। এভাবেই ফি মাসে তারা সাত-আট হাজার টাকা রোজগার করে থাকেন। গত শুক্রবার ফতুয়ায় মুষলধারে বৃষ্টির সময় স্টেশনের কাছে একটি গাছের তলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন ওই ছ’ জন। সেখানেই বজ্রপাতে চার জনের মৃত্যু হয়। জখম হন দু’জন। মৃতদের নালন্দা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়। পরে মৃতের পরিবারের সদস্যরা সেখানে গেলে তাদের হাতেই দেহগুলি তুলে দেয় বিহার পুলিশ। রবিবার দুটি অ্যাম্বুল্যান্সে করে দেহগুলিকে গ্রামে নিয়ে আসে পরিজনরা।
বানজারা সম্প্রদায়ের এই পরিবারগুলি প্রায় ৫০ বছর ধরে এই গ্রামে বসবাস করছে। কিন্ত তাদের সেভাবে ঘর নেই। ত্রিপলকে ছাউনি হিসেবে ব্যবহার করে কোনওভাবে দিন গুজরান করে। এদের মধ্যে অধিকাংশ জনের ভোটার, আধার, রেশন কার্ডও নেই। এদিন সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলরামপুরের বিডিওকে নির্দেশ দেন, “এই পরিবারগুলির সমস্যা কোথায়, তার তালিকা তৈরি করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। এই কাজগুলি না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত আমার সঙ্গে যোগাযোগে থাকবেন।” ভোটার, আধার, রেশন কার্ড ছাড়াও এই পরিবার গুলির শিশুরা অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পের সুবিধা পাবেl সেইসঙ্গে বাংলা আবাস যোজনাতেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।