দীপঙ্কর মণ্ডল: অধ্যাপক বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে ফেরার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বড় চমক। বেহালা পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হল রত্না চট্টোপাধ্যায়কে। পরিবর্তে দায়িত্বে আনা হয়েছে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এক বরো চেয়ারম্যানকে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, ঘর ওয়াপসির রাস্তায় শোভনের জন্য ফুলের পাপড়ি বিছিয়ে দিল তৃণমূল।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন বৈশাখী। মিল্লি আল আমিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষাকে এক ঘণ্টারও বেশি সময় দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোধ্যায়। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ও তৃণমূলের প্রাক্তন হেভিওয়েট মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিস্তারিত খোঁজ নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। চূড়ান্ত ব্যস্ততার মাঝে বৈশাখীর সঙ্গে লম্বা বৈঠকের পর তৃণমূলের একটি শিবির মনে করছে, শোভনের ‘ঘর ওয়াপসি’ শুধু সময়ের অপেক্ষা। সেই ধারনা যে সঠিক ছিল তা বোঝা গেল শুক্রবার রাতে। শনিবার বেহালা পশ্চিমে ‘জলযোগে যোগাযোগ’ অনুষ্ঠানে যাননি রত্না। তিনি নিজে শোভনের বিধানসভা এলাকায় যে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিলেন, দলের শীর্ষ মহল থেকে তা স্থগিত রাখার নির্দেশ যায়।
[আরও পড়ুন: শোভনের ‘ঘর ওয়াপসি’ কি সময়ের অপেক্ষা? নবান্নে বৈশাখীর কাছে কাননের খোঁজ মমতার]
শুক্রবার রাতেই দল জানিয়ে দেয় রত্নাকে আর ওই কেন্দ্রে পর্যবেক্ষক রাখা হবে না। কলকাতার ১৩ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষকে দায়িত্ব নিতে বলা হয়। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রত্নাকে সরিয়ে যাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিনি বিধানসভা ভোটে পরপর দু’বার শোভনের নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেনন। শোভনের সুপারিশেই ১২০ নম্বর ওয়ার্ডের এই কাউন্সিলরকে বরো চেয়ারম্যান করেছিল দল। দিল্লি যাত্রার পরও এই কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল প্রাক্তন মেয়রের। দলের প্রথম সারির উজ্জ্বল সহকর্মীকে ফেরত পেতে তৃণমূলের অনেকেই উন্মুখ। প্রাক্তন মেয়রের বিধানসভা কেন্দ্রে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পাওয়া সুশান্ত সে বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে নিজের খুশির কথাও গোপন করেননি বরো চেয়ারম্যান। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, তৃণমূল মহাসচিব এবং দলের যুব সভাপতির অফিস তাঁকে নতুন নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
নবান্নে গিয়ে নিজের কলেজের সমস্যার কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন বৈশাখী। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কাছে শোভনের খোঁজ নিয়েছিলেন। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেও মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে ভাইফোঁটা নিতে যান শোভন। তখনই তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। কিন্তু এসবের মাঝে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি নিজে শোভনের হয়ে মাঠে নামেন। মুরলী ধর সেন লেনের নেতাদের শোভনকে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ আসে দিল্লি থেকে। কিন্তু ওয়াকিবহাল মহল জানে, প্রাক্তন মেয়রের হৃদয়ে সর্বোচ্চ স্থান রাখা আছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য। আর তাই ফের তাঁকে নবান্নে দেখতে পাওয়ার জল্পনা শুরু হয়েছে। রত্নাকে সরিয়ে শোভন ঘনিষ্ঠকে দায়িত্বে আনা সেই জল্পনাকে অনেকটা প্রতিষ্ঠিতও করেছে। মোবাইল পরিষেবা সীমার বাইরে থাকায় রত্নার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সদ্য মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে ফেরা অধ্যাপক বৈশাখী তৃণমূলের নয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি শুধু বলেন, “বাংলাজুড়ে একটাই নাম। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কে দায়িত্বে এল বা গেল তাতে কিছু যায় আসে না।”
[আরও পড়ুন: ‘পরিপক্ক রাজনীতিবিদকে জোর করে কাজ করানো যায় না’, শোভনকে খোঁচা দিলীপের]
The post মমতা-বৈশাখী বৈঠকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাঁটাই রত্না, শোভনের ‘ঘর ওয়াপসি’ কি আসন্ন? appeared first on Sangbad Pratidin.