shono
Advertisement

কেন্দ্রের বিনামূল্যে রেশন আদপে জালিয়াতি! তোপ তৃণমূলের

কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার করবে রাজ্যের শাসক দল।
Posted: 09:21 PM Dec 27, 2022Updated: 09:23 PM Dec 27, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: বিনামূল্যে রেশনের নামে নিজেদের টাকা বাঁচিয়ে মানুষকে প্রতারণা করছে কেন্দ্র সরকার। যাকে সরাসরি কেন্দ্রের ‘রেশন জালিয়াতি’বলে তোপ দাগল তৃণমূল কংগ্রেস। এ নিয়ে তারা লাগাতার প্রচারেও যাবে বলে জানিয়ে দিয়েছে মঙ্গলবার। প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা বা পিএমজেকেএওয়াই প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা করেছে কেন্দ্র সরকার। সোমবারই এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে খাদ্যমন্ত্রক। তার আগে শুক্রবার রাতে কেন্দ্রের তরফ থেকে রেশনে বিনামূল্যে নতুন প্রকল্প ঘোষণা করা হয়। যার নাম ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব অন্ন সুরক্ষা যোজনা’। এতেই ২০২৩-এর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিনামূল্যে রেশন বিলি করবে বলে ঘোষণা করেছে কেন্দ্র।

Advertisement

রেশনে আগামিদিনে খরচ কমানোই লক্ষ‌্য কেন্দ্র সরকারের। এ সংক্রান্ত গোপন ক‌্যাবিনেট প্রস্তাব সামনে আসতেই বিষয়টা নিয়ে শোরগোল পড়ে। জানা যায়, বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার কৃতিত্বের প্রচারের সুযোগ কেন্দ্র হাতছাড়া করতে চাইছে না। তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, বাংলাকে নকল করে প্রকল্প ঘোষণা করে মানুষকে প্রতারণা করাই তাদের লক্ষ‌্য। দলের রাজ‌্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ কেন্দ্র সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে বলেছেন, “এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন বিনামূল্যে রেশন তারা একাই দিচ্ছে। হাততালি কোড়ানোর চেষ্টা। সাধারণ মানুষকে তারা ভাঁওতা দিচ্ছে। প্রতারণা করছে। যেটা নতুন শুরু হচ্ছে সেটা রেশন জালিয়াতি।” তাঁর কথায়, “আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ‌্যায় আগেই বিনামূল্যে রেশন চালু করেছেন। সেই প্রকল্পকেই নকল করছে কেন্দ্র। অন‌্যদিকে, বিপুল পরিমাণ টাকা বাঁচিয়ে মানুষকে বঞ্চনা করছে। আগে মানুষ যে রেশন পেত, তার পরিমাণ কমিয়ে কেন্দ্র টাকা বাঁচাতে চাইছে। এতে মানুষেরই ক্ষতি। মানুষকে নতুন মোড়কে যেটা বোঝানো হচ্ছে সেটা আসলে প্রতারণা।”

[আরও পড়ুন: রাহুল রাম, পাদুকা বইছে কংগ্রেস কর্মীরা! সলমন খুরশিদের মন্তব্যে চটে লাল বিজেপি]

২০২০-র মার্চ থেকে করোনার প্রকোপ সামনে আসার পর মাথাপিছু ৮০ কোটির কিছু বেশি মানুষকে দেশজুড়ে বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার কথা জানিয়েছিল কেন্দ্র। যা বন্ধ ঘোষণা করায় এই ডিসেম্বরেই মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এরই প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রায় সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলই। প্রথমত তাদের বক্তব‌্য, দেশে আবার যখন নতুন করে করোনার আশঙ্কা মাথাচাড়া দিচ্ছে, সেই সময়েই বাড়তি রেশন দেওয়ার প্রকল্প বন্ধ করলে গরিব মানুষের অসুবিধা হবে বলেই দাবি বিরোধিদের। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে ইতিমধ্যে রাস্তায় নামবেন বলে জানিয়েছেন রেশন ডিলাররা। অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলারস ফেডারেশন এদিনই জয়পুরে একটি বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা করেছে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়েছে, অতিরিক্ত রেশন দেওয়ার প্রকল্প বন্ধের প্রতিবাদে তাঁরা আগামী ১১ জানুয়ারি দিল্লিতে কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

উল্লেখ্য, নতুন যে ব্যবস্থায় ৮০ কোটি মানুষকে রেশন দেওয়া হবে, তাতে কেন্দ্র সরকারের ২ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীয়ুষ গোয়েল। কিন্তু তাদের গোপন ক‌্যাবিনেটের প্রস্তাব বলছে, আদতে কেন্দ্র সরকারের এই খাতে খরচের পরিমাণ বাড়বে নামমাত্রই। কারণ, পিএমজেকেএওয়াই বন্ধ করে দেওয়ায় বছরে সরকারের বছরে প্রায় ১ লক্ষ ৬৩ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। ফলে সামান্য কিছু খরচ করেই বিনামূল্যে কেন্দ্র সরকার রেশন দিচ্ছে এই বিষটিকে সামনে তুলে ধরে প্রচারে যাওয়াই কেন্দ্র সরকারের লক্ষ্য। কুণালের কথায়, ‘‘কেন্দ্র যদি মনে করে মানুষকে সুরাহা দিচ্ছে, তবে বলব সেটাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগে করে দিয়েছেন। কেন্দ্র মমতা বন্দ্যোপাধ‌্যায়ের মডেল নকল করবে, আবার মানুষকে প্রতারণা করবে। আবার এটা নিয়ে প্রচারও হবে। মানুষের সামনে আমরা এটা তুলে ধরা হবে।’’

[আরও পড়ুন: সরকারি কর্মীদের জন্য সুখবর, ভোটের আগে ১২ শতাংশ DA বাড়াল ত্রিপুরা সরকার]

পাশাপাশি আগামিদিনে দেশে জনগণনা হলে সেখানে দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা কমবে বলেই সমীক্ষায় উঠে এসেছে। সেই রিপোর্ট ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই জমা পড়ার কথা। তাকে মাথায় রেখেই কেন্দ্র সরকার আপাতত বিনামূল্যে রেশনের দেওয়ার সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ সাল পর্যন্ত ঘোষণা করেছে। স্বাভাবিকভাবেই তার পর রেশনের সুবিধাভোগী মানুষের সংখ্যা কমে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

রেশন ডিলারদের ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসুর অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্র সরকার মানুষকে না খাইয়ে মেরে ফেলার চক্রান্ত করছে। মানুষকে বোকা বানিয়ে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে। বরাদ্দ কমিয়ে নয়া প্রকল্পে গরিব মানুষকে বঞ্চনা করতে চাইছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার। এই প্রকল্পে গরিব মানুষ যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হবেন, তেমনই আমরাও ক্ষতির মুখে পড়ব। তাই আমরা প্রতিবাদের পথ নিয়েছি।’’ রেশন ডিলাররা প্রতি কুইন্টাল রেশন বিলি করলে অতিরিক্ত কমিশন পান। সেই সঙ্গে খাদ্যসামগ্রী শেষ হয়ে গেলে যে বস্তা পড়ে থাকে, তা বিক্রি করে অতিরিক্ত আয়ও হয়। কিন্তু প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের প্রাপ‌্য কমিশন থেকে বঞ্চিত হবেন তাঁরা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement