পুজোয় এবার নাটকীয় চোরাস্রোত। দক্ষিণ কলকাতার মেগাপুজো নাকতলা উদয়ন সংঘ পার্থশূন্য। মূল পৃষ্ঠপোষক পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)জেলবন্দি। আর তাঁর দীর্ঘ অনুগামী নাকতলার অন্যতম কর্তা বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত (Bappaditya Dasgupta) পুরোদস্তুর উলটোপথে। ‘‘গতবার থেকেই তো আমি নাকতলায় নেই।’’ – দিকে দিকে এই বার্তা দিয়ে হাল ধরেছেন কেন্দুয়ার শান্তি সংঘের পুজোর। অন্দরের যুদ্ধ ঢেকে নাকতলার সামনে একদিকে স্বমহিমায় থাকার চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি বাপ্পাদিত্যর সামনে এবার পুরনো পুজোকে ঝেড়ে ফেলে নতুন পুজোকে পরিচিতি দেওয়ার লড়াই। তাঁর নতুন পুজোর প্রস্তুতি দেখতে গিয়েই বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তর মুখোমুখি নব্যেন্দু হাজরা।
- কেন্দুয়া শান্তি সংঘের এবারের পুজোর থিম কী?
বাপ্পাদিত্য: এই পুজোর থিমের ট্যাগলাইন ‘জাগো বাংলা’। সুন্দরবনের উপর কাজ। শিল্পী ধীমান সাহা। এর বেশি এখনই কিছু বলব না। এবার যেহেতু ৪৯ বছর। সামনের বছরটাকে মাথায় রেখে এবার কাজ করা হচ্ছে। একেবারে বাংলার উপরে।
- এই পুজো ছাড়া আর কতগুলো পুজোর সঙ্গে আপনি যুক্ত?
বাপ্পাদিত্য: যেহেতু এই ওয়ার্ডের আমি পুরপ্রতিনিধি তাই অনেকগুলো পুজোর চেয়ারম্যান পদেই আমাকে রাখা হয়ে। কিন্তু আগে আমি সেরকম কখনওই কোনওটাতে সময় দিতে পারতাম না। গতবছর থেকেই এখানে আমি সময় দিচ্ছি। গতবছর থেকে টার্গেট ছিল এটাকে ধাপে ধাপে ৫০ বছরের লক্ষ্যে কীভাবে বড় করা যায় সেদিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
- নাকতলা উদয়ন সংঘের পুজোর চেয়ারম্যান ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন আপনিও। এই বছর কি আপনি ওই পুজোয় নেই?
বাপ্পাদিত্য: আমি গতবছর থেকেই ওই পুজোয় নেই।
- কারণটা কী? পার্থদার সঙ্গে কী মনোমালিন্য? কত বছর ধরে যুক্ত ছিলেন ওই পুজোয়?
বাপ্পাদিত্য: কিছুটা তো বটেই। আমি ১৮ বছর ধরে ওই পুজোর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ২০০৫ থেকে ওই পুজোটা করা। ওই পুজো ছাড়াটা খুবই বেদনার ছিল। তবু সরে এসেছি।
[আরও পড়ুন: Pushpanjali #ChantBangla: বাংলাতেই দেব পুষ্পাঞ্জলি, অঙ্গীকার করুক বাঙালিরা]
- পুজো থেকে সরে আসা নিয়ে পার্থদার সঙ্গে কথা হয়েছিল?
বাপ্পাদিত্য: হয়েছিল। উনি অনেকবারই আমাকে অনুরোধ করেছিলেন থাকার জন্য। কিন্তু নিজের কাছে নিজেকে জাস্টিফাই করার জন্যই বেরিয়ে এসেছি।
- এবছর পার্থদা নাকতলা উদয়নের পুজোতে নেই, জেলবন্দি। কী মনে হয়, এবার পার্থদার না থাকায় কি পুজো ধাক্কা খাবে?
বাপ্পাদিত্য: আমরা একটা জেনারেশন পুজোটা করতাম। পার্থদা চেয়ারম্যান ছিলেন ঠিকই। আমিও থাকতাম। কিন্তু পুজোটা তো ছেলেরাই করত। তাই পুজো পুজোর মতোই চলবে। যতটুকু বন্ধু-বান্ধবের থেকে খবর পেলাম, হয়তো সাময়িক কিছুটা ব্যাহত হয়ে থাকতে পারে। তবে একটা বড় পুজো নিজস্ব স্রোতেই চলবে।
- কোথাও একটা খারাপ লাগা কাজ করে? পার্থদার সঙ্গে তো অনেক স্মৃতি!
বাপ্পাদিত্য: গতবছর খুব খারাপ লেগেছিল। এবছর অতটা নয়। পুজোর সময় মেলামেশা, কথাবার্তা, আড্ডার জায়গা ছিল আমাদের। তাই খুব মিস করেছিলাম। খারাপ লাগাও ছিল। এবছর তো আমি নিজেই একটা পুজোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেলাম।
- পুজোয় পার্থদাকে নতুন জামা পাঠাবেন?
বাপ্পাদিত্য: কোনওদিনই পাঠাইনি। এবারও তাই প্রশ্নও আসছে না।
- মন্ত্রী থাকা এবং মন্ত্রী না থাকা একটা পুজোকে বড় করতে কতটা সাহায্য করে?
বাপ্পাদিত্য: পার্থদা ছিলেন। সঙ্গে আমরা সকলেই ছিলাম। নিজেরা ছোট থেকে তৈরি করেছিলাম। আমার মনে হয় না, খুব বড় ব্র্যান্ডের পুজোয় মন্ত্রী থাকা, না থাকাতে খুব ফারাক পড়বে। কারণ এটা একটা অন্য আঙ্গিক। প্রতিষ্ঠিত পুজোতে স্পনসর থেকে যায়।
[আরও পড়ুন: ফের ভারতসেরা বাংলার প্রকল্প, স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরিতে রাজ্যকে সেরার তকমা দিল কেন্দ্র]
- বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে সমস্যা?
বাপ্পাদিত্য: মনে হয় না। গতবার থেকে তো আমি বেরিয়ে এসেছি। কিছু তো সমস্যা হয়নি।
- অর্পিতা মুখোপাধ্যায় নাকতলা উদয়নের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ছিলেন। ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ঠিক করতে পার্থদা কি প্রভাব খাটাতেন?
বাপ্পাদিত্য: তেমন নয়। এটা ঠিক করার জন্য একটা কমিটি ছিল। তারা আলোচনা করেই ঠিক করত। অর্পিতা দু’বার ছিল। এছাড়াও প্রতিবার অনেক সেলিব্রিটিই ওখানে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হতেন।
- নাকতলা উদয়নে মুখ্যমন্ত্রী আসতেন উদ্বোধনে। এইবার আপনার পুজোয় কি আমন্ত্রণ জানাবেন মুখ্যমন্ত্রীকে?
বাপ্পাদিত্য: আমাদের লক্ষ্যটা সামনের বছর। যেহেতু ৫০ বছর। এখনই মুখ্যমন্ত্রী আসার মতো স্ট্যাচার এই পুজোর হয়নি। ওঁকে দিয়ে সামনের বছর যাতে সসম্মানে উদ্বোধন করাতে পারি, সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছি।
- গতবছর নাকতলা উদয়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন?
বাপ্পাদিত্য: উদ্বোধনের দিন যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী এসেছিলেন তাই গিয়েছিলাম।
- এবার যাবেন?
বাপ্পাদিত্য: প্রশ্নই ওঠে না।