স্টাফ রিপোর্টার: দিন বদলায়। সময় বদলায়। অধিনায়ক বদলায়। শুধু কেকেআর বদলায় না।
কেকেআর সমর্থকদের মননের গভীরে খোঁজ চালান। জনে জনে জিজ্ঞাসা করুন। আইপিএল যতটা তার বিজনেস এন্ডের দিকে এগোচ্ছে। যত প্লে অফ নিকটবর্তী হচ্ছে। তত যেন আতঙ্ক গ্রাস করছে সোনালি বেগুনি সমর্থকদের। কোনও ম্যাচে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সুপার ওভারে টেনে নিয়ে আপাত দুর্বল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জয়। কোনও ম্যাচে আবার চূড়ান্ত জঘন্য হার। ২০ ওভার ব্যাট করে ৮৪ উঠছে সাকুল্যে! আর যত এ সব হচ্ছে, যত নিত্যনতুন কাঁপুনিতে আক্রান্ত হচ্ছে নাইট শিবির, একটা সামগ্রিক আশঙ্কা বৃত্ত তৈরি হচ্ছে যে, এবার শেষ পর্যন্ত হবে তো? হবে তো প্লে অফ?
সত্যি বলতে, কাজটা সহজ নয়। কারণ এই মুহূর্তে দশটা ম্যাচ খেলে কেকেআরের পয়েন্টও সমান-দশ। কিন্তু আতঙ্কের বিষয় হল নেট রান রেট। যা শুধু মাইনাসে নয়। টুর্নামেন্টে খেলা আটটা টিমের মধ্যে সর্বনিম্ন (—০.৮২৮)। এই মুহূর্তে দু’টো টিমের সঙ্গে প্লে অফ যাওয়ার লড়াই চলছে কেকেআরের। প্রথমটা, কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। যাদের অপ্রতিরোধ্য দেখাচ্ছে সম্প্রতি। দ্বিতীয়টা, ডেভিড ওয়ার্নারের সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। দু’টো টিমেরই দশটা করে ম্যাচ খেলে পয়েন্ট ৮। এবং মহাষ্টমীর দিন এবারের আইপিএলে কেকেআরের প্লে অফ ভাগ্য কোনদিকে যাবে, একটা আঁচ পাওয়া যাবে। কারণ দু’টো মোক্ষম ম্যাচ পড়েছে আজ।
প্রথমটা, দুপুর সাড়ে তিনটে থেকে। যেখানে শ্রেয়স আইয়ারের দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে নামছে নাইটরা।
দ্বিতীয়টা, মহাষ্টমীরই রাতে। যেখানে কিংসের মুখোমুখি হচ্ছে সানরাইজার্স। অর্থাৎ, নাইটদের দুই প্লে অফ প্রতিপক্ষের একজন আজ এগোবে। একজন পিছিয়ে পড়বে।
[আরও পড়ুন : বোল্ট–বুমরাহ ম্যাজিকে লাইনচ্যুত চেন্নাই এক্সপ্রেস, কার্যত শেষ প্লে–অফে যাওয়ার আশা]
কিন্তু কে এগোবে, কে পিছোবে, সে সব প্রশ্ন তো পরে। মোক্ষম প্রশ্ন হল, কেকেআর নিজেরা কি পারবে অমিত শক্তিধর দিল্লিকে হারাতে? শক্তি বিচারে দেখতে গেলে রোহিত শর্মার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের চেয়েও এগিয়ে দিল্লি। ঋষভ পন্থও আবার ফিরে এসেছেন। কাগিসো রাবাডা আর আনরিখ নর্জির আগুনে বোলিং তাবড় ব্যাটসম্যানদের ধরাশায়ী করছে আইপিএলে। সেখানে আপাত রুগ্ন দেখানো নাইট ব্যাটিং কি পারবে রাবাডা-নর্জি নামক জোড়া ক্ষেপনাস্ত্রের মহড়া নিতে?
আশা কম। কারণ কেকেআরকে সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে টপ অর্ডার ব্যাটিং। শুভমান গিল মন্থর ব্যাটিং করছেন। রাহুল ত্রিপাঠি ওপেনিংয়ে নেমে সেই কবে ৮১ করেছিলেন, তার পর থেকে আর কোনও রান নেই। টম ব্যান্টনকে খেলানো হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু ভুল জায়গায়। চারে। নীতিশ রানা পরের পর ম্যাচে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও কেন যে খেলে চলেছেন, সেটা একমাত্র টিমই বলতে পারবে। অধিনায়ক বদলেও বিশেষ সুবিধে হয়নি। কারণ আরসিবি-র বিরুদ্ধে গত বুধবার যে ম্যাচে মাত্র ৮৪ তুলেছিল কেকেআর, ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছিল বিরাট কোহলিদের কাছে, সেই ম্যাচে লকি ফার্গুসনকে আনা হয় পাওয়ার প্লে শেষে। সাত নম্বর ওভারে। যিনি কিনা সানরাইজার্স ম্যাচে সুপার ওভার আর নির্ধারিত সময় মিলে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন! আরসিবির বিরুদ্ধে লকি এসেই উইকেট তোলেন। যার পর বলাবলি হচ্ছে, ম্যাচ হারতেই পারে টিম। কিন্তু তাই বলে জেতার কি কোনও ইচ্ছে থাকবে না?
[আরও পড়ুন : আইপিএলেই শেষ নয়, এবার বিগ ব্যাশ লিগেও খেলতে পারেন ধোনি]
খবরাখবরে আসা যাক। দিল্লি গত ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা পেসার নর্জিকে খেলায়নি। তিনি কেকেআরের বিরুদ্ধে খেললে দিল্লির বোলিং শক্তি যে বহুগুণ বেড়ে যাবে, কোনও সন্দেহ নেই। কেকেআর আবার গত ম্যাচ চোটের কারণে পায়নি আন্দ্রে রাসেলকে। দিল্লির বিরুদ্ধে তিনি নামবেন কি না, কে জানে? আর নামলেও বিশেষ লাভ হবে কি? যে রকম অফ ফর্মে আছেন!
ঘুরেফিরে যা দাঁড়াচ্ছে, দিল্লির বিরুদ্ধে জীবন-মৃত্যুর ম্যাচের আগে কেকেআর সংসারে উত্তর কম, প্রশ্ন বেশি।