অভিরূপ দাস: রাজ্যের কনিষ্ঠতম শিশুর করোনা (Corona Virus) জয়। মায়ের পেটেই যে ভাইরাসের খপ্পরে পড়েছিল একরত্তি। শুক্রবার সুস্থ হয়ে ফিরল নিজের বাড়িতে। জন্মের মাত্র ছ’দিন পরেই পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের এই শিশুর শরীরে মিলেছিল করোনার (COVID-19) অ্যান্টিবডি। ভাইরোলজিস্টরা বলেন, করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হতে গেলে কম-বেশি তিন সপ্তাহ সময় লাগে। তাহলে জন্মের মাত্র ছ’দিন পর কীভাবে একরত্তির শরীরে অ্যান্টিবডি?
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রবীর ভৌমিক জানিয়েছেন, মায়ের জঠরেই কোভিড পজিটিভ হয়েছিল শিশুটি। যা বিরলতম ঘটনা। তাঁর কথায়, “পরে আমরা মায়েরও অ্যান্টিবডি টেস্ট করাই। তিনি নিজেও আইজিজি পজিটিভ ছিলেন।” র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট করালে তবেই ধরা পড়ে এই ইমিউনোগ্লোবিউলিন জি বা আইজিজি। শরীরে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ থাকলে তবেই এই পরীক্ষা করেন চিকিৎসকরা। অসুখের উপসর্গ শুরুর সাত দিন পরে এই পরীক্ষা সম্ভব। আইজিএম পজিটিভ মানে, ওই ব্যক্তির শরীরে অতি সম্প্রতি ভাইরাস বাসা বেঁধেছে। অন্য দিকে আইজিজি পজিটিভ মানে, ওই ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি ছিল ৩-৪ সপ্তাহ আগে। যা হয়েছিল এই একরত্তিরও। অথচ এই টেস্টের ৩-৪ সপ্তাহ আগে সে ছিল মায়ের পেটে। পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের এই শিশুটির জন্ম থেকেই ছিল শ্বাসকষ্ট। প্রথমে তার চিকিৎসা শুরু হয় চণ্ডীপুরের একটি নার্সিংহোমে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় নিয়ে আসা হয় কোলাঘাটের নার্সিংহোমে। সে সময় শিশুটির ফুসফুসের অবস্থাও ভাল ছিল না। অক্সিজেন স্যাচুরেশন তলানিতে।
[আরও পড়ুন: কলকাতায় অতিমারী নয় করোনা, মৃত্যু কমলেও সতর্ক স্বাস্থ্যদপ্তর]
মাত্র ছ’দিনের শিশুকে বাঁচিয়ে আনা ছিল চ্যালেঞ্জ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সদ্যোজাতর ফুসফুস বেলুনের মতো ফুলে গিয়েছিল। ডা. প্রবীর ভৌমিকের কথায়, “সুচ ফুটিয়ে ড্রেনিং পদ্ধতিতে ফুসফুস থেকে তরল বের করা হয়।” দু’বার রক্ত দিতে হয়েছে। টানা দু’বার প্লাজমা থেরাপি চলেছে। ইনভ্যাসিভ ভেন্টিলেশনে ছিল সাতদিন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, করোনার বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেলে যে ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইঞ্জেকশন দিতে হয় তাও প্রয়োগ করতে হয়েছে এই একরত্তির ক্ষেত্রে।
এইটুকু শিশুর মূল খাদ্য মাতৃদুগ্ধ। ডা. প্রবীর ভৌমিক জানিয়েছেন, বাচ্চাটি স্তনপান করার অবস্থায় এলে আমরা মা’কে ডেকে পাঠাই। আস্তে আস্তে মাতৃদুগ্ধ শুরু করা হয়। অন্যান্য করোনারোগীদের কাছে এই সদ্যোজাতকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরতে চান ডা. ভৌমিক। তাঁর কথায়, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন। মাস্ক পরুন। তবে অযথা ভয় পাবেন না। মাতৃজঠরে যে করোনা আক্রান্ত হয়েছিল সেও সুস্থ হয়ে উঠেছে। শুক্রবার বাড়ি যাওয়ার দিন শিশুটির বয়স ৩৬ দিন। যদিও মা সরস্বতী মাইতি বলছেন, “নতুন জীবন পেল আমার ছেলে। আজকের দিনটাকেই জন্মদিন হিসেবে পালন করব আমরা।”