অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: এক বুক স্বপ্ন নিয়ে উড়ে গিয়েছিলেন টোকিও। ভেবেছিলেন, পদক জিততে না পারলেও অন্তত অনেক দূর পৌঁছবেন। কিন্তু প্রাথমিক রাউন্ডেই স্বপ্নভঙ্গ হল বাংলার জিমন্যাস্ট প্রণতি নায়েকের (Pranati Nayak)। যোগ্যতা অর্জনের রাউন্ডে দুর্দান্ত লড়াই করেও দ্বাদশ স্থানে শেষ করায় এবারের মতো অলিম্পিক সফর শেষ হল তাঁর।
[আরও পড়ুন: Tokyo Olympics Day 3: জয় দিয়ে সফর শুরু সিন্ধুর, প্রথম রাউন্ডে হেরে কটাক্ষের মুখে Sania]
নিজের সেরাটা উজার করে দিয়েও ফাইনাল রাউন্ডে পৌঁছতে পারলেন না প্রণতি। দীপা কর্মকারের মতো অলিম্পিকে প্রথম পাঁচে ওঠার স্বপ্ন আপাতত অধরাই রইল। রবিবার মহিলাদের আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্সের যোগ্যতা অর্জনের লড়াইয়ের অলরাউন্ড পর্বে তাঁর স্কোর ৪২.৫৬৫। এর মধ্যে সর্বোচ্চ পয়েন্ট পেয়েছেন ভল্টে। ১৩.৪৬৬। পাশপাশি ফ্লোরে ১০.৬৩৩, আনইভেন বারে ৯.০৩৩ এবং ব্যালেন্স বিমে ৯.৪৩৩ পয়েন্ট ঝুলিতে ভরেন তিনি। সব মিলিয়েই তাঁর লড়াই শেষ হয় দ্বাদশ স্থানে।
মেয়ে প্রাথমিক রাউন্ড থেকে বিদায় নেওয়ায় বাবা-মায়ের খানিকটা মন খারাপ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বেশি আক্ষেপ নিশ্চিন্তে মেয়ের খেলা দেখতে না পারায়। পিংলার করকাই গ্ৰামে প্রণতির বাড়িতে সকাল থেকেই প্রতিবেশী ও প্রিয়জনদের ভিড় লেগে যায়। সকলের নজর ছিল টিভির পর্দায়। সকাল সাড়ে ছ’টায় নামবে ঘরের মেয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্য। মাহেন্দ্রক্ষণ আসতেই টিভিতে কেবল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন বাধ্য হয়েই প্রণতির বাবা শ্রীমন্ত নায়েক ও মা প্রতিমা নায়েক-সহ সকলে মিলে পাশে প্রণতির মামার বাড়ি বিশ্বনাথ মাইতি মালাকারের বাড়িতে হাজির হন। যদিও তার আগে প্রণতির বাবা শ্রীমন্তবাবু বারবার কেবল অপারেটরকে ফোন করে অনুরোধ জানাতে থাকেন সংযোগ দিতে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। কারণ কোন চ্যানেলে মেয়ের খেলা দেখাচ্ছে, সেটাই সঠিকভাবে কেউ বলতে পারছিলেন না। তখন প্রণতির মামাতো ভাই জানান, তাঁদের বাড়ির টিভিতে দেখা যাচ্ছে। সেটা শুনেই সকলে দৌড়ে যান বিশ্বনাথবাবুর বাড়িতে। আর এই বাড়িতে বসেই সকাল ৬টা ৪৮ মিনিটে প্রথমবারের জন্য অলিম্পিকের আসরে টিভির পর্দায় আদরের মেয়ে বুবুনকে দেখে জলে ভেজে চোখের কোণ।
প্রণতির বাবা বলছিলেন, “খারাপ একটু লাগছে ঠিকই। পরের রাউন্ডে উঠতে পারলে আরও ভাল লাগত। কিন্তু হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই। এতো সবে শুরু। জীবনে ও আরও অনেক সুযোগ পাবে।” পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়াই অলিম্পিকের মঞ্চে পৌঁছনোও কি মুখের কথা!