কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: ভোট মিটে যাওয়ার পর ফের বদলি প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে ট্রান্সফার পাওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের রিলিজ ও জয়েনিংয়ের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে রাজ্যের সকল ডিআইদের নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। এই প্রক্রিয়া পুনরায় চালু হতে চলেছে বলে খুশির আবহাওয়া বদলি প্রার্থীদের মধ্যে।
শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, বিধানসভা নির্বাচন (West Bengal Election) ঘোষণার আগে বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী ট্রান্সফার অর্ডার পেলেও রিলিজ ও জয়েন হতে পারেননি। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে নির্বাচন কমিশন (EC) মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট চালু করায় ট্রান্সফার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। ট্রান্সফারের রেকমেন্ডেশন অর্ডার নিয়েও নতুন স্কুলে যোগদান করতে না পারায় সমস্যায় পড়েন অনেকেই। দপ্তরের কর্মচারীরা ভোটের কাজে নিযুক্ত থাকায় ও এমসিসি চালুর জন্যই মূলত এই প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। ভোটের রেজাল্টের পরেই নির্বাচন কমিশন মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট অর্থাৎ আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি তুলে নেওয়ার নির্দেশিকা প্রকাশ করে। এরপর মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে সোমবার ট্রান্সফার পাওয়া সকলের রিলিজ ও জয়েনিং এর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে রাজ্যের সকল ডিআইদের নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশিকা প্রকাশের পর এবার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা পুরনো স্কুলে রিলিজ নিয়ে নতুন স্কুলে জয়েন করতে পারবেন।
[আরও পড়ুন: শপথ নিয়েই কোভিড মোকাবিলায় তৎপর মুখ্যমন্ত্রী, পরিদর্শন করলেন একাধিক হাসপাতাল]
রিলিজ ও জয়েনিংয়ের পাশাপাশি রাজ্যের বদলি প্রার্থী শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা সমগ্র ট্রান্সফার প্রক্রিয়া শুরুর জন্য শিক্ষা দপ্তরের দিকে তাকিয়ে। বদলি প্রার্থীদের বক্তব্য, ভোটের আগে প্রায় ৪০ হাজার ফর্ম জমা পড়েছে। সেই বিষয়টি নিয়ে অবিলম্বে যাতে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ শুরু হয় সেই দাবি জানানো হচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষকমহল অনলাইনে জেনারেল ট্রান্সফার শুরুর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। স্পেশ্যাল গ্রাউন্ড ট্রান্সফার সঠিক পদ্ধতি মেনে স্বচ্ছতার সঙ্গে হওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। এর পাশাপাশি দীর্ঘ কয়েক বছর বন্ধ থাকা জেনারেল ট্রান্সফার প্রক্রিয়া শুরু হওয়া অবিলম্বে দরকার বলে মত অনেকের। গতবছর অনলাইনে মিউচুয়াল ট্রান্সফার শুরু হলেও তাতে অনেকেই সুযোগ পাননি বলে অভিযোগ উঠেছিল। আবার শিক্ষাকর্মীদের জন্য অনলাইনে আবেদনের কোনও বিকল্প না থাকায় তাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন বলেও অভিযোগ ওঠে।
এই প্রসঙ্গে অল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক চন্দন গড়াই বলেন, “শিক্ষকদের রিলিজ ও জয়েনিংয়ের নির্দেশ অতি দ্রুত প্রকাশ করায় শিক্ষা দপ্তরকে সাধুবাদ জানাই। শিক্ষা দপ্তর অতি দ্রুত জেনারেল ট্রান্সফার অনলাইনে শুরু করুক এবং মিউচুয়াল পোর্টালে নন-টিচিং কর্মীদের অপশন চালু করুক।” শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারীর বক্তব্য, “কয়েকদিন আগেই আমরা কমিশনার অফ স্কুল এডুকেশনের কাছে এই ব্যাপারে আবেদন জানিয়েছিলাম। তিনি কথা দিয়েছিলেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত যাতে ভোটের পরই একটি নির্দেশিকা দেওয়া যায় তার ব্যবস্থা করবেন। তৎপরতার সঙ্গে এই ভূমিকা গ্রহণ করায় অনেক অভিনন্দন শিক্ষা দপ্তরকে। অনলাইনে জেনারেল ট্রান্সফার সহ সমস্ত ধরনের বদলি প্রক্রিয়া যাতে দ্রুত চালু করা যায় তার আবেদন জানাচ্ছি।”
অন্যদিকে এই বদলি প্রক্রিয়া চালু হলেও সে পথ খুব একটা মসৃণ হবে না বলে মনে করছে সোসাইটি ফর হেডমাস্টারস অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেস সংগঠনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার মাইতির বক্তব্য, “গরমের ছুটি চলছে। স্কুলগুলো বন্ধ রয়েছে। এমতাবস্থায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কীভাবে রিলিজ এবং জয়েনিং করাবেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির মিটিং কীভাবে হবে। সে নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এই ধোঁয়াশা কাটাতে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা অত্যন্ত জরুরী। অন্যথায় জটিলতা তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।”