করোনা কালে তুলসী চাষ করে চাষিভাইরা খুব অল্প সময়ে ও খুবই অল্প মূলধনে বেশি লাভ করতে পারেন। লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি দপ্তরের সহ-কৃষি অধিকর্তা ডঃ শতদীপ সিংহরায়।
করোনা (Coronavirus) কালে প্রত্যেক বাড়িতেই খাদ্যতালিকায় অনেক ভেষজও স্থান করে নিয়েছে। বেশিরভাগ বাঙালি বাড়িতে তুলসীর দেখা মিললেও এতদিন তা মূলত ধর্মচর্চাতেই ব্যবহৃত হত বেশি। কিন্তু করোনার দাপাদাপিতে ইমিউনিটি বৃদ্ধির লক্ষ্যে তুলসী-মধু-গোলমরিচ-আদার পাচন এখন বাঙালির ঘর ঘর কি কাহানির অঙ্গ হয়ে উঠেছে এই এক বছরে। এছাড়া ওষুধ শিল্পে এর ব্যবহার ও চাহিদা বেড়েছে আগের চেয়ে অনেকটা। আমরা জানি বিভিন্ন প্রকার তুলসীর গাছের বিভিন্ন অংশ বীজ, শিকড় ও পাতা, কাণ্ড এমনকী পুরো গাছও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তুলসীর শিকড় শিশুদের কোষ্ঠবদ্ধতায়, বিষাক্ত পোকা কামড়ানোয় ব্যবহৃত হয়। সর্দি, কাশি, জ্বর, দাদ, চুলকানি, বাত, কানের ব্যথায় তুলসীর পাতা কার্যকর। তুলসীর ব্যবহার করে উদরাময়, অর্শ, পুরাতন আমাশয়, প্রস্রাব সংক্রান্ত সমস্যার উপকার পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগের জন্য মলম তৈরিতে তুলসী গাছ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বর্তমান সময়ে, ‘ভেষজের রানি’ তুলসীর (Tulsi) চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী, তাই এই সময়ে ছোট গুল্ম শ্রেণির বহুবর্ষজীবী তুলসী চাষ করে চাষিভাইরা খুব অল্প সময়ে ও খুবই অল্প মূলধন লাগিয়ে বেশি আয় ও বেশি লাভ করতে পারেন। দেখা গিয়েছে মাত্র তিন হাজার টাকা ব্যয় করে চার মাসে আয় প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা। বিভিন্ন ধরনের তুলসী আমাদের ভারতবর্ষে পাওয়া যায়। মূলত আমরা যে তুলসীকে চিনি, সেটা হল বাবুই তুলসী, এছাড়া বনতুলসী, অমৃত তুলসী, কর্পূর তুলসী, কৃষ্ণতুলসী, রামতুলসী, তুকাসমিয়া তুলসী, দ্রূদ্রিহা তুলসী প্রভৃতি ভারতের বিভিন্ন অংশে পাওয়া যায়। তুলসী চাষের জন্য ভাল জলনিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত জমি প্রয়োজন। তুলসী গাছ এমনি সব ধরনের মাটিতে হলেও বেলে-দোঁয়াশ মাটিতে ভাল হয়। বর্ষার আগে বীজ থেকে চারা তৈরি করা হয়ে থাকে। দেখা গিয়েছে, একর প্রতি ২৫০-৩০০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হয়।
[আরও পড়ুন: উন্নতমানের ধান উৎপাদনে Genetics-এর প্রয়োগ, আমেরিকাকে পথ দেখাবেন বর্ধমানের তরুণ]
ম্যানকোজেব ৫ গ্রাম প্রতি কেজি বীজ হারে দিয়ে বীজশোধন করে নেওয়া ভাল। চারার বয়স এক মাস থেকে দেড় মাস হলে মূল জমিতে রোপণ করা হয়। এর আগে ভাল মতো চাষ দিয়ে মূল জমি চাষ করে নিতে হবে। চারাগুলিকে মূল জমিতে ২ ফুট x ১ ফুট দূরত্বে লাগানো হয়। তুলসী চাষের জন্য একর প্রতি তিনটন কম্পোস্ট সার লাগে। মূল সার হিসাবে একর প্রতি ৯ কেজি নাইট্রোজেন, ৬ কেজি ফসফেট ও ৩ কেজি পটাশিয়াম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তুলসী চাষের ক্ষেত্রে সেচ প্রয়োজন মতো দিলেই চলে, কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে কোনওভাবেই জমিতে জল না দাঁড়ায়। প্রতিবার পাতা তোলার পর চাপান সার ও সেচ দেওয়া আবশ্যিক। চারা রোপণের তিন থেকে চার মাস পর প্রতি মাসে একবার পাতা তোলা যায়। এবং ২.৫ মাস অন্তর একবার গাছের অংশ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। দেখা গিয়েছে বছরে ২ থেকে ৩ বার একর প্রতি ১৫-১৮ কুইন্টাল কাঁচা গাছ ও ৪ কুইন্টাল শুকনো গাছ সংগ্রহ করা যায়।