অর্ণব আইচ: প্রত্যেকদিন আমানত জমা করার নামে বিপুল টাকা প্রতারণা। আমানতকারীদের টাকা হাতিয়ে গা ঢাকা দিয়েও শেষরক্ষা হল না চক্রের দুই মাথার। মধ্য কলকাতার বড়বাজার থানার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার কাঞ্চন কুমার ও রাজকুমার রায়। এখনও সুরেশ কুমার নামে এই চক্রের আরও এক মাথা পলাতক। প্রাথমিকভাবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ১৩ জন আমানতকারীর কাছ থেকে ৫৬ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। যদিও এই টাকার পরিমাণ কয়েক কোটিতে গিয়ে দাঁড়াবে বলেই ধারণা পুলিশের।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ৬ বছর আগে এই টাকা তোলা শুরু। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের প্রত্যেকদিনের আমানত জমা দেওয়ার স্কিমের মূল এজেন্ট ছিলেন রাজারহাটের কাঞ্চন কুমার। তিনি ব্যাঙ্কের হয়েই উত্তর কলকাতা থেকে শুরু করে মধ্য কলকাতার বড়বাজার, পোস্তা অঞ্চলের বহু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা তুলতে শুরু করে। তার কাজ ছিল প্রত্যেকদিন টাকা তুলে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে জমা করা। কয়েক বছর পর থেকে প্রয়োজনে আমানতকারী টাকা তুলতে পারবেন। অন্তত দু’শো জন প্রত্যেকদিন এভাবে কাঞ্চনের হাত ধরে টাকা জমা দিতে থাকেন। তার বদলে কাঞ্চন মূল এজেন্ট হিসাবে ব্যাঙ্ক থেকে এক শতাংশ কমিশন পাবেন। ২০১৯ সালে কাঞ্চন আমানতকারীদের জানায়, সে অত্যন্ত অসুস্থ। তাই এবার থেকে তার হয়ে সাব এজেন্ট রাজকুমার রাই উত্তর কলকাতার সিঁথি, টালা থেকে শুরু করে পূর্ব কলকাতার ফুলবাগান পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে টাকা তুলবে। আবার বড়বাজার, পোস্তা, জোড়াসাঁকো, গিরিশ পার্ক অঞ্চল থেকে টাকা তুলবে সুরেশ সিং নামে অন্য এক এজেন্ট। পুলিশের অভিযোগ, কাঞ্চন দুই সাব এজেন্ট নিয়োগ করলেও ব্যাঙ্কের কোনও অনুমতি নেয়নি।
[আরও পড়ুন: ডেঙ্গু রোগীদের রক্ত পেতে সমস্যা হলে ফোন করুন ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’তে, পরামর্শ স্বরাষ্ট্রসচিবের]
বড়বাজারের কটন স্ট্রিটের সোনিয়া রেখির অভিযোগ, তিনি ব্যাঙ্কে তিনটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। সুরেশ তাঁর কাছ থেকে হাজার টাকা করে প্রত্যেকদিন জমা দেওয়ার জন্য নিতেন। কয়েক মাস আগে দেখেন, অত্যন্ত কম টাকা জমা হয়েছে অ্যাাকউন্টে। খোয়া গিয়েছে তাঁর ২৫ লক্ষ টাকা। বড়বাজারের ফল ব্যবসায়ী শিবু সোনকার তাঁর অভিযোগে জানিয়েছেন, তিনি তাঁর বিশেষভাবে সক্ষম ছেলের কথা মাথায় রেখেই দিনে হাজার টাকা করে জমা দিতেন। এভাবে তিনি দশ লক্ষ টাকা জমা দেন। কিছুদিন আগে ছেলের চিকিৎসার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে গিয়ে দেখেন, কোনও টাকাই জমা পড়েনি। এভাবে উত্তর ও মধ্য কলকাতার প্রায় দু’শো জন ব্যবসায়ী ও অন্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রত্যেকদিন এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করেও নেওয়া হত। এভাবে ব্যাঙ্কে অত্যন্ত কম টাকা অথবা কখনও বা কোনও টাকা জমা না দিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
এই ব্যাপারে বড়বাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলে রাজারহাটের চিনার পার্ক থেকে কাঞ্চন কুমার ও উত্তর কলকাতার বি টি রোড থেকে রাজকুমার রাইকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। যদিও অন্য অভিযুক্ত সুরেশ সিং পলাতক। পুলিশ তার সন্ধান চালাচ্ছে। রবিবার দুই ধৃতকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। এই প্রতারণার সঙ্গে কোনও ব্যাঙ্কের কর্তা জড়িত কি না, তা নিয়েও তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।