মণিশংকর চৌধুরী: হালকা শীতের চাদরটা জড়িয়ে নিয়েছে তিলোত্তমা। একে একে জ্বলে ওঠা আলোয় সন্ধের কলকাতা যেন আরও একটু বেশি মোহময়ী। আর আলোআঁধারি সেই রহস্যময়তার মাঝেই জলসার উত্তাপে গা সেঁকে নিল রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়াম। মঞ্চের উপর দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন গায়ক, বাদকরা। সুরের তালে তালে নেচে উঠছে নানা রঙের আলোর ফোয়ারা। দিলখুশ মেজাজে উপস্থিত দর্শকের কেউ চুমুক দিচ্ছেন চা-কফির কাপে। কেউবা কুড়কুড়ে চিপসের ফুরফুরে মজায় তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন অনুষ্ঠান। আর সেই আলো-সুরের ফোয়ারার নিচেই জমা হচ্ছে আবর্জনা। চায়ের কাপ, চিপসের প্যাকেট থেকে পলিথিনের ব্যাগে ভরে উঠল সরোবরের। এমনকী গড়াগড়ি খেল খালি মদের বোতলও।
(কম ওজনের গ্যাস সিলিন্ডার, ডেলিভারি ম্যানকে আটকে বিক্ষোভ)
পরিবেশগত কারণে কিছুদিন আগেই সরোবর থেকে বাতিল হয়েছে একটি ফুটবল ম্যাচ। ম্যাচের জন্য দর্শকদের আসা-যাওয়ায় সরোবরের স্বচ্ছ পরিবেশের দফারফা হওয়ার আশঙ্কায় আপত্তি তুলেছিলেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত। বইমেলাকে ময়দান থেকে উৎখাত করেছিলেন যিনি, তাঁর জেদকেই মান্যতা দিয়েছিল পরিবেশ আদালত। ফলে ছাড়পত্র পায়নি ফুটবল ম্যাচ। সংশ্লিষ্ট দলগুলি তাই তাদের ম্যাচ সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে বারাসতে। ঠিক যেদিন সে ম্যাচ যে চলছে, সেদিনই কিন্তু শ্লীলতাহানির হাত থেকে রক্ষা পেল না সরোবরের পরিবেশ। গানের ছুতোয় জমল দেদার আবর্জনা। এমনকী প্রকাশ্যে মদের বোতলও পড়ে থাকতে দেখা গেল। কোথায় গেল পরিবেশের লালিত্য? কেন এমন একটা জলসার ছাড়পত্র মিললেও, একটা ফুটবল ম্যাচের কপালে শিকে ছিঁড়ল না? তাহলে কি খেলার থেকে জলসার গুরুত্বই বেশি হল? এভাবেই যখন সরোবরের পরিবেশ লাঞ্চিত হচ্ছে, তখন কোথায়ইবা গেলেন ‘পরিবেশ দত্ত’? এরকমই নানা সঙ্গত প্রশ্নের আনাগোনা বিভিন্ন মহলে। কিন্তু সদুত্তরও চাপা পড়েছে ওই আলোর নিচে জমা অন্ধকারেই।
প্রসঙ্গত, রবীন্দ্র সরোবরের পরিবেশ এই যে প্রথম দ্বিচারী বিবেচনার শিকার হচ্ছে তা নয়। এর আগে আইএসএল-এর একটি ম্যাচ নিয়েও নানা জল্পনা দানা বেঁধেছিল। সেক্ষেত্রেও পরিবেশ নষ্টের আশঙ্কায় আপত্তি তুলেছিলেন সুভাষবাবু। দ্বারস্থ হন গ্রিন ট্রাইব্যুনালের। পুরো পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সে সময় একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কলকাতার ফ্র্যাঞ্চাইজিকে কিছু বিশেষ শর্ত মেনে চলতে হলেও শর্তস্বাপেক্ষে খেলার অনুমতি পেয়েছিল অ্যাটলেটিকো ডি কলকাতা। বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ মেনে নিয়েছিলেন সুভাষবাবুও। দর্শকরা ভিড় জমিয়েছিলেন খেলা দেখতে। কিন্তু সেই ফুটবল খেলা হলেও এবার ম্যাচের অনুমতি মেলেনি বাংলার শতাব্দীপ্রাচীন ফুটবল দলের।
এবারও আপত্তি তোলেন সুভাষবাবুই। প্রশ্ন উঠছে, একটি কর্পোরেট ফ্র্যাঞ্চাইজি যদি শর্ত মেনে খেলতে পারে, তাহলে বাংলার এক বিশিষ্ট দলের ক্ষেত্রে কী অসুবিধা হল? একই সুপারিশ মেনে পরিবেশের শুদ্ধতা বজায় রেখে কেন খেলার অনুমতি দেওয়া হল না? তবে কি কর্পোরেট ফ্র্যাঞ্চাইজি বলেই বাড়তি সুবিধা দেওয়া হযেছিল? এ প্রশ্নের মধ্যেই রবিবার রাতের জলসা যেন পরিবেশরক্ষার সদিচ্ছাকেই গভীর সংশয়ের মুখে ফেলল। পরিবেশ রক্ষার যে উদ্যোগ ফুটবল ম্যাচকে ব্রাত্য করে জলসাকে অনুমতি দেয়, তা কতটা সদিচ্ছা সে প্রশ্নই বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। এই কি পরিবেশের শুদ্ধতা! পরিবেশের কথা অহরহ ভাবেন সুভাষবাবু। অন্তত নিজেরকর্মে তেমনটাই দেখান তিনি। কিন্তু রবিবার রাতে নষ্ট হওয়ার মুহূর্তে পরিবেশের কান্না আদৌ তাঁর কানে পৌঁছল! নাকি তাঁর জ্ঞাতসারেই ঘটল পরিবেশের শ্লীলতাহানি! যদিও গমগমে সুরের কানফাটানো আওয়াজে চাপা পড়ল এ সবকিছুই। শুধু পড়ে থাকল কিছু চায়ের কাপ, পলিথিনের চিপসের প্যাকেট আর মদের বোতল।
আরও পড়ুন-
টিকিট, কার্ডের ঝামেলা ছেড়ে স্মার্ট হচ্ছে কলকাতা মেট্রো
বোলপুরে বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার কথা ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ব্যাঙ্কে এই কাজটি কেন করতেই হবে আপনাকে?
The post তারস্বরে মিউজিক, রমরমিয়ে জলসা সরোবরে…সুভাষ দত্ত আপনি কোথায়? appeared first on Sangbad Pratidin.