পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন দুলদুলি জমিদার বাড়ির পুজো।
নবেন্দু ঘোষ, বসিরহাট: ১৯০৫ সালে পুজো শুরু হয়েছিল হিঙ্গলগঞ্জ থানার দুলদুলির জমিদার বাড়িতে। আড়ম্বরের সঙ্গেই আয়োজন করা হত পুজোর। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন হয় ১৯৫৭ সালে। বন্ধ হয়ে যায় পুজো। এরপর দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে যাওয়া সেই পুজোর হাল ধরতে কেউ এগিয়ে আসেননি। দীর্ঘদিন পর ২০০৮ সালে ফের নতুন করে পুজো শুরু হয় সেখানে। এবার ১২ বছরে পড়েছে দুলদুলির জমিদার বাড়ির পুজো।
[আরও পড়ুন: এবার পুজোর আকর্ষণে এগিয়ে কোন রং? কেনাকাটার আগে একঝলকে দেখে ]
হালদার পরিবারের সদস্যরা জানান, জমিদার কিনু মোহন হালদার এর ছয় সন্তান ১৯০৫ সালে বাড়ির দালানে দুর্গাপুজো শুরু করেন। পরিবারের দাবি, সেই সময় এই হালদার বাড়ির পুজো ছিল এলাকার একমাত্র পুজো। জন্মাষ্টমীতে কাঠামো পুজো হয়ে যেত। মেদিনীপুর থেকে প্রতিমা শিল্পী এনে তাঁদের হাতেই গড়া হত প্রতিমা। প্রতিমার পরনের শাড়ি প্রতিদিন বদল হত। কিন্তু ১৯৫৭ সালে দুর্গাপুজোর নবমীর দিন পুজো চলাকালীন পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। সেই সময় গুলি চললে মৃত্যু হয় দু’জনের। সেই থেকেই বন্ধ দুলদুলির জমিদার বাড়ির পুজো। আনন্দ নয়, নবমী এলেই সেই ভয়ংকর দিনের স্মৃতি তাড়া করে বেড়াত তাঁদের।
এ বিষয় পরিবারের এক সদস্য জানান, “১৯৫৭ সালের পর থেকে পুজো বন্ধ হওয়ার পর থেকেই নবমীর দিনই মৃত্যু হয়েছে আমাদের আত্মীয়দের। এরপরই পরিবারের সবাই বেলুড় মঠের এক মহারাজ ও কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই যে পুজো শুরু করব। এই পুজো আমাদের কাছে শাপ মোচন এর সমান।” এরপর ২০০৮ সালে আবার পুজো শুরু হয় দুলদুলির জমিদার বাড়িতে। তাঁদের কথায়, পুজো শুরুর পর থেকে আর কোনও অমঙ্গল হয়নি।
[আরও পড়ুন: পুজোয় সম্পর্কের অটুট বন্ধনের বার্তা দেবে শিবমন্দির সর্বজনীন]
যদিও জমিদারি আমলের মতো পুজোর সেই আড়ম্বর বা জৌলুস আজ আর নেই দুলদুলির এই হালদার বাড়ির পুজোতে। তবে এখনও আছে সেই জমিদার আমলের বিশাল ঠাকুরদালান। সেখানেই হয় পুজো। এখন আর মেদিনীপুর থেকে শিল্পী আনাও সম্ভব হয় না। কিন্তু আজও জন্মাষ্টমীতে প্রতিমা বায়না দিয়ে আসা হয়। মহালয়া থেকে চলে নিরামিষ খাওয়া। পরিবারের এক সদস্য জানান, “আজ আমরা আমাদের পূর্বপুরুষ দের মতো করে পুজো করতে পারি না ঠিক। কিন্তু আজও আমরা সমান আন্তরিকতা নিয়ে পুজো করি। আমাদের কাছে মা দুর্গা ঘরের মেয়ের মতো। তাই বিসর্জনের দিন ছোট, বড় সবাই চোখের জলে মাকে বিদায় জানাই। আর মায়ের কাছে প্রার্থনা করি তাঁকে যেন আগামী বছর আবার বাপের বাড়ি আনতে পারি।”
The post ফিকে আড়ম্বর, তবুও রীতি মেনেই দুলদুলি জমিদার বাড়িতে চলে দুর্গা আরাধনা appeared first on Sangbad Pratidin.
