shono
Advertisement

চলে গেলেন মহাশ্বেতা, রইল প্রতিবাদ

দীর্ঘ রোগভোগের পরে অবশেষে মৃত্যুর মধ্যে শান্তি পেয়েছেন লেখিকা। আর, সমাজের অশান্ত মুহূর্তে পাঠক শান্তি পাবে তাঁর লেখায়। The post চলে গেলেন মহাশ্বেতা, রইল প্রতিবাদ appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 10:29 PM Jul 28, 2016Updated: 05:51 PM Jul 28, 2016

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ”অফ দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল!”
বেলভিউ হাসপাতালে, বৃহস্পতিবার, বিকেল ৩টে ১৬ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেও মহাশ্বেতা দেবী কিন্তু হারিয়ে গেলেন না। তিনি রয়ে গেলেন তাঁর লেখায়, তাঁর কাজের মধ্যে।
সত্যি বলতে কী, সমাজ, তার মানুষ এবং সাহিত্যকে কোনও দিনই আলাদা করে দেখেননি মহাশ্বেতা। ১৯২৬ সালে কবি মণীশ ঘটক এবং ধরিত্রী দেবীর পরিবারে জন্ম নেওয়ার সময় থেকেই সূচনা হয় সেই ব্যতিক্রমী পথ চলার।
ব্যতিক্রমী, কেন না, ঘটক পরিবার সব সময়েই বাংলার বুকে খুব অন্যরকম এক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে তুলে ধরেছে তাঁদের মতামত। মহাশ্বেতার বাবা মণীশ ঘটক ছিলেন তাঁর সময়ের ‘কল্লোল’ সাহিত্য আন্দোলনের পুরোধা। ছায়াছবি, নাট্যমঞ্চ এবং সাহিত্যের জগতে কাকা ঋত্বিক ঘটকের মূল্যায়ন নিয়ে নতুন করে কিছুই প্রায় বলার নেই। মায়ের দিক থেকেও অত্যন্ত সমৃদ্ধ এক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার নিয়ে বড় হয়েছিলেন মহাশ্বেতা। ধরিত্রী দেবী নিজেও যুক্ত ছিলেন সাহিত্য এবং সমাজসেবার সঙ্গে।

Advertisement


সেই পারিবারিক সাংস্কৃতিক পটভূমির সঙ্গেই মহাশ্বেতার ব্যক্তিগত সত্ত্বাটি নির্মাণ করে দেয় সমাজ। প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় জন্মভূমি ঢাকায়। পরে, দেশভাগের জেরে তাঁরা চলে আসেন এ-পার বাংলায়। মহাশ্বেতা ভর্তি হন শান্তিনিকেতনে। শিক্ষালাভের সঙ্গে সঙ্গে চলতে থাকে তাঁর সমাজকে নতুন করে চেনা। অনেকেই মনে করেন, শান্তিনিকেতনে শিক্ষালাভের সময় খুব কাছ থেকে তিনি দেখেছিলেন উপজাতিদের জীবনযাত্রা, যা পরে তাঁর লেখার অন্যতম বিষয় হয়ে ওঠে।
সে নিয়ে বিতর্ক চলতেই পারে। কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই, মহাশ্বেতার মতো নিবিড় মমতায় উপজাতিজীবনকে বাংলা সাহিত্যে প্রায় কেউই স্থান দেননি। সেই উপজাতিজীবন কখনও উঠে এসেছে তাঁর লেখায় মঙ্গলকাব্যের অনুষঙ্গে, কখনও বা বিদ্রোহের ইতিহাসে। ‘ব্যাধখণ্ড’, ‘অরণ্যের অধিকার’, ‘চোট্টি মুণ্ডা এবং তার তীর’, ‘তিতু মীর’- পাতার পর পাতা, অক্ষরের পর অক্ষর আমাদের নিয়ে যায় বনবাসের জীবনে।
নিজেই বলতেন মহাশ্বেতা, ”আমি বিশ্বাস করি প্রকৃত ইতিহাস লেখে একেবারে সাধারণ মানুষেই! নানা সময়েই এই ব্যাপারটা আমি দেখেছি। সে কী উপকথায়, কী লোকগাথায়, কী পুরাণে, কী কিংবদন্তিতে! আমার লেখার কারণও এই সাধারণ মানুষ, প্রেরণাও তাঁরাই! যাঁরা ক্রমাগত বঞ্চিত হয়ে চলেছেন, ব্যবহৃত হয়ে চলেছেন, তাও পরাজয় স্বীকার করেননি। মাঝে মাঝেই আমার মনে হয়, আমার লেখা আসলে তাঁদের জীবন ছাড়া আর কিছুই নয়!”
পাশাপাশি, নারীজীবন খুব অন্য এক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে উঠে এসেছিল তাঁর লেখায়। সেই নারীজীবনের মধ্যে যেমন মিশে গিয়েছিল মঙ্গলকাব্যের নারীর স্বর, তেমনই স্থান পেয়েছিল রাজনীতি-তাড়িত মায়েরাও। ‘বেনে বৌ’-এর লাঞ্ছনা, ‘হাজার চুরাশী’র মায়ের পথচলা আজও বাংলা সাহিত্যে ব্যতিক্রমী। বাদ যায়নি প্রান্তিক নারীরাও। মহাশ্বেতার হাত ধরেই বাংলা সাহিত্য চিনেছিল ‘রুদালী’-দের চোখের জল, চিনেছিল ‘স্তনদায়িনী’র সন্তানজন্মের বিড়ম্বনা। যখনই নারীচরিত্র নির্মাণের জন্য কলম ধরেছিলেন মহাশ্বেতা, সাহিত্য পেয়েছিল একেকটি তুলনারহিত চরিত্র।


তবে, শুধুই প্রতিবাদী স্বর নয়। ছোটদের জগৎ চিনেছিল এমন এক মহাশ্বেতাকে যিনি অত্যন্ত সরস ভঙ্গীতে সমাজের রূপরেখাটি বর্ণনা করে চলেন। সেই মহাশ্বেতা গল্পচ্ছলে বলে চলেন বাংলার ডাকাতদের কথা, অমাবস্যার রাতে নদীর জলে দাঁড়িয়ে ভূতেদের মাথা নিয়ে লোফালুফি খেলার কথা। কখনও আবার আত্মজীবনী ‘তুতুল’-এ তুলে আনেন পোষা গরুর কথা যার উৎপাতে নাস্তানাবুদ হয়ে থাকত পাড়া। সেই সব নিয়েই ছোটদেরও তিনি শিখিয়ে গিয়েছিলেন সহজ ভাবে বেঁচে থাকার মন্ত্রটি।
আজ, প্রয়াণ দিবসে অনেকেই বলবেন, সেই প্রতিবাদ স্তব্ধ হল। স্তব্ধ হল বটে লেখিকার কণ্ঠস্বর! প্রতিবাদ কিন্তু কোথাও যায়নি। সে রয়ে গিয়েছে তাঁর লেখার মধ্যেই। পদ্মশ্রী, পদ্মবিভূষণ, জ্ঞানপীঠ- এইসব সম্মানও সেই সৃষ্টির নিছক মূল্যায়নমাত্র। স্বামী বিজন ভট্টাচার্য এবং পুত্র নবারুণ ভট্টাচার্যও যেমন কোনও দিন পুরস্কারের কথা ভাবেননি, মহাশ্বেতাও তাই! তিনি যখনই প্রয়োজন মনে করেছেন, সরব হয়েছেন নিজের বক্তব্যে।
সেই বক্তব্য এবার প্রতিধ্বনি তুলবে লেখার মধ্যে। দীর্ঘ রোগভোগের পরে অবশেষে মৃত্যুর মধ্যে শান্তি পেয়েছেন লেখিকা। আর, সমাজের অশান্ত মুহূর্তে পাঠক শান্তি পাবে তাঁর লেখায়।

The post চলে গেলেন মহাশ্বেতা, রইল প্রতিবাদ appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement