পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজিরsangbadpratidin.in৷ আজ রইল বহরমপুরের রায় পরিবারের দুর্গাপুজোর কথা।
কল্যাণ চন্দ্র, বহরমপুর: প্রতিপদ কল্প থেকে পুজো শুরু হচ্ছে কাশিমবাজারের ছোট রাজবাড়িতে। রবিবার থেকে টানা দশমী পর্যন্ত পুজো চলবে বহরমপুরের রায় পরিবারের রাজবাড়িতে। পুজোর চারদিন রাজকীয় পুজোয় শামিল হচ্ছেন পরিবারের দূরদূরান্তের সদস্যরা। ২৫০ বছরের প্রাচীন পুজো দেখতে শুরু হয়েছে উন্মাদনা।
[আরও পড়ুন: কাত্যায়ণী রূপে আটশো বছর ধরে ওপার বাংলায় পূজিত হচ্ছে মা ঢাকেশ্বরী]
মারাঠা দস্যুদের অত্যাচারে জেরবার হয়ে মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার ফিরোজপুর থেকে বহরমপুরের কাশিমবাজারে বহু বছর আগে চলে আসেন রায় পরিবার। আলিবর্দী খাঁর রাজত্বকালে ১৭৪০ খ্রীষ্টাব্দে দীনবন্ধু রায় কাশিমবাজারে একটি রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন। পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা এবং দীনবন্ধু রায়ের পিতা অযোধ্যারাম রায় তাঁর মেধার জন্য নবাব নাজিমের নিকট “রায়” উপাধি লাভ করেন। মূলত তিনিই দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। সেদিন থেকে কাশিমবাজারে ছোট রাজবাড়িতে দুর্গা পুজো হয়ে আসছে বলে জানালেন রাজবাড়ীর রানি মা সুপ্রিয়া রায়।
রায় পরিবারের বর্তমান বংশধর প্রশান্তকুমার রায় জানান, ভগবানগোলা থেকে তাঁদের বাসস্থান পরিবর্তন হলেও দুর্গা পূজোর কোনও পরিবর্তন হয়নি। বিভিন্ন শাস্ত্র থেকে সংগৃহীত নির্দিষ্ট পুঁথি বানানো হয়েছিল দুর্গাপুজো উপলক্ষে। সেই পুঁথি মেনেই পুজো হয়ে আসছে আজও। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর দিন পুজো হয় মায়ের। কিন্তু প্রতিপদ থেকে ঘট ভরে পুজোর সূচনা হয়। অন্যদিকে রাজবাড়ির পুরোহিত গোপাল দাস দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে মায়ের পুজো করে চলেছেন। এদিন গোপাল রায় বলেন, একসময় ছাগল বলি হত। পরিবর্তে এখন মাছ রান্না হয়। পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত এলাকার কারও বাড়িতে আগে রান্না হত না। দশমীর দিন নীলকণ্ঠ পাখি ছাড়া হত। সেই পাখি না পাওয়া গেলেও আয়োজনের কোনও খামতি নেই।
[আরও পড়ুন: কাত্যায়ণী রূপে আটশো বছর ধরে ওপার বাংলায় পূজিত হচ্ছে মা ঢাকেশ্বরী]
জানা গিয়েছে, এখনও আগের মতোই জাঁকজমক করে পুজো হচ্ছে। যথেষ্ট ভোগও বিলি করা হয়। আরতি দেখার জন্য মন্দির প্রাঙ্গন ভরতি হয়ে যায়। মায়ের দেবী মূর্তি একই রয়ে গিয়েছে। সেখানে গণেশের রং লাল, এছাড়া রয়েছে সিন্ধুঘোটক। সমুদ্র মন্থনের সময় যে সিংহ উঠে এসেছিল সেই সিংহ সিন্ধুঘোটক কাশিমবাজারের ছোট রাজবাড়িতে মায়ের মূর্তির নিচে রয়েছে। সেটা কোথায় দেখা যায় না। সেই পুজো রবিবার প্রতিপদ থেকে শুরু হচ্ছে। প্রতিপদ থেকে পঞ্চমী পর্যন্ত ৭ জন পুরোহিত পুজো করবেন কাশিমবাজারের ছোট রাজবাড়িতে। বিশাল এলাকা জুড়ে ওই রাজবাড়ির পুজো উপলক্ষে এলাকায় শুরু হয়েছে উন্মাদনা।
