সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: পাকিস্তানি, খালিস্তানিরাই মদত দিচ্ছে কৃষক বিক্ষোভে। আড়ালে থেকে তারাই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছে কৃষকদের। একাধিকবার এমনই অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা। কিন্তু যাদের সেবাই ধর্ম, তারা এসব কথা গায়ে মাখেন না। বরং সংকটের দিনে কীভাবে আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়ানো যাবে, তাঁদের সাহায্য করা যাবে, সে বিষয়টিই তাদের কাছে গুরুত্ব পায় বেশি। তেমনই একটি সংস্থা ইউনাইটেড শিখ।
কৃষক আন্দোলনে (Farmer Protest) তাদের ভূমিকা ঠিক কী? আসলে দিল্লি-গাজিপুর সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে চলছে আন্দোলন। চাঁদিফাটা রোদ্দুর থেকে কনকন ঠান্ডা, সবকিছুই সহ্য করে নিজেদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার লড়াইয়ে ব্রতী কৃষকরা। রাস্তার ধারেই খাওয়া-দাওয়া করছেন। আবার খোলা আকাশের নিচে ঘুমোচ্ছেন। অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কোলেও ঢোলে পড়েছেন অনেক বিক্ষোভকারী। তাঁদের এই আন্দোলনের রাস্তার প্রতিকূলতা সামান্য দূর করতেই উদ্যোগী ইউনাইটেড শিখ (United Shikh)। একটি তাঁবুতেই প্রয়োজনীয় নানা সামগ্রী মজুত রেখেছে তারা। শাল, গরম জামাকাপড় থেকে জুতো, তোষক, কম্বল-সহ যা যা জরুরি জিনিস, এই সংস্থার সদস্যরা তুলে দিচ্ছেন কৃষকদের হাতে। কীভাবে সামলাচ্ছেন পুরো বিষয়টা? সংস্থার এক সদস্য সুখদীপ সিং বলছিলেন, এর জন্য তাঁরা টোকেনের ব্যবস্থা করেছেন। আধার কার্ড দেখিয়ে দরকারি জিনিসটি কৃষকরা নিচ্ছেন এবং তার বদলে দেওয়া হচ্ছে একটি টোকেন। পরে জিনিসটি জমা করে গেলে টোকেনও ফেরত দিচ্ছেন তাঁরা। এভাবেই তাঁদের আন্দোলনে পাশে দাঁড়াতে চান এই শিখ ভাইয়েরা।
[আরও পড়ুন: ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে আসছে ৮৩টি তেজস যুদ্ধবিমান, মিলল কেন্দ্রের অনুমতি]
সুখদীপের কথায়, “আমরা সরাসরি বিক্ষোভে শামিল নই। তবে এই লড়াইয়ে কৃষকদের পাশে আছি তাঁদের সেবা করার মধ্যে দিয়ে। তাঁদের আন্দোলন সফল হোক, এই কামনাই করি।” শুধু এই সমস্ত সামগ্রীই নয়, কোনও কৃষক অসুস্থ হলে তাঁদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ওষুধ দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে এই ‘অল ইন ওয়ান’ তাঁবুতে। এক কৃষক জানালেন, “কোনও সমস্যা হলে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ পাচ্ছি। তাও নিখরচায়। এভাবে মানুষের সেবা করলে ওরা আশীর্বাদ পাবে।”
তবে এই প্রথম নয়, ১৯৯৯ সাল থেকেই সমাজসেবার সঙ্গে যুক্ত এই সংস্থা। বন্যা থেকে ভূমিকম্প কিংবা কোনও বিক্ষোভ-আন্দোলন, যখনই প্রয়োজন পড়েছে, সেখানে নিজেদের তাঁবু টাঙিয়েছে ইউনাইটেড শিখ। শুধু দেশেই নয়, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া-সহ বিদেশের নানা জায়গাতেও রয়েছে এদের শাখা। কিন্তু সমাজসেবা করার অর্থ আসে কোথা থেকে? সুখদীপের উত্তর, “সমাজে এখনও অনেক ভাল মানুষ আছেন, যাঁরা পাশে দাঁড়ান।” এই সেবার নেপথ্যে খালিস্তানি যোগ লুকিয়ে নেই তো? কিংবা উদ্দেশ্য নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি? এ প্রশ্নের মুখে বারবার পড়তে হচ্ছে সুখদীপদের। কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠে জানিয়ে দিচ্ছেন, “মানুষের সেবা করতে এসে ওসব কথা কানে নিলে চলে না। অনেকে অনেক কিছুই বলবে। আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাব।” সত্যিই, সমাজে মানবিকতা আজও বিদ্যমান। ‘গণতন্ত্র’ কি শুনতে পাচ্ছে?