বিশেষ সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি: দলিত, অনগ্রসর শ্রেণি, বলা ভাল ‘ওবিসি কাঁটা’ বিজেপির গলায় ভালই ফুটেছে। তাতে যে অবিলম্বে মলম লাগানোর প্রয়োজন রয়েছে তা ভালই টের পেয়েছে বিজেপি (BJP)। তাই দেরি না করেই মাঠে নেমে পড়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ (Yogi Adityanath)। বৃহস্পতিবারই দিল্লিতে প্রার্থী নির্বাচনের বৈঠক সেরে লখনউ ফিরেছেন। শুক্রবার সকালেই সোজা চলে গিয়েছেন নিজের ‘গড়’ গোরখপুরে। এদিন দুপুরে গোরখপুরে বস্তি এলাকায় জনৈক অমৃতলাল ভারতীর বাড়িতে মধ্যাহ্ণ ভোজ সেরেছেন যোগী। সেই ছবি নিজের ব্যক্তিগত টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্টও করেছেন। অমৃতলাল যে অনগ্রসর শ্রেণির প্রতিনিধি সেকথা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না।
রাজ্যের পঞ্চাশ শতাংশের বেশি ভোট রয়েছে ওবিসি সম্প্রদায়ের হাতে। সেই ভোট ব্যাঙ্কে ফাটল ধরলে সব হিসেব নিকেশ যে ওলট-পালট হয়ে যেতে পারে সেকথা বিজেপি শিবিরের অজানা নয়। অথচ গত কয়েকদিন ধরে যোগী সরকারের ওবিসি সম্প্রদায়কে উপেক্ষা করার ছবিই উঠে এসেছে। নির্বাচনের দিন ঘোষণা হতেই যোগী আদিত্যনাথের মন্ত্রিসভার একের পর এক সদস্য থেকে শুরু করে এক ডজনের কাছাকাছি বিধায়ক দল ছেড়ে সমাজবাদী পার্টি, সপার ঘরে গিয়ে যেভাবে ভিড় করছেন তাতে বিজেপি শিবিরে আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়েছে। এর সবথেকে বড় কারণ এখনও পর্যন্ত যে সমস্ত মন্ত্রী এবং বিধায়ক বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেছেন তাদের অধিকাংশই দলিত ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির (ওবিসি) প্রতিনিধি।
[আরও পড়ুন: ১৩ ঘণ্টার বৈঠকেও অধরা রফাসূত্র, লাদাখে সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহারে রাজি নয় চিন]
একসময় মায়াবতীর দল বহুজন সমাজ পার্টি (বসপা) ছেড়ে দিয়ে তারা বিজেপির সঙ্গী হয়েছিলেন। তাতে রাজ্যের ওবিসি ভোটের বড় অংশ বিজেপির ঝুলিতে এসেছিল। এবার সেই ওবিসি সম্প্রদায়ের নেতারা যোগী সরকারের দিকে তাদের সমাজের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ সামনে রেখেই দল ছেড়েছেন। এর ফলে যে রাজ্যের ওবিসি ভোটারদের মধ্যে বিজেপির প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি হতে পারে এবং তার প্রভাব ভোটব্যাংকে পড়তে পারে সেই সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ওবিসি ভোটারদের মন জয় করতে সবরকমভাবে চেষ্টা করতে হবে সেই বার্তা দলের রাজ্য নেতৃত্বকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশমতো কাজও যে শুরু হয়ে গিয়েছে এদিন যোগীর কর্মসূচিতেই তা বোঝা গিয়েছে।
মাসখানেক আগে পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি সহজেই ক্ষমতা দখল করতে চলেছে এমনটাই মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু নির্বাচনের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে বিজেপির সামনে লড়াই ততটাই কঠিন হয়ে উঠছে। একের পর এক ওবিসি মন্ত্রী এবং বিধায়করা যেভাবে সারি দিয়ে অন্য দলে যাচ্ছেন সেই ঘটনা যে শুধুমাত্র তারা টিকিট পাবেন কিনা বা বিজেপির সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না বলেই ঘটে চলেছে এতটা সহজ হিসেবে দেখার উপায় নেই। এই ঘটনার চিত্রনাট্য আগে থেকেই লেখা হয়েছে এবং এর পিছনে সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক রণকৌশল রয়েছে নিশ্চিতভাবেই।
[আরও পড়ুন: ইস্তফার চাপ বাড়ছে বরিসের, প্রথা ভেঙে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পদে এবার ভারতীয় বংশোদ্ভুত?]
সপার প্রধান অখিলেশ যাদবের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরেই দলিত নেতা স্বামী প্রসাদ মৌর্য সম্পর্ক রেখে চলছিলেন এবং যে সমস্ত ওবিসি বিধায়করা বিজেপির সংশ্রব ত্যাগ করেছেন তাঁদের অধিকাংশ স্বামী প্রসাদের অনুগামী বলেই পরিচিত। নিজের মন্ত্রিসভার সদস্যদের ক্ষোভের আঁচ যে যোগী ঘুণাক্ষরে টের পাননি পরপর তিন মন্ত্রীর ইস্তাফা তারই প্রমাণ। শুধু তাই নয় সপার রণকৌশল বুঝতেও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
বেশ কিছুদিন আগে পর্যন্ত অখিলেশকে হালকাভাবেই নিয়ে আসছিল বিজেপি। তবে এখন পরিস্থিতি পালটে গিয়েছে। ২০১৭ সালে যেভাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যের ছোট ছোট রাজনৈতিকদলগুলিকে বিজেপির সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন এবারে সেই রাস্তা নিয়েছেন অখিলেশ। তাতে সুহেলদেব সমাজপার্টির ওম প্রকাশ রাজভর বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে এবারে তাঁর সঙ্গে। আবার ভীম আর্মির প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদের সঙ্গেও জোট বৈঠক ইতিমধ্যেই সেরে ফেলেছেন তিনি। সবমিলিয়ে এই মূহুর্তে সুবিধাজনক অবস্থাতেই রয়েছেন অখিলেশ। তবে, এই সবকিছুর মধ্যেই তাঁকে খানিক সমস্যায় পড়তে হতে পারে। কারণ, স্বামী প্রসাদ-সহ যে সমস্ত বিধায়করা সপা’র সঙ্গী হয়েছেন তাঁরা দলবদল এবং দর কষাকষিতে সিদ্ধহস্ত। দরদস্তুর পছন্দসই না হলে তারা পাল্টি মারতে পারেন সেই সম্ভাবনা একেবারে খারিজ করে দেওয়া যায় না।