সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফের একবার ডোনাল্ড ট্রাম্প? নাকি দেশের প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বিডেন? কে বসবেন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশের প্রেসিডেন্টে চেয়ারে? তা ঠিক করতে ভারতীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শুরু হল আমেরিকায় শুরু হল শেষ পর্বের নির্বাচন। করোনা আবহেই নিউ ইয়র্ক (New York), নিউ জার্সি (New Jersy), ভার্জিনিয়া (Virginia)–সহ একাধিক জায়গায় বুথমুখী সাধারণ মার্কিন নাগরিকরা। করোনা (Corona Pandemic) সম্পর্কিত সমস্ত বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে। পাশাপাশি হিংসা যাতে না ছড়ায়, সেজন্য প্রত্যেকটি জায়গায় নিরাপত্তা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কোথাও যেন কোনও ফাঁক না থাকে।
১৯৭০ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় দেশ যতটা উত্তপ্ত হয়েছিল, ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরিবেশ তার থেকেও বেশি উত্তপ্ত। গোটা দেশ যেন দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে মসনদে বসে থাকা ট্রাম্প। অন্যদিকে, জো বিডেন। লড়াই সেয়ানে সেয়ানে। ইতিমধ্যেই, করোনা মহামারীর জেরে মেল-ইন-ব্যালট বা ‘আর্লি ভোটিং’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোটদান করেছেন দশ কোটি মার্কিন নাগরিক। তবে এদিন থেকে পোলিং স্টেশনগুলোতে শেষ পর্বের ভোট শুরু হয়েছে। এদিকে, ইতিমধ্যে ফেসবুক, টুইটারের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট নিজেদের ব্যবহারকারীদের ভোট সংক্রান্ত পোস্ট করার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছে।
[আরও পড়ুন: বর্ণবিদ্বেষের শিকার? ভারতীয় মুসলিম যুবককে কুপিয়ে খুন আমেরিকায়]
এদিকে, পরিসংখ্যান বলছে হোয়াইট হাউস দখলের দৌড়ে এগিয়ে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী জো বিডেন (Joe Biden)। তবে মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত রিপাবলিকান প্রার্থী তথা বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) দৌড় থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন, তা একেবারেই বলা যায় না। কারণ, সমীক্ষার জটিল অঙ্ক বেমালুম গুলিয়ে দিয়ে শেষ মুহূর্তে বাজি জেতার বহু উদাহরণ রয়েছে আমেরিকার ইতিহাসে।
উল্লেখ্য, আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট ভোটে জিততে গেলে নির্বাচকমণ্ডলীর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হয়। সেখানে কখনও একটি বড় রাজ্য প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে না। বরং একাধিক ছোট রাজ্য নির্ণায়ক হয়ে ওঠে। ৫০টি রাজ্যের মধ্যে এখানে এমন কিছু রাজ্য আছে যেগুলি ‘ডেমোক্র্যাট’ বলে পরিচিত। এই রাজ্যগুলি প্রধানত আমেরিকার দুই উপকূলে অবস্থিত। যেমন ক্যালিফোর্নিয়া বা নিউ ইয়র্ক। উপকূলে অভিবাসীদের ভিড়। অভিবাসীরা ঐতিহাসিকভাবে ডেমোক্র্যাট দলের সমর্থক। এইসব রাজ্যে কখনওই দাঁত ফোটাতে পারে না রিপাবলিকানরা। আবার মধ্য আমেরিকায় যেখানে অভিবাসীরা তুলনামূলকভাবে জনসংখ্যার কম অংশ, সেখানে বিপুল শক্তি রিপাবলিকান পার্টির। মধ্য আমেরিকা মূলত কৃষিপ্রধান। এখানকার কৃষিজীবী, রক্ষণশীল শ্বেতাঙ্গরা রিপাবলিকানদের বিশাল ভোটব্যাংক। এই অঞ্চলে ডেমোক্র্যাটরা দাঁত ফোটাতে পারে না বলেই অনুমেয়। ফলে ৫০টি রাজ্যের মধ্যে যে রাজ্যগুলি ডেমোক্র্যাট (Democrat) ও রিপাবলিকানদের (Republican) মধ্যে ভাগ হয়ে আছে, সেগুলি বাদ দিয়ে মার্কিন রাজনীতির হিসেবনিকেশ হয়। তাতে করে ফ্লোরিডা, আইওয়া, ওয়াইহো, পেনসেলভিনিয়ার মতো মিশ্র জনসংখ্যার রাজ্যগুলির গুরুত্ব সব নির্বাচনেই অনেক বেশি হয়। এই রাজ্যগুলিকেই আমেরিকার ভোট-রাজনীতিতে ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট’ বলা হয়ে থাকে। এরা কখনও ডেমোক্র্যাটদের দিকে, কখনও রিপাবলিকানদের দিকে ঝোঁকে।
[আরও পড়ুন: ‘আমি ওবামা, প্রেসিডেন্ট ছিলাম, মনে আছে?’ বিডেনের হয়ে ভোট চাইতে মহিলাকে ফোন, ভাইরাল ভিডিও]
তবে বিশ্লেষকদের মতে, এবারের নির্বাচন অনেকটাই আলাদা। বর্ণবিদ্বেষ, বিদেশি হস্তক্ষেপ তথা মেল-ইন-ব্যালটে কারচুপির অভিযোগ নিয়ে সরগরম মার্কিন রাজনীতি। বিশেষ করে করোনা মহামারী ও পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু এবারের নির্বাচনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে।