ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: দিনের পর দিন মেয়াদ উত্তীর্ণ স্টেন্ট বসানো হয়েছে শয়ে শয়ে রোগীর হৃদ-ধমনিতে? খাস কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের (Kolkata Medical Collage) এক বিভাগীয় প্রধানের পদত্যাগপত্র প্রকাশ্যে আসায় এ নিয়ে শোরগোল সরকারি চিকিৎসক মহলে। ইস্তফার দেওয়ার কারণ হিসেবে ওই চিকিৎসক একগুচ্ছ “অনৈতিক” কাজ করার জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন মেডিক্যালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি, শাসক দলের চিকিৎসক-বিধায়ক খোদ নির্মল মাজির (Nirmal Maji) বিরুদ্ধে।
ইস্তফাপত্রে ওই চিকিৎসক প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসকদের কর্মসংস্কৃতি নিয়েও। যদিও এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে স্বাস্থ্যভবন। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন নির্মলও। মঙ্গলবার সকাল থেকেই একটি পদত্যাগপত্র হোয়াটসঅ্যাপ মারফত ঘুরে বেড়িয়েছে সর্বত্র। রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তাকে লেখা সেই চিঠিতে দেখা গিয়েছে, অপমান ও বেনিয়ম মেনে নিতে না পেরে মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিস থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন মেডিক্যালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক ভবানীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। কারণ হিসেবে তিনি তুলে ধরেছেন কার্ডিয়োলজি বিভাগে চলে আসা নানা অনিয়মের কথা। এবং তাঁর অভিযোগ, ওই সব অনিয়মের কথা গত মার্চে অনুষ্ঠিত রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠকে তুলে ধরায় তাঁকে সর্বসমক্ষে অপমাণ করেন সমিতির প্রধান নির্মল মাজি।
[আরও পড়ুন: কর্মীদের চাঙ্গা করতে ভরসা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব! শাহর পরই রাজ্যে আসবেন নাড্ডা-মোদি, ঘোষণা দিলীপের]
অভিযোগ, তাঁকে বলা হয়, ‘মুখ বুজে কাজ না করলে হয় চাকরি ছাড়ুন, অন্যথায় জেলায় বদলি করে দেওয়া হবে।’ পদত্যাগপত্রে দাবি করা হয়েছে, ২০১৯-এ অন্তত ২০২টি কার্ডিয়াক স্টেন্টের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরেও সেগুলির ব্যবহার চালিয়ে যাওয়া হয়েছে যা পরে অডিটে ধরা পড়ে। ওই ইস্তফাপত্র অনুযায়ী ভবানীপ্রসাদের আরও দাবি, মহার্ঘ ইকো-ডপলার মেশিন, বাস্তবে যার কোনও অস্তিত্বই নেই, সেই যন্ত্রের জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে হোটেলে দেখা করে মেশিনের ‘টেকনিক্যাল ফিটনেস সার্টিফিকেট’ দেওয়া জন্যও তাঁর উপর বিস্তর চাপ দেওয়া হয়েছিল। যদিও তিনি রাজি হননি।
হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসকদের কর্মসংস্কৃতি নিয়েও অভিযোগ তুলেছেন বিভাগীয় প্রধান। ইস্তফাপত্রে তাঁর দাবি, অনেক চেষ্টাতেও বিভাগীয় বহু চিকিৎসককে তিনি সপ্তাহে অন্তত তিন দিন কয়েক ঘণ্টা করে ডিউটি করাতে পারেননি। বাস্তবে নাকি তাঁরা গরহাজির থাকলেও তাঁদের হয়ে উপস্থিতির ‘প্রক্সি’ দিয়ে দেন চতুর্থ শ্রেণির কিছু কর্মী। অভিযোগ, এই সব কথাই রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠকে তিনি ২৯ মার্চ তুলে ধরতে গেলে তাঁকে অপমাণ করে হুমকি দেন নির্মল।
[আরও পড়ুন: ‘মদনদাদার নেই যে তুলনা’, কামারহাটির বিধায়ককে নিয়ে নতুন গান শিল্পী চয়নিকার, নাচলেন মদন নিজে]
বার বার ফোন করেও এই বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি বিধায়ক নির্মল মাজির। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যেরও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। মেডিক্যালের অধ্যক্ষ রঘুনাথ মিশ্র বলেন, ‘সংবাদ মাধ্যমের থেকে জানলাম ওই পদত্যাগপত্রের কথা। কিন্তু সেই চিঠি তো সরাসরি স্বাস্থ্যভবনে লেখা হয়েছে। চিঠিটি আমার মারফত লেখা হলে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিতাম।’ তবে তিনি জানান, যখনকার কথা বলা হচ্ছে, তখন তিনি অন্য মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে সরকারি চিকিৎসক সংগঠন।