shono
Advertisement

ঐতিহাসিক শিল্ড ফাইনালে গোলের পাস বাড়িয়েছিলেন মনমোহন মুখোপাধ্যায়, স্মৃতি আঁকড়ে তাঁর পরিবার

সরকারি স্বীকৃতি পান দাদু, চাইছেন মনমোহনবাবুর নাতি।
Posted: 02:12 PM Jul 29, 2023Updated: 05:07 PM Jul 29, 2023

রাকেশ চক্রবর্তী: সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল। এই ফুটবলের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির বহু আবেগ। সেই আবেগের আরেক নাম মোহনবাগানও (Mohun Bagan)বটে। আজ সেই আবেগের অন্যতম একটি দিন। ২৯শে জুলাই মোহনবাগান দিবস। এই দিন ১৯১১ সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ১১ জন দামাল বাঙালি ছেলে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিল। বুট পরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে খালি পায়ে খেলতে নামেন ১১ জন তরুণ। লক্ষ্য তাঁদের তখন একটাই, হেস্টিংস এর মাথায় ইংরেজদের পতাকা উড়ছে তাকে নামিয়ে দেশের পতাকা তোলা।

Advertisement

১৯১১ সেই ঐতিহাসিক অমর একাদশের অন্যতম ছিলেন হুগলির উত্তরপাড়ার মনমোহন মুখোপাধ্যায়। ইংরেজদের বিরুদ্ধে যে গোলটি অভিলাষ ঘোষ (Abhilash Ghosh) করেছিলেন তার পাস বাড়িয়েছিলেন মনোমোহন মুখোপাধ্যায়। সেই সময় গোটা দেশের লোক তাকিয়ে শুধু ওই ১১ জনের দিকে। বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা ইংরেজদের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিল, তাঁদের দমিয়ে রাখা যাবে না। সেই দিন পা দিয়ে গল গল করে রক্ত বেরোচ্ছিল মনমোহন মুখোপাধ্যায়ের। তবুও গোটা মাঠে ইংরেজদের পা থেকে চুম্বকের মতন বল কেড়ে নিচ্ছিলেন তিনি। ১৯১১ সেই ঐতিহাসিক জয় আজও প্রতিটি বাঙালির মনে জ্বলজ্বল করছে। স্বর্ণাক্ষরে ভারতের ও ফুটবলের ইতিহাসে লেখা রয়েছে হাবুল, সুকুল, শিবদাস, মনমোহনদের নাম।

[আরও পড়ুন: নির্দল প্রার্থীর সমর্থককে পিটিয়ে ‘খুন’, ভোট পরবর্তী অশান্তিতে থমথমে নাকাশিপাড়া]

মনমোহন মুখোপাধ্যায় (Manmohon Mukherjee) চাকরি করতেন তৎকালীন রাইটার্সের পিডাব্লিউডি ডিপার্টমেন্টে। খেলার দিন সকালে তিনি উত্তরপাড়ার গঙ্গার ঘাটের স্নান সেরে রওনা দেন অফিসে। অফিসে তিনি জানান তার সেই দিন একটি জরুরি কাজের জন্য ছুটি লাগবে। যেহেতু ইংরেজদের সময় এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধেই তিনি মাঠে খেলতে নামছেন তাই তিনি অফিসকে জানাতে পারেননি আসল বিষয়। তবে সেখান থেকে বেরিয়ে কলকাতা মাঠে তিনি পৌঁছান পায়ে হেঁটেই। অধিনায়ক শিবদাস ভাদুড়ি মনমোহনকে ডাকতেন মনু বলে। ডানদিকের মাঝমাঠ থেকে খেলা পরিচালনা করার দায়িত্ব ছিল মনমোহন মুখোপাধ্যায়ের উপর। মনমোহন মুখোপাধ্যায় বংশধর তাঁর নাতি নিখিল মুখোপাধ্যায় বলেন, তিনি লোক মুখে শুনেছেন মানুষজন মনে করত মনমোহন বাবুর হয়তো দুটি ফুসফুস রয়েছে। তিনি একাই নিজেদের ডিফেন্স থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষের গোলপোস্ট অবধি ছুটে বেড়াতেন। আর চুম্বকের মতো বিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নেওয়া হয়েছিল তার প্রধান কাজ।

[আরও পড়ুন: বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে রদবদল, সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পদ থেকে সরানো হল দিলীপকে]

সেই দিনের খেলার বিবরণ একটু মনে করা যাক, মাঠজুড়ে লক্ষাধিক মানুষের ভিড়। বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ফুটবল দল ইস্ট ইয়র্কশায়ার রাইফেলসের সঙ্গে মাঠে খেলতে নামছে অবিভক্ত বাংলার মোহনবাগান একাদশ। মাঠজুড়ে এতটাই ভিড় যে দর্শকদের খেলার ফলাফল জানানোর জন্য ঘুড়ি উড়িয়ে ফলাফল জানাতে হয়েছিল। প্রথম দিকে ইস্ট ইয়র্কই জিতছিল। রাজেন সেনগুপ্ত প্রতিপক্ষের জ্যাকসনকে বাধা দেওয়ায় প্রতিপক্ষ ফ্রি -কিক পায় , মোহনবাগান গোলরক্ষক হীরালাল মুখার্জি সতীর্থ খেলোয়াড়দের প্রত্যেককেই দূরে সরে যেতে বললেন , সকলেই সরে গেলেন , কিন্তু একমাত্র ভূতি সুকুল দাঁড়িয়ে ছিলেন এই আশায় যে , শটটি তিনি হয়তো আটকে দিতে পারবেন , জ্যাকসনের ফ্রি -কিক সুকুলের গায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে বলটি গোলে ঢুকে যায়, ব্রিটিশ সমর্থকরা আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়েন। দ্বিতীয়ার্ধে মোহনবাগান খেললো একেবারে দৈত্যের মতো। ইস্ট ইয়র্কের রক্ষণভাগ একা কানু রায়ের আক্রমণকেই প্রতিহত করতে পারছিলো না, কানু রায় ও হাবুল সরকারের মধ্যে দারুন সমন্বয় ছিলো, তাতে বিপক্ষের রক্ষণ পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছিলো, খেলা শেষ হবার দশ মিনিট আগে শিবদাস আচমকা ডান দিকে ছুঁটে গিয়ে লেফট ব্যাককে ডজ করে দুর্দান্ত একটা শট নিলেন , ইস্ট ইয়র্কের গোলকিপার ক্রেসি সম্পূর্ণ পরাস্ত হলেন। প্রথম গোলের ঘুড়ি আকাশে উড়ল মোহনবাগানের নামে। খেলা শেষ হবার মাত্র দু মিনিট আগে , মনমোহন মুখোপাধ্যায় একটি চমৎকার পাস দিলেন অভিলাষ ঘোষকে, অভিলাষ দু -জন ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষককে কাটিয়ে এগিয়ে গেলেন এবং হাঁটতে -হাঁটতে গোলে বল ঠেলে দিলেন। খেলার ফলাফল হয় ২-১। প্রথমবার ইংরেজদের পরাজয় আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে পড়ে সমস্ত দর্শকরা।

মোহনবাগানের সেই ঐতিহাসিক জয় আজ ১১২ বছর অতিক্রম করল। কিন্তু আজও প্রত্যেক বাঙালির মনে মোহনবাগানের সেই জয় বারবার নাড়া দিয়ে যায়। হুগলির উত্তরপাড়ায় মনমোহনবাবুর বাড়ি। উত্তরপাড়ার টিপটপ বাসস্ট্যান্ডের সামনেই দেখা যাবে তাঁর মূর্তি। তাঁর নামে রয়েছে উত্তরপাড়ায় একটি মাঠও। মোহনবাগান দিবসে প্রতি বছর তার মূর্তিতে মাল্যদান ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন জেলার প্রতিটি ফুটবলপ্রেমী মানুষ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement