নব্যেন্দু হাজরা: বছর দুই আগেকার ছবি ফের ফিরল কলকাতার বুকে। ফের মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান তুললেন বিজেপি (BJP) কর্মীরা। হাওড়া (Howrah) স্টেশনে বঙ্গে ‘বন্দে ভারত’ এক্সপ্রেস সূচনার আগেই তাল কাটল। বিজেপি কর্মীদের আচরণের প্রতিবাদ জানান দলেরই সাংসদ (MP) সুভাষ সরকার। তিনি সকলকে শান্ত হওয়ার জন্য ঘোষণা করেন। রেলমন্ত্রী নিজে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়ে নেন। কিন্তু বিজেপি কর্মীদের এহেন আচরণে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। তিনি মঞ্চে উঠলেন না। পিছনের সারিতে গিয়ে বসলেন। যদিও মূল অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
শুক্রবার রাজ্যে প্রথম বন্দে ভারত এক্সপ্রেস (Vande Bharat Express) যাত্রা শুরু করল। সেই উপলক্ষে রেলের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু মায়ের প্রয়াণে তিনি আচমকা গান্ধীনগরে চলে যান। মায়ের শেষকৃত্যের পর এদিন নির্ধারিত সময়েই ভারচুয়ালি উপস্থিত থেকে হাওড়া স্টেশনের কর্মসূচিতে যোগ দেন মোদি। এদিকে, হাওড়া স্টেশনে সশরীরে উপস্থিত হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রেলমন্ত্রী অশ্বিণী বৈষ্ণব-সহ, বিজেপির সাংসদ, বিধায়ক-সহ একাধিক নেতা, মন্ত্রীরা।
[আরও পড়ুন: তিন সমবায়ের ভোটে নিরঙ্কুশ জয় তৃণমূলের, ফের মুখ থুবড়ে পড়ল বিরোধীরা]
হাওড়ায় অতিথিদের জন্য তৈরি মঞ্চে বসেছিলেন বিজেপির সাংসদ, বিধায়করা। মুখ্যমন্ত্রী সেখানে পৌঁছতেই তাঁকে উদ্দেশ্য করে জোর গলায় ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান তুলতে থাকেন বিজেপি কর্মীরা। তা মুখ্যমন্ত্রীর কানে পৌঁছনো মাত্র তাঁর শরীরী ভাষা বদলাতে থাকে। বোঝাই যায়, অত্যন্ত বিরক্ত, ক্ষুব্ধ হচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বিশৃঙ্খলার সঙ্গে সঙ্গেই তা সামলানোর চেষ্টা করেন বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার। তিনি বিজেপি কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, এটা সরকারি অনুষ্ঠান। এখানে কারও উদ্দেশে এভাবে কিছু বলা একেবারেই শোভনীয় নয়। সকলে যেন শান্ত থাকেন। এদিন ২৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে উপস্থিত বিজেপির মনোজ টিগ্গা বলেন, ”যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা কারা বলা মুশকিল। তবে সুরক্ষায় গাফিলতি ছিল।” আরপিএফ, জিআরপির গাফিলতি রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ তোলেন। প্রশ্ন তোলেন কীভাবে ভিআইপি জোনে এই ঘটনা ঘটল। তবে এই ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত বলে মনে করছেন রেলের আধিকারিকরা।
[আরও পড়ুন: মায়ের মৃত্যুতেও কর্তব্যে অবিচল প্রধানমন্ত্রী মোদি, বাতিল হচ্ছে না বঙ্গের কোনও কর্মসূচি]
এদিকে, রেলমন্ত্রী অশ্বিণী বৈষ্ণব মুখ্যমন্ত্রীর কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চান। রাজ্যপালও কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। কিন্তু এই ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধনী মঞ্চে উঠতে চাননি। তাঁকে অনেক বোঝানো সত্ত্বেও মঞ্চে না উঠে মঞ্চের পাশে দর্শকাসনেই বসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। আর সেখান থেকেই মাইক্রোফোন হাতে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেন। তাতে মনে করিয়ে দেন, তিনি রেলমন্ত্রী থাকার সময়ে কীভাবে বিভিন্ন রেল প্রকল্প তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী মোদির মাতৃবিয়োগের জন্য তাঁকে একাধিকবার আন্তরিক সমবেদনা জানান মুখ্যমন্ত্রী।
এনিয়ে তিনি দলের লোক বলে অস্বীকার করলেও, সভা শেষে ওই জোন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় অনেকেই তাঁদের সিকিউরিটি পাস ও দলের ঝান্ডা ফেলে যান। দুটি পাস পড়ে থাকতে দেখা যায়। একটিতে নাম রয়েছে আদিত্য পাণ্ডে, ভাইস প্রেসিডেন্ট, বিজেপি কলকাতা। অন্যটিতে সাদা-কালো দিয়ে মুছে করা হয়েছে অমিত ঘোষ, মণ্ডল প্রেসিডেন্ট, বিজেপি।