ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: ইউনেস্কোর (UNESCO) তরফে বিশ্বভারতীকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বা ‘বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান’ ঘোষণার সম্ভাবনা আরও উসকে দিলেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। বুধবার তিনি বলেন, “বিশ্বভারতীতে দুটি জিনিস হচ্ছে, যা নিয়ে আমরা গর্বিত। প্রথমটি বিশ্বভারতীর একটি ক্যাম্পাস হচ্ছে উত্তরাখণ্ডের রামগড়ে। দ্বিতীয়ত, বিশ্বের মধ্যে প্রথম ইউনেস্কোর হেরিটেজ কমিশন কোনও একটি লিভিং ইউনিভার্সিটিকে (পড়ুন বিশ্বভারতী) হেরিটেজ করার কথা ভাবছে। এটা একটা বিরাট পাওয়া।”
প্রসঙ্গত, গত বছর ১০ অক্টোবর ইউনেস্কোর ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বিশ্বভারতী (Visva Bharati University) ঘুরে দেখে। পরে এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষা রাষ্ট্রমন্ত্রী সুভাষ সরকার জানান, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চাইছেন বিশ্বভারতীকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হোক। সরকার এর জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছে।” এবার বিশ্বভারতীর হেরিটেজ স্বীকৃতি নিয়ে আশার কথা শোনালেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীও। তবে বিশ্বভারতীর অঙ্গনে থাকা পুরনো বাড়িগুলির সংস্কার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের একটি দল এই বাড়িগুলির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করেছে।
[আরও পড়ুন: এবার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সুবিধা পেতে নিজের নামে থাকতে হবে ‘সিঙ্গেল অ্যাকাউন্ট’]
তবে উপাচার্য বুধবার ভাষণে বলেন, “এই বাড়িগুলি কতদিন থাকবে জানি না। কারণ, আশ্রমের পাশের রাস্তা দিয়ে ভারী গাড়ি চলাচলের ফলে যে কম্পন হচ্ছে, তাতে সেগুলি খারাপ হয়ে যাবে। আপনারা জানেন কীভাবে রাস্তা নিয়ে নেওয়া হল। এক দল চাইছে বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য রক্ষা করতে। আর এক দল চাইছে এই ঐতিহ্য নষ্ট করতে।”
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, আশ্রম প্রাঙ্গণে উপাসনা গৃহ, শান্তিনিকেতন গৃহ ছাড়াও উত্তরায়ণে কবির স্মৃতিবিজড়িত উদয়ন বাড়ি, পুনশ্চ, উদীচি, কোনার্ক, শ্যামলীর মতো ঐতিহ্যবাহী গৃহগুলির বয়স অনুপাতে নিয়মিত সংস্কার প্রয়োজন। কবির অত্যন্ত প্রিয় শতবর্ষ প্রাচীন উত্তরায়ণের প্রথম বাড়ি ‘কোনার্কে’র আজ শোচনীয় অবস্থায়। ছাদে জল জমে স্যাঁতসেঁতে ভাব। ড্যাম্প ধরে গিয়েছে। আশ্রমিকদের কথায়, ১৯১৯ সালে এই বাড়িটি আশ্রম সীমানার বাইরে প্রথম তৈরি করেন রবীন্দ্রনাথ। ওই বছরই নভেম্বর মাসে উত্তর-পশ্চিম দিকে ‘উত্তরায়ণ’ নাম দিয়ে মাটির বাড়িতে কবি বসবাস শুরু করেন। পরে বাড়িটি পাকা করে তোলা হয়। কবি তার নাম দেন ‘কোনার্ক’। একই অবস্থা আরও এক ঐতিহ্য গৃহ ‘উদয়ন’-এর।