বিশ্বনাথন আনন্দ: খেলার পৃথিবীতে শচীন আর আমার প্রায় একই সময়ে আসা, আর আমাদের কেরিয়ার গতিপথও অনেকটাই এক। এমনকী, আজও আমাদের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। আমি যেমন এখন খেলি শুধুমাত্র উপভোগ করতে, শচীনকেও রোড সেফটি সিরিজ খেলতে নামতে দেখি একই কারণে। খেলাটাকে উপভোগ করতে। শচীন এটা করে কারণ, খেলাটাকে ও এখনও ভালবাসে। জীবনে একমাত্র ক্রিকেটই বুঝেছে ও, ক্রিকেটই ওর কাছে একমাত্র ধ্যাানজ্ঞান। আর ওর মতো একনিষ্ঠ আর প্যাশনেট পারফর্মারের পক্ষে ক্রিকেটকে ছেড়ে থাকা অসম্ভব প্রায়।
নয়ের দশকে শচীনকে ঘিরে একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটতে দেখতাম, যা আর কাউকে নিয়ে কখনও দেখিনি। প্রতিটা ভারতীয় ওকে নামের প্রথম অংশ ধরে ডাকত। যা বোঝায়, শচীনকে কতটা ভালবাসে দেশ। শচীন যেন প্রতিটা দেশবাসীর আপন সন্তান ছিল, যার সঙ্গে সবার একটা হৃদ্যতার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ক্রিকেট সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যার সমাধানের নাম ছিল শচীন, শচীন ছিল আদতে পাশের বাড়ির ছেলে। কখনও শচীনকে মহাতারকা হিসাবে দেখেনি ভারত। সব সময় নিজের সন্তান হিসাবে দেখেছে। ভালবেসেছে। যত্নআত্তি করেছে। আর সবচেয়ে ভাল ব্যাপার হল, কেরিয়ারের শেষ দিন পর্যন্ত শচীন সেই পাশের বাড়ির ছেলের ইমেজটাকে ধরে রেখে গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: ‘শচীন পাজি কতটা ভাল বলব না, তবে উনি আমার অনুপ্রেরণা’, বললেন অজিঙ্ক রাহানে]
আমি আমাদের দু’জনের কেরিয়ারের মিল নিয়ে বলছিলাম। সবচেয়ে বড় মিল স্থায়িত্ব আর মেয়াদে। চব্বিশ বছর ধরে ক্রিকেট খেলেছে শচীন। আর আপনি যখন এত লম্বা সময় ধরে খেলেন, তা হলে একটাই কথা বলতে হয়–আপনি সব ছেড়েছুড়ে শুধু ওই খেলাটাই চিরকাল খেলতে চেয়েছেন। কুড়ি বছর পরেও যে টানে কখনও মরচে পড়েনি শচীনের।
[আরও পড়ুন: ‘আমার বাড়িতে তুলিতে হাতেখড়ি’, শচীনকে নিয়ে অভিজ্ঞতার কথা জানালেন শিল্পী সনাতন দিন্দা]
আমাদের মধ্যে মিল আরও একটা আছে– বিশ্বখেতাবের অপেক্ষায়। শচীনকে বিশ্বকাপ জিততে বাইশ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। আমিও চেস অলিম্পিয়াড জিততে প্রচুর অপেক্ষা করেছি। দেখুন, টিম স্পোর্টের সঙ্গে ইন্ডিভিজুয়াল স্পোর্টের কোনও তুলনা চলে না। আর ভারতের হয়ে খেললে, মাত্রাটাই অন্য পর্যায়ে চলে যায়। টিম হিসাবে নিজ নিজ খেলায় সেরা হওয়ার স্বপ্ন সবাই দেখে। কিন্তু শচীন সেই স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে অবিশ্বাস্য প্যাশন আর অসীম একাগ্রতার সঙ্গে। ২০১১ বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচ আমি দেখেছি। আর শচীন যখন জিতেছিল বিশ্বকাপ, দেখে খুব ভালও লেগেছিল। স্বপ্নপূরণ হয়েছিল ওর। আর ওর চেয়ে কেউ বিশ্বজয়ের যোগ্য ছিল না।
শচীনের পঞ্চাশ বছরের জন্মদিনে একটাই কথা বলতে চাই ওকে। আগামী দিন তোমার আরও সুন্দর হোক।