অর্ণব আইচ: ঘটনাটা ঘটেছিল বিধানসভা ভোটের আগে। আচমকা মধ্য কলকাতার গণেশ টকিজের কাছে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল বিবেকানন্দ ফ্লাইওভার। এর পর কেটে গিয়েছে তিন বছর। এবার লোকসভা ভোট দোরগোড়ায়। রবিবারই ছিল সেই দিনটি। ৩১ মার্চ। ট্রাম লাইনের উপর ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন মোট ২৮ জন। সকাল থেকেই গণেশ টকিজের মোড়ে মৃতদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়েছে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল। বড় ব্যানার তৈরি করে সামনে ফুল ছড়িয়ে অথবা মঞ্চ তৈরি করে বক্তৃতা রেখে মৃতদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাজনৈতিক নেতারা।
[ আরও পড়ুন: সরকারি গাড়িতে চেপে প্রচার! বিতর্কে রানাঘাটের তৃণমূল প্রার্থী রূপালী বিশ্বাস]
কিন্তু রাস্তার মোড়ে দোকানের মালিক মণীশ গুপ্তার চোখে যে এখনও কাটেনি তিন বছর আগের দিনটির আতঙ্ক। সেদিন একটুর জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। এখনও দাঁড়িয়ে থাকা উড়ালপুলের দিকে তাকিয়ে বললেন, “স্পষ্ট মনে আছে সেদিনের কথা। আর কয়েকদিন পরই ছিল বিধানসভা ভোট। যখন ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ে, তার কিছুক্ষণ আগে তার নিচ দিয়েই যাচ্ছিল ভোটের প্রচারের মিছিল। কোন দলের তা মনে নেই। বিধানসভা ভোট পেরিয়ে এসে গিয়েছে লোকসভা ভোট। বিভিন্ন দলের দাদারা এবারও ভোট চাইতে আসবেন। কিন্তু যে আতঙ্ক মনে ছাপ ফেলে দিয়েছে, তা কেউ ফিরিয়ে নিতে পারবে না।”
তিন বছর পরও গণেশ টকিজের মোড়ে জায়গাটির দিকে তাকালে যেন গা শিরশির করে ওঠে মহাদেব মালিকের। সেদিন তিনি রাস্তার মোড়ে মন্দিরে পুজো দিতে এসেছিলেন। তিনি ছিলেন মন্দিরের ভিতরে। বাইরে যাঁরা ছিলেন, সে পথচারী হোন বা দোকানদার, হয় প্রাণে বাঁচেননি, না হয় আহত হয়েছেন। প্রচণ্ড ধুলো উড়িয়ে ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ার পর মণীশ, মহাদেবরাই প্রথমে উদ্ধারকাজে ছুটে গিয়েছিলেন। এদিন সঞ্জয় মেহরোত্রা, গজেন্দ্র শেঠিয়া, যতন যাদব, তপন দত্ত, গুলাবচাঁদ মালি, অজয় কোন্ডাই, সরিতা কোন্ডাই ও আরও অনেকের মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁদের প্রত্যেকের মৃত্যু হয়েছে বিবেকানন্দ ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ে।
[ আরও পড়ুন: মোদিকে মুখোমুখি বিতর্কে বসার চ্যালেঞ্জ মমতার]
মৃতদের পরিজনদের অনেকেই রাজ্য সরকারের চাকরি গ্রহণ করেছেন। ত্রাণভবনে চাকুরিরত এই পরিজনদের মধ্যে অন্তত চারজন মহিলা। কেউ হারিয়েছেন তাঁর বাবা আবার কেউ স্বামীকে। তিন বছরে আগের দিনটিতে ফ্লাইওভারের অংশ এসে চাপা দিয়েছিল গুলাবচাঁদ মালির দোকানটিকে। ছেলে বিকাশ কোনওমতে দোকানের ভিতর থেকে উদ্ধার করেছিলেন বাবার রক্তাক্ত দেহটি। এদিন গিরিশ পার্কের লালমাধব মুখার্জি লেনে বাবার ছবির সামনে বসে চোখে জল নিয়ে বসে আছেন তাঁর চার মেয়ে। ছেলে বিকাশ বললেন, “বিধানসভা ভোটের আগে ঘটনা ঘটেছিল। লোকসভা ভোটও চলে যাবে। কিন্তু মাথার উপর বড় ছাতা যে বাবা ছিলেন, তিনি আর ফিরবেন না। চাকরি পেয়েছি। কিন্তু তা স্থায়ী হলে আরও নিশ্চিত হতাম। যাদের জন্য বাবাকে চলে যেতে হয়েছে, তাদেরও বিচার চাই।”
[ আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীকে ‘চোর’ কটাক্ষ, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের মন্তব্য ঘিরে শুরু বিতর্ক]
একই কথা তপন দত্তর ছেলে ধীমান দত্তর মুখে। বাবার মৃত্যুর পর বড়বাজারের টেগোর ক্যাসল স্ট্রিটের ঘর ছেড়ে তাঁরা চলে গিয়েছেন হাওড়ার বেলুড়ে। বড়বাজারে থাকলে গণেশ টকিজের আশপাশ দিয়ে যেতে হবে। আর গেলেই ফিরে আসবে আতঙ্কের স্মৃতি। ফ্লাইওভার ভেঙে পড়া মামলায় লালবাজারের গোয়েন্দাদের তদন্ত শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনও চার্জগঠন হয়নি।
The post ভোটের আবহেও চাঙ্গা পোস্তার স্মৃতি, বিচার চান নিহতদের পরিজনরা appeared first on Sangbad Pratidin.