সুকুমার সরকার, ঢাকা: প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ২৮৬ মহিলাকে বিয়ে করা লালমনিরহাটের যুবক জাকির হোসেনের অন্তত ৭০০ বিয়ের করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার সেই বাসনা নাকি থমকে গিয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্যই দিয়েছে জাকির হোসেন।
গত বুধবার ঢাকার তেজগাঁও থানায় এক ছাত্রীর ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার হয় জাকির। তেজগাঁও থানার পুলিশ জানায়, জাকির বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন সময় নিজেকে অবিবাহিত এবং সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তরুণীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলত। তাদের মধ্যে অনেককে সে বিভিন্ন সময় বিয়ে করে। বিয়ের পর জাকির নববধূর বাড়িতে থাকত এবং কৌশলে তার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিত। এসব বিয়ের খবর সে কোনও স্ত্রীকে জানতে দিত না। সবারই ব্যক্তিগত ভিডিও রেকর্ড রাখত। কেউ প্রতিবাদ করলে ওই সব ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখাত।
জাকির ১৪ বছর আগে অর্থাৎ ২১ বছর বয়সে (২০০৫ সাল) প্রথম বিয়ে করে। এরপর প্রতিবছর সে একটি করে বিয়ে করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সমাজের উচ্চবিত্ত, আত্মনির্ভরশীল, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী মহিলাদের টার্গেট করত প্রতারক জাকির হোসেন। এরপর ভুয়ো নাম দিয়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে তাদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাত। এক্ষেত্রে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে নিজেকে বেসরকারি অফিসের বড় কর্মকর্তা, আবার কখনও বড় ব্যবসায়ীর মতো মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রলুব্ধ করত। কখনও নিজের এসব মিথ্যা তথ্য সম্বলিত ফেসবুকে পাত্রী চাই বিজ্ঞাপন দিত। এসব দেখে অনেক তরুণী নিজে থেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। আবার কোনও টার্গেট মহিলা তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট না করলে তাঁকে মেসেঞ্জারে মেসেজ পাঠাত। বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার আগে মহিলাদের বলত, তার ঢাকা-সহ বিভিন্ন জায়গা প্লট ও ফ্ল্যাট আছে।
[আরও পড়ুন: ১৪ বছরে ২৮৬টি বিয়ে! ধৃত বাংলাদেশের ‘গুণধর’ যুবক]
এরপর যখন বুঝতে পারত তরুণীরা তার প্রতি পুরো দুর্বল হয়ে গিয়েছেন তখন কৌশলে বিয়ের প্রস্তাব দিত। একপর্যায়ে ভুয়ো কাজী দিয়ে মিথ্যা কাবিননামায় বিয়ে করত। কিন্তু বিয়ের পরই তার আসল চেহারা বেরিয়ে আসত। একের পর এক ফন্দি এঁটে নববধূ ও তার পরিবারের কাছ থেকে অর্থ ও সোনার গয়না হাতিয়ে নিত। পুলিশ জানায়, প্রতারণার ফাঁদ পেতে তরুণীদের সর্বস্ব লুটে নিতে জাকির হোসেনের রয়েছে এক সিন্ডিকেট চক্র। সংঘবদ্ধ ওই চক্রে রয়েছে নকল কাজী ও মৌলবি। এ ছাড়া চক্রের কিছু নারী-পুরুষ নিজের মা-বাবা ও ভাইবোন বানিয়ে জাকির তরুণীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিত। এভাবে বিয়ের নামে গত দুই বছরে জাকির ২২ ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী মহিলাকে ধর্ষণ করেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার এসআই তৌফিক আহমেদ বলেন, গত বছর জাকির এক তরুণীকে বিয়ে করার কথা বলে তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুললেও তাঁকে বিয়ে করেনি। এ ঘটনায় ওই তরুণী মিরপুর থানায় ধর্ষণের মামলা করলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তখন তার বহু বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হয়। তিনি আরও বলেন, গত বছরের জুনে জাকির জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আরও তিন তরুণীকে বিয়ে করে। জাকির সর্বশেষ ফার্মগেটের এক তরুণীকে বিয়ে করার কথা বলে তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়লেও বিয়ে করেনি। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার ওই তরুণী তেজগাঁও থানায় জাকিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করলে তাকে গ্রেপ্তার করে দুই দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এতগুলো বিয়ে করার সহযোগিতার করার অভিযোগে জাকিরের প্রথম স্ত্রীকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
The post জাকিরের টার্গেট ছিল ৭০০ বিয়ে করার, গ্রেপ্তার হওয়ায় থমকে গেল ২৮৬ নম্বরে appeared first on Sangbad Pratidin.