সোম রায়: কালই উঠে গিয়েছিল ১৪৪ ধারা। ফলে কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল ভূস্বর্গের পরিবেশ। বেশ কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়েই সোমবার রাতে ঘুমোতে গিয়েছিলাম। কিন্তু মঙ্গলবার সকালটা এল ফের একরাশ অনিশ্চয়তা নিয়ে। ঘুম ভাঙতেই জানলাম পাক অধিকৃত কাশ্মীরে প্রত্যাঘাত করেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। তড়িঘড়ি বেরিয়ে পড়লাম পরিস্থিতি বুঝতে।
দেখলাম রাস্তাঘাট শুনশান। স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখ থমথমে। দু-পা অন্তর তল্লাশির জন্য গাড়ি আটকাচ্ছে সেনাবাহিনী। সাংবাদিক পরিচয় দিয়েও নিস্তার নেই। ব্যাগ, ল্যাপটপ, সবই খুলে তন্নতন্ন করে পরীক্ষা করে দেখছেন তাঁরা। একটু এগোতেই প্রথম চোখে পড়ল ওষুধের দোকানে লম্বা লাইন। যুদ্ধ না মহামারী? এ কীসের প্রস্তুতি না বুঝেই এগিয়ে চললাম। দেখলাম চাল-ডাল, আনাজপাতির দোকানেও ভিড় উপচে পড়েছে। কারণ জানতে চাইলে উত্তর এল, যুদ্ধ হলে খাব কী? তাই আগাম মজুত করতে বেরিয়ে পড়েছেন তাঁরা। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে জানলাম, কিছুদিন আগেই প্রশাসনের তরফে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত করতে স্থানীয় বাসিন্দাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তখন থেকেই যুদ্ধ-যুদ্ধ বাতাবরণ ছড়িয়ে পড়েছে উপত্যকায়। এবার সেই আশঙ্কাই যেন সত্যি হতে চলেছে। তাই ওষুধ, খাদ্যসামগ্রী মজুত করার পালা শুরু হয়েছে।
[ বায়ুসেনার প্রত্যাঘাতে নিকেশ কান্দাহার অপহরণ কাণ্ডের মূলচক্রী ]
তখনই আমার মনে পড়ল গাড়ির পেট্রোল ট্যাংকের কথা। ছুটলাম পেট্রোল পাম্পে। সেখানে দেখি ‘নো পেট্রোল’ বোর্ড ঝুলছে। তেমনই বেহাল দশা ইন্টারনেট পরিষেবার। দীর্ঘক্ষণের চেষ্টাতেও অফিসে ‘নেট-বার্তা’ পাঠানোর উপায় নেই। অগতির গতি একমাত্র টেলিফোন। তাও সর্বত্র নেটওয়ার্ক নেই। অগত্যা সকালের নাস্তা সারতে দাঁড়ালাম রাস্তার ধারের এক দোকানে। পুরি-সবজি খাওয়ার পর দোকানির সঙ্গে একটু আধটু মত বিনিময়ের পরই বেরিয়ে এল অকপট কিছু মন্তব্য।
জানালেন, জন্ম থেকেই এই যুদ্ধ-যুদ্ধ বাতাবরণের মধ্যে দিন কাটছে। তাই এবার এসপার না হলে ওসপার দেখতে চান তাঁরা। যা হয় একবারে হয়ে যাক। প্রতিদিনের অশান্তি তাঁদের আর ভাল লাগছে না। তবে যাই হোক, পর্যটকদের প্রতি আপ্যায়নে খামতি নেই তাঁদের। কারণ পর্যটকরাই যে তাঁদের লক্ষ্মী। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পর্যটক না এলে কার্যত ভাতে মারা যাবেন তাঁরা। তাই যাই হোক দ্রুত মীমাংসা চান ভূস্বর্গবাসী। তাঁদের মতে, যে কোনও হামলাই ধ্বংসাত্মক। তা সে পুলওয়ামায় জঙ্গিহানাই হোক বা অন্য কিছু। একমাত্র আলোচনা ছাড়া এই সমস্যা সমাধানের অন্য পথ নেই।
[ ‘দেশের ভার নিরাপদ হাতেই রয়েছে’, প্রত্যাঘাতের পর দেশবাসীকে বার্তা প্রধানমন্ত্রীর ]
The post যুদ্ধের আশঙ্কায় কাঁপছে কাশ্মীর, বাসিন্দাদের খাদ্যসামগ্রী মজুত করার নির্দেশ appeared first on Sangbad Pratidin.