সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গোহত্যার গুজবে ফের উত্তপ্ত উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর। পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধে মৃত্যু হল এক পুলিশ ইন্সপেক্টর-সহ এক বিক্ষোভকারীর। আহত কমপক্ষে ১০ জন। কিন্তু এটা কি নিছকই একটা ঘটনা, নাকি এর পিছনে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র? এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে তদন্তকারীদের মনে৷ অনেকেই বলছেন ছক কষেই ঘটানো হয়েছে এমন একটি ঘটনা৷ যাতে লোকসভার আগে আগে আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোবলয়ের রাজনীতি৷
[‘জিও কাজ করছে না’, দীপবীরের রিসেপশনে বিদ্রুপের মুখে আম্বানি]
কী ঘটেছিল সোমবার? লখনউ থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে বুলন্দশহরের চিংরাবতী এলাকায় খোলা মাঠের মধ্যে বেশ কয়েকটি গরুর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। উত্তেজিত হয়ে ওঠেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে বেশ কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী বা গোরক্ষক সংগঠনের সদস্যরা। তাঁরা মৃত গরুর দেহগুলি ট্র্যাক্টরে করে তুলে সোজা নিয়ে চলে যান চিংরাবতী পুলিশ চৌকির সামনে৷ সেখানে গোহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। দাবি করেন, ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারি ও উপযুক্ত শাস্তির৷ সায়না রোড অবরোধেও করে বিক্ষোভকারীরা। অবরোধ তুলে পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ বাহিনী। অভিযোগ, প্রথমে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে বচসা শুরু করে। এরপরই পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে শুরু করে৷ পুলিশের একাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। হিংসা চালানো হয় চিংরাবতী পুলিশ চৌকিতেও৷ পাথরের আঘাতে গুরুতর আহত হন সায়না থানার স্টেশন হাউস অফিসার ইনস্পেক্টর তথা দাদরি মামলার তদন্তকারী অফিসার সুবোধ কুমার সিং। আর এই সম্পূর্ণ ঘটনায় গভীর ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের অন্যতম আধিকারিক রাজকুমার ভাস্কর৷ তিনি বলেন, “সম্ভবত এই ঘটনা ঘটানোর জন্যই ইচ্ছাকৃত ভাবে মাঠের মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছিল গরুর মৃতদেহ৷ কারণ, যদি কেউ গরুর ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তিনি নিশ্চয়ই ফাঁকা মাঠের মধ্যে এগুলিকে ফেলে রাখবে না৷ আর রাজ্যের পূর্ববর্তী পরিস্থিতির কথা মাথায় রাখলে কোনও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের পক্ষে এই কাজ করা সম্ভবপর নয়৷ তাই মনে হয়, সংঘর্ষ বাধানোর ছকেই এমন কাজ করা হয়েছে৷” সূত্রের খবর, সোমবারই বুলন্দশহরে ধর্মীয় রীতি পালনের জন্য হাজির হয়েছিলেন প্রায় দশ লক্ষ সংখ্যালঘু মানুষ এবং যে রাস্তায় অবরোধ চলছিল সেখান দিয়েই তাঁদের গন্তব্যে যাওয়ার কথা ছিল৷ ফলে প্রশাসন কড়া হাতে ঘটনার মোকাবিলা না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত বলে, আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
[ঘোষিত আইসিএসই-আইএসসি পরীক্ষার সূচি, নিয়মে একাধিক বদল]
বুলন্দশহর কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ ঘটনায় ২৭ জন জ্ঞাত ও ৬০ জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে৷ মৃতদের পরিবার পিছু ৫০ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ৷ দু’দিনের মধ্যে পুলিশকে সম্পূর্ণ ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট পেশ করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ মঙ্গলবারও উত্তেজনা বজায় রয়েছে এলাকায়৷ মোতায়েন রয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও এলাকায় টহল দিচ্ছে ব়্যাফ৷ এই ঘটনাকে ঘিরে বাড়তে শুরু করেছে রাজনৈতিক তরজাও৷ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে আক্রমণ শানিয়েছে কংগ্রেস৷ রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ যোগী এমনই জানিয়েছে রাহুল গান্ধীর দল৷