shono
Advertisement

আমলাদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা! প্রস্তাবিত ‘ক্যাডার রুলস’সংশোধনের প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর

মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের এই সংশোধনের প্রস্তাব বাতিল করার দাবি তুলেছেন।
Posted: 09:28 PM Jan 18, 2022Updated: 09:28 PM Jan 18, 2022

মলয় কুণ্ডু: কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত ‘ক্যাডার রুলস’ সংশোধনের তীব্র প্রতিবাদ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, সংশোধিত করে নয়া ক্যাডার রুলস হলে কেন্দ্র–রাজ্যের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিত্তি নষ্ট হবে, তেমনই ধাক্কা খাবে রাজ্যের প্রশাসনিক কাজকর্মও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (Narendra Modi) চিঠি লিখে মুখ্যমন্ত্রী এই সংশোধনের প্রস্তাব বাতিল করার দাবি তুলেছেন। চিঠিতে তাঁর বক্তব্য, “এইধরনের সংশোধন যে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থীই নয়, একইসঙ্গে কেন্দ্র–রাজ্য সহমতের ভিত্তিতে আইএএস ও আইপিএস অফিসারদের নিয়োগ সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়াও নষ্ট হয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় ডেপুটেশন রিজার্ভে ডেপুটেশনের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রের মতামত চাপিয়ে দেওয়া হবে।”

Advertisement

১৯৫৪ সালের আইএএস (ক্যাডার) রুলসের সংশোধনের প্রস্তাব এনেছে কেন্দ্র। এই আইন অনুযায়ী আইএএস (IAS) বা আইপিএস (IPS) আমলাদের রাশ কেন্দ্র ও রাজ্যের পারস্পরিক মত আদানপ্রদানের ভিত্তিতেই স্থির হয়ে থাকে। রাজ্য প্রশাসনের অভিযোগ, আইন সংশোধন করে আমলাদের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখার পথেই হাঁটতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই সংশোধন হলে আমলাদের রাজ্যে নিয়োগ, কোন পদের দায়িত্বে তিনি যাবেন, এমন সব বিষয় কেন্দ্রই ঠিক করে দেবে। সেখানে রাজ্যের মতামতের প্রায় কোনও গুরুত্বই আর থাকবে না। এতদিন পর্যন্ত আমলা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকলে তার রাশ কেন্দ্রের হাতে এবং রাজ্যে থাকলে তা নিয়ন্ত্রিত হয় রাজ্যের প্রশাসনিক কাজের উপর। কিন্তু সংশোধিত আইনে রাজ্যের ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

[আরও পড়ুন: ‘ট্যাবলো বাতিলের সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই’, বিতর্ক থামাতে মমতাকে চিঠি রাজনাথের]

এর বিরুদ্ধেই সরব হয়েছেন মমতা (Mamata Banerjee)। গত ১৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে তাঁর আপত্তির কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, এমনিতেই দেশে আইএএস, আইপিএস অফিসার কম। ফলে কাজের জন্য রাজ্যকে অনেক কম অফিসার নিয়েই চালাতে হয়। তাঁরাই রাজ্যের প্রশাসনিক, নীতি নির্ধারণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের দেখভাল ও ব্যবস্থা করেন। যত দিন যাচ্ছে রাজ্যের উন্নয়ন ও মানবিক কাজের পরিধি তত বাড়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় সরকার নিজের মতো করে অফিসারদের কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে নিলে তা রাজ্যের কাজ মারাত্মক ক্ষতি করবে। কোনও একটি কাজের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারকে কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে চাইলে, রাজ্য যে পরিকল্পনা করেছে, তা আটকে যাবে। অফিসারের পক্ষে মানসিক, উদ্দীপনা ও আত্মবিশ্বাসের পক্ষেও তা যথেষ্ট ক্ষতিকারক হবে। মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভপ্রকাশ করে চিঠিতে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা স্মরণ করিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে লিখেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার হঠাৎই রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের কাজে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছিল। সংশোধিত এই আইনে এই ধরনের অবাঞ্ছিত ঘটনাকেই মান্যতা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

[আরও পড়ুন: প্রার্থীদের অপরাধ যোগ লুকাচ্ছে দল, বাতিল হোক রেজিস্ট্রেশন, শীর্ষ আদালতে দায়ের মামলা]

সংশোধিত আইনে বলা হচ্ছে, আমলাদের ক্ষেত্রে এইধরনের বিষয়ে যদি রাজ্য সরকার কেন্দ্রের সঙ্গে সহমত না হয়, তবে কেন্দ্রীয় সরকারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। আপত্তি থাকলেও রাজ্য সরকারকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়িত করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “এই ধরনের সংশোধন যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর স্থায়ীভাবে আঘাত আনতে চলেছে। আমলাদের নিয়োগ, ডেপুটেশন, পদের ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্যের সহমতের দরকার পড়বে ন। ফলে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের প্রয়োজন মেটাবে। রাজ্য সরকারগুলি এক্ষেত্রে বঞ্চিত হবে। যা কখনওই কাম্য নয়।” তাই মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, পারস্পরিক আলোচনা, দেওয়া নেওয়ার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা দীর্ঘদিনের এইব্যবস্থা যেন নষ্ট না করা হয়। মহাত্মা গন্ধীর বক্তব্য, ‘ইন্ডিয়া রিসাইডস ইন ইটস স্টেটস’ তুলে ধরে মমতা (Mamata Banerjee) বুঝিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যগুলির উন্নতি ও স্থানীয়ভাবে সমস্যার মোকাবিলার মধ্যেই রয়েছে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন। যেহেতু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেও দীর্ঘদিন ধরে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তাই অনেকের থেকে ভাল এই বিষয়টি তিনি বুঝবেন বলে আশা প্রকাশ করেন মমতা। তাই এ ধরনের কোনও সংশোধন অবিলম্ব বাতিল করে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement