সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: গণতন্ত্রের মহোৎসব এলে প্রায় প্রতিবারই অশান্ত হয়ে ওঠে বাংলা (West Bengal)। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সাম্প্রতিক অতীতের ছবিটা বদলায়নি এবারেও। আর কয়েক ঘণ্টা পর শুরু হয়ে যাবে রাজ্যের প্রথম দফার নির্বাচন (West Bengal election 2021)। প্রতি বারই অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা যে একশো শতাংশ সফল হয় না তা বলাই বহুল্য। তাই এবার নিজেদের মতো করে সেই আবেদন দেশের সাংবিধানিক প্রধানদের কাছে পৌঁছে দিল্লিতে (Delhi) উপস্থিত হয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের (Purba Medinipur) দুই যুবক। আর তাঁরা এই প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার রাস্তা সাইকেলে পাড়ি দিয়েছেন। তাঁরা অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও রক্তপাতহীন নির্বাচনের দাবিতে দেখা করতে চান রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী (PM Narendra Modi) এবং নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে।
গত ৮ মার্চ রাজধানীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের সুতাহাটা থানা এলাকার বাসিন্দা বছর পঁয়তাল্লিশের কৃষ্ণেন্দু এবং ভগবানপুর থানার এলাকার বাসিন্দা বছর ছাব্বিশের অর্পণ ত্রিপাঠী। পূর্ব মেদিনীপুর থেকে তাঁরা ভায়া কলকাতা দিল্লি পৌঁছেছেন। কলকাতায় রাজভবন এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন।
পেশায় হস্তশিল্প সামগ্রীর ব্যবসায়ী কৃষ্ণেন্দু। অর্পণ সদ্য কলা বিভাগে স্নাতক হয়েছেন বাজকুল মিলনী মহাবিদ্যালয় থেকে। তবে এই প্রথম নয় গুরুত্বপূর্ণ সামজিক ইস্যুতে আগেও কৃষ্ণেন্দু সাইকেলযাত্রা করেছিলেন। তিন বছর আগে কন্যাসন্তান, অরণ্য এবং নদী বাঁচানোর ডাক দিয়ে সাইকেল বাংলাদেশ পর্যন্ত গিয়েছিলেন কৃষ্ণেন্দু। তারপর থেকে এলাকায় বেশ পরিচিতি পান তিনি।
কৃষ্ণেন্দু জানিয়েছেন, সম্প্রতি অর্পণের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় নির্বাচনে হিংসার বিষয়ে কথা হচ্ছিল। তখন হঠাৎই তাঁদের মাথায় আসে, এ ব্যপাারে কোনও উদ্যোগ নিলে কেমন হয়! যেমন ভাবা, তেমন কাজ। ঠিক করেন দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দেবেন। আবেদন করবেন পশ্চিমবঙ্গে যাতে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়। সেই মতো রাজ্যপাল ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অফিস হয়ে বুধবারই দিল্লি পৌঁছে গিয়েছেন তাঁরা।
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং নির্বাচন কমিশনে দেখা করার সময় চেয়ে আগেই ই-মেল করেছিলেন। কিন্তু উত্তর আসেনি। তবে তাঁরা দমে যাননি। বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের রিসেপশনে গিয়ে জমা দিয়ে এসেছেন স্মারকলিপি। আর শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করে উত্তর না পেলে শুক্রবার রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়েও একইভাবে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা।
[আরও পড়ুন: জঙ্গলমহলে ভোটের আগের দিন ছত্রধরকে তলব NIA’র]
কৃষ্ণেন্দু বলছিলেন, “রাজ্যে নির্বাচন এলেই কী ধরনের হিংসা হয়, তা আর বলার প্রয়োজন রাখে না। তাই আমরা সাংবিধানিক প্রধানদের কাছে আবেদন করতে এসেছি, যাতে এই ঘটনা আর না হয়।”
কৃষ্ণেন্দু ও অর্পণ যে সাইকেলে চেপে দিল্লি এসেছেন, তার সামনে ক্যারিয়ারে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি-সহ রয়েছে ‘সংকল্প যাত্রা’-র পোস্টার। টি-শার্টেও সেই একই লে-আউট। সাইকেলে দিল্লি আসার পথে তাঁদেরকে ঘিরে জায়গায় গায়গায় মানুষের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। কেন এভাবে সাইকেল দিল্লি চলেছেন সে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। নিজেদের বক্তব্য সেই মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন দু’জনে। পালটা তাঁদের কাছ থেকে পেয়েছেন এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ। শুধু শুকনো উৎসাহ দেওয়াই নয় চলার পথে কেউ জল, মিষ্টি, দুপুর বা রাত্রের খাবারও দিয়েছেন।
সচেতন সাধারণ নাগরিক হিসাবে একটি চেষ্টা করেছেন কৃষ্ণেন্দু-অর্পণ। এখন দেখার শুধু তাঁদের এই প্রয়াস কতটা সার্থক হয়।