সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পিকে নামে বাঙালি এতদিন একজন সফল কোচকেই চিনত। তিনি ছিলেন প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। ময়দানে তাঁর সাফল্যের খতিয়ান দেখলে ঈর্ষা হবেই। পিকে নামের আরও এক ব্যক্তি সেই সফল কোচেদের তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেললেন। তিনি প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor )। জনসমক্ষে অমিত শাহ (Narendra Modi), নরেন্দ্র মোদিদের (Narendra Modi) বিরুদ্ধে তিনি চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন। বাজি রেখেছিলেন নিজের পেশাকে। আজ তাঁর স্ট্র্যাটেজিতে লড়াই করেই বাজিমাত করল তৃণমূল কংগ্রেস। বাজিমাত করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবু, শেষবেলায় সকলকে অবাক করে দিয়ে প্রশান্ত ঘোষণা করে দিলেন, তিনি আর রাজনৈতিক কৌশলীর পদে থাকবেন না।
উনিশের হতাশাজনক ফলের পর প্রশান্ত কিশোরকে দলের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ করে তৃণমূল (TMC)। সেসময় তৃণমূলকর্মীরা ছিলেন বিমর্ষ। দুর্নীতির অভিযোগে দুষ্ট স্থানীয় নেতাদের প্রতি বহু ক্ষোভ জমে ছিল সাধারণ মানুষের মনে। দায়িত্ব নিয়েই পিকে শুরু করলেন দলের শুদ্ধিকরণের কাজ। তৃণমূলস্তরে সমীক্ষা, স্থানীয় ইস্যু নিয়ে কাজ এবং সেইমতো রণকৌশল তৈরি করা। কেন্দ্র ধরে ধরে সাধারণ মানুষের সমস্যা মমতার কান অবধি পৌঁছে দেওয়াটাই ছিল তাঁর আসল উদ্দেশ্য। সেটা সফলভাবে করতে পেরেছেন বলেই শেষপর্যন্ত বাজিমাত করল তৃণমূল। ‘দিদিকে বলো’, ‘দুয়ারে সরকার’, ‘পাড়ায় সমাধানে’র মতো কর্মসূচি রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) একেবারে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে বা প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার জেরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে জনমত গঠিত হচ্ছিল, সেটাকেও আটকে দেন পিকে।
[আরও পড়ুন: ‘মাস্টারমশাই’কে হারিয়ে সিঙ্গুরে জিতলেন বেচারাম মান্না, জয়ী লাভলিও]
বহিরাগত ইস্যু তুলে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রভাব কার্যত নস্যাৎ করে দেন পিকে স্যার। সেই সঙ্গে ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’ স্লোগান তুলে বাঙালি অস্মিতাকেও জাগিয়ে তুললেন পিকে। প্রশান্তের সব পরিকল্পনা যে সফল হয়েছে, দিনের শেষে ফলাফলে সেটাই প্রমাণিত হল। আসলে অনেক আগে থেকেই মমতার জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন প্রশান্ত কিশোর। সম্ভবত সেকারণেই, নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা যখন বুক বাজিয়ে ২০০ আসন জয়ের দাবি জানাচ্ছিলেন, তখনও পিকে দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করেন, “বিজেপি বাংলায় দুই অঙ্ক পেরবে না। ভাল ব্যাবধানে জিতবেন মমতা।” ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, বিজেপি ১০০ পেরোলে রাজনৈতিক পরামর্শদাতার কাজ তিনি ছেড়ে দেবেন।
[আরও পড়ুন: ‘দিদি-দলীয় কর্মীদের শক্তির কাছে মুখ পুড়ল মোদি-শাহদের’, টুইটে খোঁচা ডেরেকের]
ফলপ্রকাশের পর দেখা গেল অক্ষরে অক্ষরে মিলে গিয়েছে পিকের ভবিষ্যৎবাণী। তৃণমূল জিতেছে বহু ব্যবধানে। বিজেপি আটকে গিয়েছে একশোর নিচে। মোদি-শাহদের বিপুল প্রচার কাজে আসেনি। তৃণমূল স্তরে কাজ করার সুফল পেয়েছেন মমতা। এহেন সাফল্যের পরও পিকে শেষবেলায় যেন বোমা ফাটালেন। জানিয়ে দিলেন, তিনি আর রাজনৈতিক পরামর্শদাতার পেশায় থাকছেন না। জীবনে ‘অন্য কিছু’ করতে চান। কেন এই সিদ্ধান্ত? সেটা অবশ্য তিনিই বলতে পারবেন। তিনি হয়তো সাফল্যের শীর্ষে থেকেই পেশাটা ছাড়তে চাইছিলেন। তবে, বেশ কিছুদিন ধরেই প্রশান্ত কিশোরের রাজনীতিতে যোগ দেওয়া নিয়ে একটা জল্পনা ছিল। সেটাই কি তাহলে সত্যি হতে চলেছে? এখন প্রশ্ন সেটাই।