দীপঙ্কর মণ্ডল: মাধ্যমিকের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চলার মধ্যেই নম্বর কমানো এবং বাড়ানোর বায়না অব্যাহত! বেশ কয়েকদিন আগেই সমস্ত স্কুল এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের নবম শ্রেণিতে প্রাপ্তনম্বর পর্ষদের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে আপলোড করে দিয়েছিল। এরপর ৬২৩ টি স্কুল আবেদন করে, তারা তাড়াহুড়োয় পাঠানো ভুল নম্বর সংশোধন করতে চায়। সংশোধনের পরও বহু স্কুল ই-মেল এবং টেলিফোনে জানায় তারা নবমের নম্বর কমাতে চাইছে! অনেক স্কুল আবার সরাসরি জানাচ্ছে, তারা বাড়াতে চায় নম্বর। যা নিয়ে জেরবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।
মাধ্যমিকের মূল্যায়নে নবম শ্রেণির কিছু ভুল নম্বর জমা পড়েছিল। ২৪ জুন মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সংশোধিত নম্বর জমা দেওয়ার মেয়াদ বাড়ায়। ২৭ জুন সকাল এগারোটা থেকে ২৮ জুন সকাল এগারোটা পর্যন্ত সংশোধিত নম্বর আগের ওয়েবসাইটে আপলোড করার নির্দেশ জারি হয়। পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “আবেদনের ভিত্তিতে নতুন করে ৬২৩ টি স্কুলকে নম্বর সংশোধনের সময় দেওয়া হয়েছে। তার পরেও বহু স্কুল আবেদন করছে তারা পড়ুয়াদের নম্বর পাঠানোয় ভুল করেছে। বেশকিছু স্কুল বলছে তারা নাকি কম নম্বর পাঠিয়েছে, নম্বর বাড়াতে চায়। ওই স্কুলগুলিকে ফলপ্রকাশের পর নথি-সহ পর্ষদে আসতে বলা হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: ‘সবুজের সেনাপতি, বাংলার যুবরাজ অভিষেক’কে গানে গানে সেলাম TMCP’র]
মাধ্যমিকের (Madhyamik Exam 2021) মূল্যায়নে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নির্দেশ অনুযায়ী গত ২২ জুন থেকে নবম শ্রেণির নম্বর পাঠানোর কাজ শুরু হয়। ২৪ জুনের মধ্যে নম্বর জানানোর নির্দেশ ছিল। চলতি বছরে যাদের মাধ্যমিকে বসার কথা তাদের নবম শ্রেণির তিনটি সামেটিভ পরীক্ষার গড় করে একশোর মধ্যে প্রত্যেকটি বিষয়ে কত নম্বর পেয়েছে তা www.wbbsedata.com ওয়েবসাইটে আপলোড শুরু হয়। বেশকিছু স্কুল থেকে অভিযোগ আসে, ওয়েবসাইটে ‘Eror’ থাকায় নম্বর পাঠাতে সমস্যা হয়েছে। স্কুলগুলিকে পর্ষদের নির্দেশ ছিল, প্রত্যেকটি পড়ুয়ার নাম এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর ভাল করে মিলিয়ে দেখে নিতে হবে। কোনও বেনিয়ম বা গরমিল হয়েছে মনে হলে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। তার পরেও ২৪ ঘণ্টা সংশোধনের সময় দেয় পর্ষদ। এর বাইরেও কিছু স্কুলের দাবি, তাড়াহুড়োয় নবম শ্রেণির ভুল নম্বর চলে গিয়েছে। কেউ তা কমাতে চান। আবার কেউ বাড়াতে চান। এক প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, “নবম শ্রেণির নম্বর বাড়ানোর জন্য আমার উপর অভিভাবকরা চাপ দিচ্ছেন। এই কারণে পর্ষদে নম্বর বাড়ানোর আবেদন করেছি।”
পর্ষদ সভাপতি এই আবেদনে সাড়া দেননি। তিনি বলেন, যদি নবমের সামেটিভ পরীক্ষাগুলোতে মূল্যায়নে কোনও ভুল থাকে তাহলে সেই নথি-সহ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর পর স্ক্রুটিনির আবেদন করতে হবে। প্রধান শিক্ষকদের একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি মাধ্যমিকের মূল্যায়নের আগেই স্ক্রুটিনির দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা রবিবারও কাজ করছি। আমাদের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর নেই। কিছু স্কুল যদি ভুল করে থাকে ছাত্র-ছাত্রীদের কথা ভেবে ফল প্রকাশের আগেই স্ক্রুটিনির সুযোগ দেওয়া উচিত।” কেন এই সমস্যা? প্রধানশিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বার্ষিক পরীক্ষা অনেকদিন হল উঠে গিয়েছে। বছরে এখন তিনটি সামেটিভ পরীক্ষা হয়। নবমে মোট ২০০ নম্বরের সামেটিভ হয়েছিল। পর্ষদের নিয়মে ওই তিনটি পরীক্ষার নম্বর যোগ করে তার গড় নম্বর পাঠানোর কথা। কিছু স্কুল তা না করায় বিপত্তি দেখা দিয়েছে।