বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: ঐশী ঘোষ ও দীপ্সিতা ধর। জেএনইউয়ের (JNU) দুই ছাত্রীকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করেছে সিপিএম। যাঁদের হয়ে প্রচারে আসতে ইচ্ছুক উত্তরপ্রদেশের ‘প্রতিবাদী’ চিকিৎসক কাফিল খান। আসতে পারেন কানহাইয়া কুমার-সহ জেএনইউয়ের কিছু প্রাক্তনীও। জাতীয় রাজনীতিতে যাঁরা ইতিমধ্যে নজর কেড়েছেন। চলতি মাসেই এ রাজ্যে কাফিলের (Kafeel Khan) আসার সম্ভাবনা বলে আলিমুদ্দিন সূত্রের খবর।
গুজরাটের জিগনেশ মেবানি হোন বা বিহারের কানাহাইয়া কুমার (Kanhaiya Kumar)। জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও পড়ুয়া ভোটে দাঁড়ালে তাঁর সমর্থনে সহপাঠীরা ঝাঁপিয়ে পড়বেন, এটাই দস্তুর। জিগনেশ-কানহাইয়ার মতো প্রাক্তনীর হয়ে ভোটযুদ্ধের লড়াই নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সহপাঠীরা। প্রচারপর্ব থেকে শুরু করে পুরো প্রক্রিয়ায় তাঁরা পুরোভাগে ছিলেন। গুজরাট বিধানসভায় জিগনেশের জয় হলেও লোকসভায় বেগুসরাই থেকে পরাজিত হন সিপিআইয়ের কানহাইয়া। এবার বাংলার ভোটেও দেখা যেতে পারে জেএনইউর প্রাক্তনীদের ভিড়। যোগী (Yogi Adityanath) সরকারের রোষে পড়ে কাফিল খান দীর্ঘদিন কারাবন্দি থাকাকালীন জেএনইউয়ের বামপন্থী পড়ুয়ারা তাঁর মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল। ঐশী, দিপ্সিতারা সেই আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলেন। কাফিল মুক্তি পাওয়ার পর তাঁরা ওই চিকিৎসকের সঙ্গে দেখাও করেন। কাফিল এবার ওঁদের হয়ে প্রচারে আসতে চান।
[আরও পড়ুন: উলটপুরাণ! মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত আরোগ্য কামনায় পুজো দিলেন বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা]
পক্ষান্তরে সিপিএম ওঁকে এনে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়ানোর পাশাপাশি সংখ্যালঘু ভোটারদেরও বার্তা দিতে চাইছে। পার্টি মনে করে, শুধুমাত্র সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে উত্তরপ্রদেশ সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন কাফিল। ওঁর ‘প্রতিবাদী ও ‘আপসহীন’ ভাবমূর্তিকে আলিমুদ্দিন বাংলার ভোটে কাজে লাগাতে তৎপর। প্রথমে তাঁকে নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন লালপার্টির কমরেডকুলের নেতারা। কিন্তু সাত-পাঁচ ভেবে জটিলতা এড়াতে বিষয়টি বেশিদূর গড়াতে দেওয়া হয়নি। এরপর রাজ্যের এক সংখ্যালঘু প্রাক্তন আইপিএসকে নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলে তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। এবার কাফিল খান নিজেই প্রচারে আসতে উৎসাহ প্রকাশ করায় সিপিএম নড়েচড়ে বসেছে। শুধু কাফিল বা কানহাইয়া কুমার নন, গুজরাতের জিগনেশ মেবানি-সহ জেএনইউয়ের বর্তমান ও প্রাক্তনীদেরও প্রচারের কাজে নামাতে তৎপর আলিমুদ্দিন। নিজের প্রতিষ্ঠানের দুই পড়ুয়ার লড়াইয়ে তাঁরা কাঁধে কাঁধ মেলাতে পিছপা হবে না বলেই ধারণা লালপার্টির নেতৃত্বের।
[আরও পড়ুন: দীর্ঘ পথ পেরিয়ে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়াই কাল! মর্মান্তিক পরিণতি যুবকের]
সাম্প্রতিক অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি বা হোস্টেল ছাড়াও সিএএ বা এনআরসি ইস্যুতে বারেবারে উত্তাল হয়েছে জেএনইউ। সেই সময় গোটা দেশের নজরে আসেন এই ছাত্রনেতারা। তাই জামুড়িয়া ও বালি ছাড়াও শহরাঞ্চলের অন্যত্র তাঁদের প্রচারে নামানোর চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে পার্টির অন্দরে। আলিমুদ্দিনের ভোট ম্যানেজাররা মনে করেন, এটা করা গেলে যুবমানসে প্রভাব ফেলা যাবে। বস্তুত জেএনইউয়ের পড়ুয়াদের ঐক্য গোটা দেশের কাছে নজিরবিহীন। যেহেতু সহপাঠীরা ভোটযুদ্ধের ময়দানে, তাই জেএনইউর প্রাক্তনীরা তাঁদের সমর্থনে ময়দানে নামতেই পারেন বলে জানিয়েছেন পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়। পার্টি নেতৃত্বের তরফে ঐশী (Aishe Ghosh), দীপ্সিতা দু’জনকেই বলা হয়েছে, প্রচারের ব্যাপারে জিগনেশ, কানহাইয়াদের সঙ্গে কথা বলার জন্য।