স্টাফ রিপোর্টার: এলাকায় লোক পাওয়া যাচ্ছে না। নিচুতলায় নেতা-কর্মীদের অভাব। আর তাই পঞ্চায়েত ভোটের আগে সংকটে পড়ে বুথ কমিটি গড়তে মিসড কল দেওয়ার আবেদন জানানো হল গেরুয়া শিবিরে।
আজব সিদ্ধান্ত! মিসড কলে নাকি বুথ কমিটি তৈরি হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে এমনই বার্তা দিয়েছেন বঙ্গ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী। অমিতাভ তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘বুথ গঠন করবই, সোনার পশ্চিমবঙ্গ গড়বই।’ তার জন্য কোন নম্বরে ফোন করতে হবে সেটারও উল্লেখ করেছেন তিনি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শীর্ষনেতার এই পোস্ট ঘিরে দলের মধ্যেই আলোড়ন শুরু হয়েছে। রাজ্য বিজেপি নেতাদের একাংশ বলছেন, ‘‘এভাবে দল চলে নাকি? বুথের সঙ্গে তো কোনও যোগাযোগই নেই নেতাদের। লোক খুঁজতে মিসড কলের আবেদন।’’ মিসড কল দিয়ে বুথ তৈরির চেষ্টা হাস্যস্পদ বলেই মনে করছে গেরুয়া শিবিরের একাংশ। এই ধরনের সাংগঠনিক ব্যর্থতা এর আগে কোনওদিন দেখা যায়নি বলে রাজ্য নেতাদের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে দলের ওই অংশ।
[আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে বিশেষ আমন্ত্রণ, কেমব্রিজে ভাষণ দিতে যাচ্ছেন রাহুল গান্ধী]
বিজেপির এই আবেদনকে হাস্যকর বলে কটাক্ষ করেছে তৃণমূলও। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) বলেন, “এ থেকেই প্রমাণ হয়ে যায় যে, পুরো হাস্যকর দেউলিয়া সার্কাস পার্টি চলছে। সরকার বা প্রশাসন ফোনের মাধ্যমে মানুষের বক্তব্য জানতে পারে। কিন্তু দল কমিটি গড়ার ক্ষেত্রে ফোন করতে বলে, এটা একটা ব্যর্থতার বিশ্বরেকর্ড। গোটা বিজেপির দল-নেতারা অপদার্থ। অপদার্থতার উৎসব চলছে বিজেপিতে।’’
রাজ্য নেতাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বারে বারে বলে আসছেন, শক্তিশালী বুথ কমিটি ছাড়া লড়াই সম্ভব নয়। কিন্তু রাজ্যের প্রায় ৮০ হাজার বুথের অর্ধেকেরও বেশি বুথে সংগঠন বলে কিছু নেই। দলের একাংশের অভিযোগ, নিচুতলার সংগঠনের বেহাল দশা। অথচ সংগঠনকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয় কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। ফলে খাতায় কলমে সংগঠনকে মজবুত মনে হলেও ভোটের বাক্সে তার প্রতিফলন দেখা যায় না। জেলায়-জেলায়, ব্লকে বা বুথে, কীভাবে দল চলছে তা সঠিকভাবে জানে না রাজ্য নেতৃত্বও। ফলে রাজ্য বিজেপির বর্তমান ক্ষমতাসীন অদক্ষতা ও অনভিজ্ঞতাও সামনে এসে গিয়েছে বলে অভিযোগ দলের একাংশের। আর এই পরিস্থিতিতে বুথ গড়তে মিসড কলের যে আবেদন অমিতাভ চক্রবর্তী (Amitabha Chakraborty) করেছেন তা নিয়ে দলে জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে। অনেকের প্রশ্ন, মিসড কল দিয়ে সদস্য করা ঠিক আছে। কিন্তু বুথ তৈরি করার কাজও ভারচুয়ালি? রাজ্য বিজেপির সংগঠন সম্পাদকের সোশ্যাল মিডিয়ায় করা এই পোস্টের পর তাতে একাধিক কমেন্ট করেছেন গেরুয়া কর্মী-সমর্থকদের একাংশ। প্রায় সকলেই সেখানে অমিতাভ—সহ রাজ্য বিজেপির সংগঠন ও নেতৃত্বকে তুলধোনা করেছেন। এক সমর্থক বলেছেন, নিচুস্তরে আন্দোলন না করলে বুথমুখী হবে না কেউ। পুরনো কর্মীদের ফিরিয়ে আনতে হবে। সঠিক লোকেদের দায়িত্ব দিতে হবে। বেশিরভাগ মণ্ডল কমিটি যে ভুয়ো, তাও কমেন্টে লিখেছেন ওই সমর্থক।
[আরও পড়ুন: ড্রোনের কামাল, মাত্র আধ ঘণ্টায় ৪০ কিমি পাড়ি দিয়ে দুর্গম এলাকায় পৌঁছল জীবনদায়ী ওষুধ]
এক গেরুয়া সমর্থক মন্তব্য করেছেন, যেদিন বুথ কর্মীদের যোগ্য সম্মান দেওয়া হবে, সেদিনই সব সম্ভব। একজন আবার মন্তব্য করেছেন, ৮০ শতাংশ বিজেপি কর্মী বসে গিয়েছেন। তাঁদের সংগঠনে নিয়ে আসতে হবে। এক সমর্থক বলেছেন, সব বুথে প্রার্থী আর পোলিং এজেন্ট দিতে পারবেন তো। বিধানসভার থেকেও আরও ফল খারাপ হবে। এরকম একাধিক কমেন্টে বঙ্গ বিজেপির সংগঠনের কঙ্কালসার চেহারাটাই প্রকাশ্যে এসেছে। এ প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যর (Shamik Bhattacharya) বক্তব্য, ‘‘আমাদের দল আমাদের মতো করে সাজাব। তাতে কারও গায়ে লাগলে লাগবে। কে কী বলল তাতে কিছু যায় আসে না।’’