স্টাফ রিপোর্টার: এপ্রিলেই শেষ হবে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। রাজ্য সফরে এসে প্রশাসনিক কর্তাদের এই ইঙ্গিত দিলেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন (Sudeep Jain)। সেইমতো এখন থেকেই নির্বাচন সংগঠিত করতে প্রশাসনিক কর্তাদের কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি মনে করিয়ে দিয়েছেন, কোনওরকম বিশৃঙ্খলা ও গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। এ রাজ্যে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে সব রকম সম্ভাব্য পদক্ষেপ করবে কমিশন (Election Commission)। চলতি মাসের শেষের দিকেই রাজ্যে আসবে কমিশনের ফুল বেঞ্চ।
বুধবার শহরের একটি পাঁচতারা হোটেলে প্রথমে সমস্ত জেলার পুলিশ সুপার ও কমিশনারেট কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার। পরবর্তীতে তিনি জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। মে মাসে সিবিএসই বোর্ডের পরীক্ষা ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। সে কথা জানিয়ে প্রশাসনিক কর্তাদের ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ-সহ কেরল, অসম, তামিলনাড়ু ও পুদুচেরির নির্বাচন প্রক্রিয়া এপ্রিলের শেষ সপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ণ করতে চায় কমিশন। এ প্রসঙ্গেই রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পুলিশ সুপারদের যত শীঘ্র সম্ভব জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানাগুলি কার্যকর করার নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রতি সপ্তাহে প্রশাসনিক কর্তাদের কমিশনে রিপোর্ট দিতে বলেছেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার। কলকাতার পুলিশ সুপার অনুজ শর্মা (Anuj Sharma) ও অন্তত দু’টি জেলার পুলিশ সুপারকে উদ্দেশ করে সুদীপ জৈনের বার্তা, এলাকা শান্তিপূর্ণ রাখা আপনাদের দায়িত্ব। তা কীভাবে রাখবেন আপনারাই ঠিক করবেন। কোনওরকম বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না। যত শীঘ্র সম্ভব অভিযোগ শূন্যতে নামিয়ে আনুন। কর্তব্যে গাফিলতি হচ্ছে মনে হলে শোকজ না করেই সরাসরি অপসারণের পথে হাঁটবে কমিশন।
[আরও পড়ুন: বারাকপুর কমিশনারেটের যুগ্ম পুলিশ কমিশনারকে বদলি করল নবান্ন]
রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (CEO) অফিসের এক কর্তার কথায়, “গতবারের মতো এবারও যদি রাজ্যে সাত দফায় নির্বাচন হয়, সেক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাবে। তাই এখন থেকেই সম্ভাব্য সব রকম প্রস্তুতি শুরু করে দিতে বলা হয়েছে। অপরাধের সংখ্যা শূন্যতে নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে। প্রশাসনের তরফে কোনওরকম ভুল যেন না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি দিতে বলা হয়েছে।” আপাতত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই রাজ্যের স্পর্শকাতর এলাকা চিহ্নিত করতে শুরু করেছে কমিশন। সেই কাজ শেষ হলেই এবার রাজ্যে কত সংখ্যক বাহিনীর প্রয়োজন তা নিশ্চিত করবে কমিশন। সিইও অফিসের ওই আধিকারিকের কথায়, “স্বাভাবিকভাবেই বিগত নির্বাচনগুলোর থেকে এবারের নির্বাচনে সর্বোচ্চসংখ্যক বাহিনী নিয়োগ হবে। কমিশন এবার এমন একটি বাতাবরণ তৈরি করতে চাইছে যাতে নির্ভয়ে সকলে ভোট দিতে পারেন। স্পর্শকাতর এলাকা চিহ্নিতকরণের কাজ শেষ হলেই বাহিনীর সংখ্যাও নির্ধারিত হয়ে যাবে।”
পাশাপাশি রাজ্যের কোভিড (COVID-19) পরিস্থিতি নিয়ে কমিশন যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। সে কারণে আপাতত বিহার মডেলকে ধরেই প্রশাসনিক কর্তাদের প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার। এবার রাজ্যে অন্তত ২৫ শতাংশ বুথ বাড়তে চলেছে। সংখ্যার নিরিখে যা ২৮ হাজারের কাছাকাছি দাঁড়াবে। এটা কমিশন ও রাজ্য প্রশাসনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। সে কথা মাথায় রেখেই অতিরিক্ত ভোট কর্মী ব্যবস্থা করতেও এদিন জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন সুদীপ জৈন। এছাড়াও বুথগুলিতে যাতে শারীরিক দূরত্ববিধি রাখা যায় এখন থেকেই তার ব্যবস্থা করে রাখতে বলা হয়েছে।
সুদীপ জৈনের সঙ্গে এসেছেন কমিশন সচিব রাকেশ কুমার। আজ বৃহস্পতিবারও ঠাসা কর্মসূচি রয়েছে তাঁদের। সকাল থেকে রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, স্বাস্থ্যসচিবের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। তারপর আয়কর ও শুল্ক বিভাগের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন সুদীপ জৈন। সেই বৈঠকে রাজ্যের ইবি’র কর্তারও থাকার কথা। এরপর বিকেলেই দিল্লি ফিরে যাবেন ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার।
[আরও পড়ুন: জনসভাস্থল ও যাতায়াতের পথে পুলিশি নিরাপত্তার দাবি, কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ শুভেন্দু]
এদিকে বিজেপি রাজ্যসভার সংসদ স্বপন দাশগুপ্ত অভিযোগ করেছেন, রাজ্যে নতুন ভোটারের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে ৯.৬ শতাংশ বেড়েছে। দেশের কোথাও এমনটা হয়নি। ঘটনাক্রমে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যের ছয়টি জেলা মালদহে ১৪.৬, মুর্শিদাবাদে ১৪ এবং দুই দিনাজপুর জলপাইগুড়ি ও দুই ২৪ পরগনায় উল্লেখযোগ্য হারে নতুন ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা অস্বাভাবিক। বিজেপি ভোটার তালিকা স্ক্রুটিনির দাবি জানাবে।