নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: আগামী সপ্তাহেই কি শপথ নিতে চলেছেন বাংলার নবনিযুক্ত রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ফোনালাপের পর উঠছে সেই প্রশ্ন। সূত্রের খবর, শপথ নেওয়ার দিন হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে ২১ অথবা ২৩ নভেম্বর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ব্যক্তিগত সূত্রের খবর, সম্ভবত দু’দিনের মধ্যে কোনওদিন শপথ নিচ্ছে না নবনিযুক্ত রাজ্যপাল। আগামী ২৩ নভেম্বরের পরই শপথ নিতে পারেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বাংলার নতুন রাজ্যপাল হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়। পরের দিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ফোন পেয়ে আপ্লুত রাজ্যপাল। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমার সঙ্গে খুবই ভালভাবে এবং ডিগনিফায়েডভাবে কথা বলেছেন। আমাদের দু’জনের মধ্যে অনেক কথা হয়েছে। যেটা আমি প্রকাশ করতে পারব না। আমি খুবই খুশি যে তিনি এই ফোন করার উদ্যোগটা নিয়েছেন। আমাদের দু’জনের মধ্যে খুবই সুমধুর কথাবার্তা হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ ইস্যুর নিয়মে বড়সড় রদবদল, কী নির্দেশিকা মুখ্যসচিবের?]
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্টে কলকাতাকে দেশের সবচেয়ে নিরাপদ শহর বলা হয়েছে। কেন্দ্রের একাধিক কাজ সম্পাদনে বাংলা একাধিক পুরস্কার পেয়েছে। সেই বাংলার রাজ্যপাল হিসাবে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত বলে জানিয়েছেন সি ভি আনন্দ বোস (C V Ananda Bose)। এদিন তিনি বলেন, “কলকাতাকে আমি সিটি উইথ দ্য সোল বলেই মনে করি, যা তাকে সকলের থেকে আলাদা করেছে। আমি কলকাতায় দু’বছর ছিলাম। আমি বাংলার মানুষের পালস জানি। আমি বাংলার মানুষের অ্যাডমায়ারার। গৌরবময় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বাংলায় যাওয়া এবং তাকে আরও বেশি করে জানার বড় সুযোগ এসেছে আমার কাছে। আমার নামের মধ্যেই বাংলা রয়েছে। আমার নামটাই তো বাঙালিদের নাম।”
তাঁর পূর্বসূরি বর্তমান উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়ের (Jagdeep Dhankhar) সঙ্গে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের একপ্রকার সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, টুইট যুদ্ধ থেকে শুরু করে যা গড়িয়েছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ পর্যন্ত। সরাসরি কোবিন্দের কাছে ধনকড়কে রাজ্যপাল পদ থেকে সরানোর আবেদন করেছিলেন তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। একই দাবিতে সংসদেও সরব হয়েছিল তৃণমূল। সেবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিষয়টিকে ‘সংঘাত’ বলে মানতে চাননি বোস।
তাঁর কথায়, “সংঘাতের যে কথা উঠছে, সেটা আসলে মতানৈক্য। গণতন্ত্রে মতানৈক্য হতেই পারে, তাকে সংঘাত বলা চলে না।” সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিপুল জনসমর্থনে নির্বাচিত হয়ে আসা একজন মুখ্যমন্ত্রীকে যেভাবে সম্মান দিয়ে কাজ করা উচিত তিনি সেইভাবেই কাজ করবেন। আর বাংলায় সাংবিধানিক প্রধানের পদটি পেয়ে আনন্দ বোসের মন্তব্য, বাংলার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক পুরনো। বাংলার মানুষের পালস তিনি বোঝেন। পছন্দ বাংলার রসগোল্লাও।
কেরলের ব্রাহ্মণ পরিবারের সদস্য আসল পদবি নায়ার হলেও ব্যবহার করেন বোস পদবি। তা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের অনুসরণেই বলে জানিয়েছেন নতুন রাজ্যপাল। তিনি বলেছেন, “আমার সঙ্গে বাংলার নাড়ির যোগ রয়েছে বলতে পারেন। আমার বাবা স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বড় ভক্তও ছিলেন। তিনি আমাদের আট ভাইবোনের নাম বোস দিয়েই রেখেছেন। তাছাড়া আমার কর্মজীবন স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার প্রবেশনারি অফিসার হিসাবে কলকাতা থেকে শুরু হয়েছিল। চৌরঙ্গী, শ্যামবাজার, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, দু’বছর আমি সেখানে ছিলাম। আরেকটা বিষয়ও বলতে চাই, আমি কলকাতার রসগোল্লার স্বাদ ভুলিনি। আমি বাংলার রসগোল্লার গ্রেট ফ্যান বলতে পারেন।”