দেবব্রত মণ্ডল, ডায়মন্ডহারবার: পরিবারে নিত্য অভাব ঘরে। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। কিন্তু তাতে কী! অদম্য ইচ্ছা আর কঠোর সাধনাতেই শেষপর্যন্ত সিদ্ধিলাভ। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় সাফল্য লেখা হল সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার কিশোরী সুমনার জীবনখাতায়। এবার মাধ্যমিকে অভাবনীয় ফলাফল করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে অত্যন্ত মেধাবী, সরল সাদাসিধে এই পড়ুয়া।
সুমনার বাবা মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুরের শীতলা রোডের বাসিন্দা সুভাষ হালদার পেশায় একজন শ্রমিক। জীবিকা বলতে এক দোকানদারের কাছে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বাতাসা তৈরি করেন তিনি। তা থেকে সামান্য যতটুকু রোজগার তা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া তো দূরের কথা, সকলের খাওয়া-পরা জোগাড়েই হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। সুমনার মা গৃহবধূ। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। প্রতিদিনের অভাবকে সঙ্গী করে স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বর্তমানে চারজনের সংসার চলে তাঁর কোনওমতেই।
সুমনা ছোট থেকেই যথেষ্ট পরিশ্রমী, নিষ্ঠাবান ও শৃঙ্খলাপরায়ণ। তার জেদের কাছে হার মেনেছে অভাব। এবার মাধ্যমিকে ৯০% নম্বর পেয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে বছর পনেরোর কিশোরী। স্থানীয় কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের ছাত্রী সুমনা মাধ্যমিকে ৬৪৭ নম্বর পেয়ে স্কুলে প্রথম হয়েছে। সুমনা বাংলায় পেয়েছে ৯১, ইংরেজিতে ৮৫, অঙ্কে ৮৭, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৭, জীবনবিজ্ঞানে ৯৮, ইতিহাসে ৯০ ও ভূগোলে ৯৯।
কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুল থেকেই উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায় সুমনা। সে জানায়, ‘‘মাধ্যমিকে আরও কিছু বেশি নম্বর আশা করেছিলাম। দিনে সাত-আট ঘণ্টা পড়াশোনা করতাম। পড়ার ফাঁকে সময় পেলেই বসে যেতাম শরৎচন্দ্রের উপন্যাস নিয়ে। কোচিংয়ের শিক্ষকরা ছাড়াও স্কুলের শিক্ষকরা আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন।’’
মেয়ের সাফল্যে স্বাভাবিকভাবেই খুশি মা-বাবা। লুকোতে পারেননি চোখের জল। সুমনার বাবা জানালেন, মেয়ের সাফল্য ও ভবিষ্যতে ওর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন একদিকে যেমন গর্বিত করছে তেমনই এক অজানা আশঙ্কাও যেন গিলে খাচ্ছে তাঁদের। মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করতে প্রবল অর্থসমস্যা বাধা হয়ে দাঁড়াবে না তো, ওর স্বপ্ন পূরণ হবে তো!
কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘পড়াশোনার ক্ষেত্রে স্কুলের শিক্ষকরা সুমনাকে যেভাবে সাহায্য করে এসেছেন, ভবিষ্যতেও তেমনই সাহায্য করবেন।’’ স্কুলের সেরা ছাত্রীটির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেন তিনি। তবে সুমনার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে কোনও সহৃদয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর আবেদনও জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।