সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এতদিন পর্যন্ত তৃণমূলের উর্বর ভূমি হিসেবেই পরিচিত ছিল হাওড়া। ২০১৬ সালে এই জেলায় কার্যত ‘ক্লিন সুইপ’ করে তৃণমূল। ফলাফল ভাল হয় লোকসভা নির্বাচনেও। কিন্তু একুশের বিধানসভার আগে একসময়ের উর্বর এই ভূমিতেই যেন শনির নজরে পড়তে হয় তৃণমূলকে (TMC)। দলে লাগাতার ভাঙন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং সবশেষে প্রার্থী অসন্তোষ। যা কিনা শাসক শিবিরকে খানিকটা মুষড়ে দিয়েছিল। মমতা পথে নামতেই সেই ছবি পুরোপুরি পালটে গেল। তৃণমূল নেত্রী হাওড়ার রাস্তায় কার্যত জনজোয়ারে ভাসলেন। শনিবার হাওড়ায় ইছাপুর জলট্যাংক মোড় থেকে সালকিয়া সম্মিলনী পার্ক পর্যন্ত রোড শো করেন মমতা। তাঁর রোড শো হাওড়ার শহরকেন্দ্রিক তিনটি বিধানসভাকে ছুঁয়ে যায়।
হিসেব বলছে, হাওড়ার শহরকেন্দ্রিক ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৩ কেন্দ্রের বিধায়ক ঠিক ভোটের আগে আগে দল ছেড়েছেন। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় নাম অবশ্যই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerjee)। এছাড়াও বৈশালী ডালমিয়া, লক্ষ্মীরতন শুক্লারাও দল ছেড়েছেন। বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তীও। বিজেপি দাবি করছিল, রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তের মতো হাওড়াতেও এবার পরিবর্তনের সুর শোনা যাচ্ছে। কিন্তু তৃণমূল নেত্রীর রোড শোতে এদিন যে ছবি দেখা গেল, যেভাবে রাস্তার দু’ধারে মানুষ মমতাকে উষ্ণ অভ্যর্থনায় ভরিয়ে দিলেন, তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট, বিধানসভার খেলা অত সোজা নয়। মমতার (Mamata Banerjee) রোড শো এদিনে যে যে এলাকা দিয়ে গিয়েছে, কার্যত সব জায়গাতেই মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। আবালবৃদ্ধবনিতা এদিন মমতাকে দেখতে রাস্তায় নেমেছিল। অনেককেই দেখা যায় রোড শোর মধ্যে ছুটে এসে মমতার পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে। আবার কেউ হয়তো ‘দিদি’কে স্নেহের স্পর্শে ছুঁয়ে দেখার আর্তি নিয়ে ছুটে যান তাঁর কাছে। মাঝে মাঝে সাধারণ মানুষের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে বেগ পেতে হচ্ছিল নিরাপত্তারক্ষীদেরও। তবে, সাময়িক একটা বিপর্যয়ও সৃষ্টি হয়েছিল রোড শোর মাঝে একটি ষাঁড় ঢুকে পড়ায়। যদিও কিছুক্ষণের মধ্যেই নিরাপত্তারক্ষীরা পরিস্থিতি সামাল দেন। তবে তার আগে যথেষ্ট দাপদাপি করেছেন ষণ্ডরাজ।
[আরও পড়ুন: ‘যোগী আদিত্যনাথের কাছে হিন্দুত্ব শিখব না’, বিজেপির তারকা প্রচারককে জোরাল কটাক্ষ অভিষেকের]
হাওড়ার তিন কেন্দ্রের উপর মমতার এই মেগা শো নিঃসন্দেহে এলাকার তৃণমূল কর্মীদের জন্য অক্সিজেনের কাজ করবে। একের পর এক দলত্যাগে শাসকদলের অন্দরে যে সামান্যতম সংশয় তৈরি হয়েছিল, এই রোড শোর পর সে সংশয়ও কেটে গিয়েছে বলে দাবি তৃণমূলের। যদিও, রোড শো শেষে সময়ের অভাবে বক্তব্য রাখতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সংক্ষিপ্ত বার্তা, “যেভাবে আপনারা আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন, মা-বোনেরা যেভাবে আমাদের পাশে থেকেছেন, সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ। আগামী দিনে নিশ্চিন্তে ভোট দিন, এবং তৃণমূলের সরকার গড়ুন।”