ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: করোনার (Coronavirus) টিকা চাই। অ্যাপে নাম আছে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা নেই। নিত্যদিনের এই সমস্যা আরও ঘোরালো। রাজ্যের ভ্যাকসিনের ভাঁড়ার তলানিতে। অন্তত এমনটাই বলছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজ্যের ২৭টি স্বাস্থ্য জেলার ভাঁড়ার মিলিয়ে মোট করোনার টিকা মেরেকেটে ৬ লক্ষ। আর উত্তর কলকাতায় দপ্তরের নিজস্ব সেন্ট্রাল স্টোরে মাত্র ৬ হাজার ডোজ! এর মধ্যে কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিন দু’টিই রয়েছে। এই অবস্থায় মাথায় হাত স্বাস্থ্যকর্তাদের। কীভাবে আগামী কয়েকদিন রাজ্যে করোনার টিকা কর্মসূচি চলবে তা নিয়ে আলোচনা করেও কোনও সুরাহা হয়নি। কারণ, কেন্দ্র থেকে চাহিদা অনুযায়ী ভ্যাকসিন আসছে না বলে অভিযোগ স্বাস্থ্যকর্তাদের।
দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্য প্রাপ্য করোনার টিকা পাচ্ছে না এই অভিযোগ প্রশাসনের। এর মধ্যেই মঙ্গলবার সব জেলা স্বাস্থ্যকর্তার সঙ্গে আলোচনায় এমন তথ্য সামনে এসেছে। উল্লেখ্য, ২১ জুন থেকে সব রাজ্যকে নিখরচায় ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করে কেন্দ্র। রাজ্য প্রশাসনের পর্যবেক্ষণ, আগে তবু কিছু বেশি আসছিল। কিন্তু ক্রমশ ভ্যাকসিন কম আসছে। উলটোদিকে চাহিদা আকাশছোঁয়া। প্রায় ফি দিন বিভিন্ন জেলায় টিকা পেতে লম্বা লাইন। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অজয় চক্রবর্তীর কথায়, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় যা ভ্যাকসিন আছে তাতে এখনই যথেষ্ট ভ্যাকসিন দরকার। বস্তুত, বাগবাজার সেন্ট্রাল স্টোর থেকে কলকাতা পুরসভা-সহ সব মেডিক্যাল কলেজ, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং জেলার ভ্যাকসিন (Vaccine) সেন্টারে টিকা পাঠানো হয়। তবে রাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানায় বুধবার বিকেলে সাড়ে চার লাখ ডোজ কোভিশিল্ড আসার কথা। তবে এই ভ্যাকসিন দিয়ে কতজনকে টিকার আওতায় আনা যাবে তা স্পষ্ট নয়।
[আরও পড়ুন: জৈন হাওয়ালা মামলা: অভিযুক্তের তালিকায় ‘ধনকড়’, নথি দেখিয়ে রাজ্যপালের উপর চাপ বাড়াল TMC]
এদিকে, টিকার চাহিদা যত বাড়ছে ততই দ্বিতীয় ডোজ প্রাপকের সংখ্যাও ঊর্ধ্বমুখী। এই দুই সমস্যার জট খুলতে নতুন পন্থা স্বাস্থ্য দপ্তরের (West Bengal Health Department)। জুলাই থেকে দ্বিতীয় ডোজ প্রাপকের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। মঙ্গলবার রাজ্য স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের নির্দেশে বলা হয়েছে, এবার থেকে রাজ্যের সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যে টিকা দেওয়া হবে তার ৫০ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজ প্রাপকদের দিতে হবে। রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, জেলা ও ব্লক স্বাস্থ্যকর্তাদের নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। এখন প্রশ্ন কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর? বিভিন্ন জেলা ও কলকাতা থেকে স্বাস্থ্যভবন যে তথ্য পেয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ১ এপ্রিল-৭ মে পর্যন্ত যাঁরা প্রথম টিকা তাঁদের দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে। এই সংখ্যাটা প্রায় ৩৭ লক্ষ ৯৩ হাজার ৬৪০। স্বাস্থ্য ও পুরকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় ঠিক হয়েছে, আগামী দু’দিন শুধুমাত্র দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য ভবনের প্রাথমিক হিসাব রাজ্যে কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিন-সহ মোট ৮ লক্ষ ৪৩ হাজার ৮৪৭ জন দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারেননি। এই অবস্থায় তাঁদের দ্রুত দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার জন্য এখন থেকে প্রতি বুথে যত জনকে টিকা দেওয়া হবে, তার অর্ধেক দ্বিতীয় ডোজ প্রাপক।