সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (CAA) প্রতিবাদ করে ব্যাপক পুলিশি অত্যাচারের মুখে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। রাতে তাদের বিক্ষোভ দমনে ক্যাম্পাসে ঢুকে পুলিশের লাঠিচার্জ এবং তাতে আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন। অভিযোগ, শৌচালয়ে ঢুকেও পুলিশ মারধর করেছে। সেই পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়েই সংবাদমাধ্যমের সামনে কেঁদে ফেললেন আইনের এক ছাত্রী।সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে তিনি প্রশ্ন তুলছেন, ”সংবিধান, গণতন্ত্র – এসবের আর কী শিখব? কিছু বাকি রেখেছে ওরা? এটাই কি গণতন্ত্র?”
রবিবার রাতে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঢুকে পুলিশ যেভাবে আন্দোলনকারীদের উপর লাঠিচার্জ করেছে, তার তীব্র নিন্দায় সরব রাজনৈতিক ও শিক্ষামহলের একটা বড় অংশ। এমনকী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও পুলিশের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে ইতিমধ্যে। পালটা দিল্লি পুলিশ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষাও বাতিল হয়েছে। এক ছাত্রী সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন। কান্নাভেজা গলায় বললেন, ”ভেবেছিলাম, পড়ুয়াদের জন্য দিল্লি খুব সুরক্ষিত জায়গা। এটা একটা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সুতরাং, সবই খুব নিরাপদ বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু আমাদের সারারাত কাঁদতে হয়েছে। এ কী ঘটে গেল!”
[আরও পড়ুন: পিঁয়াজ চাষ করেই জ্যাকপট! রাতারাতি কোটিপতি বেঙ্গালুরুর কৃষক]
তাঁরই মতো আরও অনেকেই হস্টেল ছাড়ছেন আতঙ্কে। এ এনিয়েই আইনের এই ছাত্রীটি বলেন, ”মনে হচ্ছে, গোটা দেশে কোথাও কোনও নিরাপত্তা নেই। জানি না, কোথাও গিয়ে হয়ত গণপিটুনির শিকার হব। কাল হয়ত আমার বন্ধুরাই আর ‘ভারতীয়’ থাকবে না।” তিনি এও বলেন, ”আমি মুসলিম নই। কিন্তু আন্দোলনের প্রথম দিন থেকে সামনের সারিতেই আছি। কেন আছি? আমাদের শিক্ষা শিখিয়েছে যে অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদ করতে, ন্যায়ের সঙ্গে থাকতে।”
আরেকজন ছাত্রীর কথায়, ”যখন এসব সমস্যা শুরু হয়, তখন আমরা লাইব্রেরিতে ছিলাম। হস্টেলের সুপারভাইজার ডেকে পাঠিয়ে জানালেন যে ক্যাম্পাসে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। বেরোতে গিয়েই দেখি, হুড়মুড়িয়ে সবাই লাইব্রেরিতে ঢুকছে আত্মরক্ষার জন্য। পিছনে পুলিশ, লাঠি হাতে। কোনওক্রমে বেরিয়ে হস্টেলের দিকে যেতে গিয়ে দেখি, রক্তের উপর শুয়ে কয়েকজন ছাত্র। দেখে শিউরে উঠলাম! আমরা অনেকে পুলিশের লাঠি থেকে বাঁচতে ঝোপে আশ্রয় নিয়েছিলাম।” রাতভর সেভাবেই আটকে ছিলেন এঁরা, ভোরে ছাড়া পেয়ে হস্টেলে ফেরেন। কিন্তু সেখানে আর থাকবেন কি না, তাও ভাবতে হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: দেশজুড়ে বিক্ষোভের মধ্যেই CAA ইস্যুতে ফের মুখ খুললেন মোদি]
যদিও জামিয়ার এই পরিস্থিতিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের মদত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র। পালটা বিরোধীদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে ঢুকে পুলিশের লাঠিচার্জ পুরোপুরি কেন্দ্রের অঙ্গুলিহেলনেই হয়েছে। তবে তাতে বিক্ষোভের আঁচ কমছে না। আজ সকাল থেকেও জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে পড়ুয়াদের একাংশ। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল পড়ুয়ারাও।
The post ‘সংবিধান আর কী শিখব?’, পুলিশের অত্যাচারে কান্নাভেজা গলায় আক্ষেপ জামিয়ার ছাত্রীর appeared first on Sangbad Pratidin.